Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বিমানের চাকার ফাঁকে ৫ ঘণ্টা, বেঁচে ফিরল কিশোর

উচ্চতা ৩৮,০০০ ফুট। তাপমাত্রা শূন্যের থেকে ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে। নেই অক্সিজেনও। এ অবস্থাতেই বিমানের চাকার ফাঁকে (হুইলস ওয়েল-এ) সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা কাটিয়ে বেঁচে ফিরল বছর ষোলোর অজ্ঞাতপরিচয় কিশোর! বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটির পর বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। বাড়ি থেকে পালিয়ে সোজা সান হোসে বিমানবন্দর। নিরাপত্তার ঘেরাটোপ পেরিয়ে একেবারে রানওয়েতে।

চাকার উপরের এই অংশকেই বলে হুইলস ওয়েল।

চাকার উপরের এই অংশকেই বলে হুইলস ওয়েল।

সংবাদ সংস্থা
হনুলুলু শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

উচ্চতা ৩৮,০০০ ফুট।

তাপমাত্রা শূন্যের থেকে ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে।

নেই অক্সিজেনও।

এ অবস্থাতেই বিমানের চাকার ফাঁকে (হুইলস ওয়েল-এ) সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা কাটিয়ে বেঁচে ফিরল বছর ষোলোর অজ্ঞাতপরিচয় কিশোর!

বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটির পর বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। বাড়ি থেকে পালিয়ে সোজা সান হোসে বিমানবন্দর। নিরাপত্তার ঘেরাটোপ পেরিয়ে একেবারে রানওয়েতে। এবং শেষমেশ হাওয়াইয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানের চাকার ফাঁক গলে পিছনের হুইলস ওয়েলে।

ঘটনাটা জানাজানি হল প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর। বিমান তখন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে মাউই বিমানবন্দরে নেমেছে। ঘণ্টাখানেক পরে হঠাৎই নিরাপত্তারক্ষীরা দেখেন, একটি ছেলে চাকার পিছন থেকে ঝাঁপ দিয়ে নেমে উদ্দেশ্যহীন ভাবে পায়চারি করছে। চোখেমুখে দিশাহারা ভাব। হাতে কোনও জিনিস কিংবা পরিচয়পত্র নেই। প্রাথমিক ভাবে জঙ্গি সন্দেহে হইচই পড়ে যায় বিমানবন্দরে। ছুটে আসেন রক্ষীরা। কিন্তু তল্লাশির পর দেখা যায়, একটা চিরুনি ছাড়া সম্বল বলতে আর কিছুই নেই।

আর তার পরই প্রকাশ্যে আসে আসল ঘটনা।

এফবিআই-এর মুখপাত্র টম সিমন জানালেন, গত কাল রাতে জেরা করা হয়েছে ছেলেটিকে। জানা যায় রবিবার বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে ঘর ছেড়েছিল সে। তার পর হাওয়াইয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানে উঠে পড়ে। কিন্তু গোটা যাত্রাপথের কিছুই মনে নেই ছেলেটির। সিমন জানান, অধিকাংশ পথটাই অচেতন অবস্থায় ছিল সে। বিমান মাউই-এ নামার পরও এক ঘণ্টা মতো কোনও জ্ঞান ছিল না তার।

কিন্তু মাউন্ট এভারেস্টের থেকেও বেশি উচ্চতায় মাইনাস ৬২ ডিগ্রিতে অক্সিজেন ছাড়াই সে বাঁচল কী ভাবে?

‘অবিশ্বাস্য’, ‘মিরাকল’। এ ছাড়া আর কোনও উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ। বাদবাকি যে যা বলছেন, তার আগে বসছে ‘হয়তো’ শব্দটি। এমনই এক দল চিকিৎসক জানান, তাঁদের অনুমান ‘হাইবারনেশন’-এ চলে গিয়েছিল ছেলেটি। এতে শরীরে বিপাক ক্রিয়া ঘটে না বললেই চলে। শ্বাসপ্রশ্বাস চলে খুব ধীরে। নাড়ির গতিও সামান্য। দেহের তাপমাত্রাও খুব কমে যায়। বিপাক ক্রিয়া যেহেতু একেবারে কমে যায়, তাই অল্প শক্তির ব্যবহারেই বেঁচে থাকা সম্ভব হয়। প্রতিকূল অবস্থায় খাপ খাইয়ে নিতে মানুষের শরীরে এ ধরনের পরিবর্তন ঘটতে পারে। এ ভাবে বেঁচে থাকাকেই ‘হাইবারনেশন স্টেট’ বলে।

এত কিছু বিশ্লেষণ শুনেও বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না এফবিআই কর্তার। সব শুনে সিমন বললেন, “ওঁর ভাগ্য ভাল। নয়তো সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ও ভাবে...!” একই বক্তব্য হাওয়াইয়ান এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র অ্যালিসন ক্রোয়েলেরও। তাঁর কথায়, “ছেলেটির শরীর-স্বাস্থ্য নিয়েই চিন্তিত আমরা। যদিও প্রাথমিক পরীক্ষায় কোনও খারাপ কিছু ধরা পড়েনি।”

ছেলেটির বিরুদ্ধে কোনও চার্জ আনা হয়নি। বরং কী ভাবে নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে বিমানের চাকার ফাঁকে উঠে বসেছিল সে, তার জবাব চাওয়া হয়েছে সান হোসে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে।

তবে এ সব নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারও। আগে একমাত্র নাইজেরিয়ার একটি ১৪ বছরের ছেলের বেঁচে ফেরার খবর এসেছিল। বিজ্ঞানীরা সে বার বলেছিলেন, মাত্র ৩৫ মিনিটের সফর ছিল বলেই প্রাণে রক্ষা পেয়েছিল সে। কিন্তু এ বার? হাইবারনেশনের তত্ত্বও বিশ্বাস করতে পারছেন না অধিকাংশ লোকই। তাঁদের দাবি, “যা শুনছি, তার বাইরেও হয়তো অন্য কোনও গল্প আছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

honolulu aeroplane wheels wayle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE