ইউক্রেন প্রশ্নে পুতিনকে চাপে ফেলতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেখাদেখি আর্থিক নিষেধাজ্ঞাকেই অস্ত্র করল আমেরিকা।
পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দেওয়ার অভিযোগে মস্কোর বিরুদ্ধে ব্যাঙ্ক, প্রতিরক্ষা এবং শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক গুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা জারি করল ওবামা প্রশাসন। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক বৈঠক করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানালেন, রাশিয়াকে শাস্তি দিতে নয়। আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করে পুতিন সরকারকে পিছু হটতে বাধ্য করার জন্যই তাঁদের এই পদক্ষেপ।
ব্রাসেলসে গত মঙ্গলবার সকালে বৈঠকে বসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি সদস্য দেশ। রাশিয়ার বড় বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক আদানপ্রদান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয় সেখানে। রাশিয়ায় অস্ত্র এবং প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম রফতানিও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। শুধু তা-ই নয়, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের তিন ঘনিষ্ঠের বিরুদ্ধেও বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সে দিনই সন্ধেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে ‘ভিডিও কনফারেন্স’-এ কথা হয় ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালির রাষ্ট্রপ্রধানদের। এর পরই বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক বৈঠক করে ওবামা জানিয়ে দেন, রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্তই কার্যকর করবে তাঁর সরকার।
প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ রাশিয়া প্রযুক্তিগত দিক থেকে পশ্চিমের দেশগুলির উপরই নির্ভরশীল। তা ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বৃহত্তম ব্যবসায়িক শরিক। ইউক্রেন সঙ্কটের কারণে এমনিতেই চাপের মুখে রুশ অর্থনীতি। মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। মার্কিন সরকারের আধিকারিকদের মত, এই অবস্থায় সার্বিক ভাবে রাশিয়াকে একঘরে করে ফেলতে পারলে মুখ থুবড়ে পড়বে পুতিনের ইউক্রেন জয়ের স্বপ্ন। সহকারী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অ্যান্টনি জে ব্লিনকেন বললেন, “ইউক্রেন সীমান্তে প্রচুর সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। মানবিকতা অথবা শান্তিরক্ষার অজুহাতে যে কোনও সময় ইউক্রেনে ঢুকে পড়তে পারে রুশ সেনা।”
এ সপ্তাহের গোড়ায় আমেরিকা দাবি করেছিল ৮৮-র পরমাণু অস্ত্র চুক্তি লঙ্ঘন করেছে রাশিয়া। মার্কিন প্রশাসন জানায়, এ বিষয়ে পুতিন সরকারের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলা হলেও কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তাঁরা। ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী পাবলো ক্লিমকিন এই মুহূর্তে ওয়াশিংটনে রয়েছেন। এ দিন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরির সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁর। কেরি এবং ক্লিমকিন দু’জনেরই মত, পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আর্থিক ও সামরিক ভাবে সাহায্য করা থেকে রাশিয়াকে ঠেকাতে এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল।
তবে নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নে রুশ বিদেশমন্ত্রী সার্জে ভি লাভরভ অবশ্য বলেছেন, “আমি নিশ্চিত, রাশিয়া যে কোনও রকমের বাধা কাটিয়ে উঠতে পারবে।”
এ বার কোপ চিনা নেতার ছেলের উপরে
ঝৌ বিন
বাবার পরে এ বার নজর পড়ল ছেলের উপরেও। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রাক্তন সদস্য ঝৌ ইয়ংকং-এর ছেলেকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিল সরকার। দুর্নীতির অভিযোগে ঝৌয়ের বিরুদ্ধে গত কালই তদন্ত শুরু করার কথা জানানো হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল এই নেতার পরিবারের বিরুদ্ধেও। বেআইনি ব্যবসায়িক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সিপিসি-র প্রাক্তন শীর্ষ নেতা ঝৌয়ের ছোট ছেলে ঝৌ বিনকে আপাতত আটক করা হয়েছে। নেতার ছেলের পাশাপাশি কোপ পড়েছে ঝৌ-ঘনিষ্ঠ আরও ২৪ জনের উপরে। বাবার ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে জলবিদ্যুৎ, তেল, পর্যটন এবং বিমা ক্ষেত্রে ঝৌ বিন গড়ে তুলেছিলেন তাঁর বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সিপিসি পর্যবেক্ষকরা দল এবং সরকার থেকে বহিষ্কার করেছেন আরও ছ’জনকে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের নেতৃত্বাধীন নয় সদস্যের স্ট্যান্ডিং কমিটির শীর্ষ নেতা ছিলেন ঝৌ ইয়ংকং। দুর্নীতিগ্রস্ত ঝৌ ইয়ংকংকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে বলে রাজনীতিকদের অনুমান। চিনা সংবাদমাধ্যমের দাবি, ঝৌকে শাস্তিদানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট দৃঢ় পদক্ষেপ করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং। গত বছর ক্ষমতায় আসার পরে সেনাবাহিনী এবং সিপিসিদুইয়েরই প্রধান হন সি। এই বিষয়ে অনেকেই একমত যে অপরাধ করা সত্ত্বেও পলিটব্যুরো সদস্যদের ছোঁয়া যায় না, প্রথাগত সেই ধারণা থেকে সরে এসেছেন এখনকার প্রেসিডেন্ট। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ঝৌয়ের পরিণতি অনেকটা তাঁর দলের অন্য সদস্য বো সিলাইয়ের মতোই হবে। যিনি এখন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। ঝৌ আবার বো-ঘনিষ্ঠও ছিলেন। তবে দুর্নীতিতে বোকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন ঝৌ ইয়ংকং।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy