লক্ষ্যে স্থির। অলিম্পিয়া শপিং সেন্টারের বাইরে সশস্ত্র বাহিনী। ছবি: এপি।
ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় ফের সন্ত্রাস। গত শুক্রবার ফ্রান্সের নিসে ট্রাকচালক পিষে মেরেছিল ৮৪ জনকে। আর আজ জার্মানির মিউনিখ শহরের এক রেস্তোরাঁ এবং শপিং মলে ভর সন্ধেবেলা হামলা চালিয়ে উধাও হয়ে গেল এক বন্দুকবাজ। জার্মান পুলিশের তরফে হামলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অনেকেই। পুলিশেরও আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। প্রাথমিক ভাবে হামলায় তিন বন্দুকবাজের কথা বলা হলেও পরে জানা যায়, হামলা চালিয়েছিল এক জনই।
চলতি সপ্তাহের গোড়াতেই জার্মানির বাভেরিয়ায় লোকাল ট্রেনে কুড়ুল আর ছুরি নিয়ে চড়াও হয়েছিল ১৭ বছরের এক কিশোর। আফগান শরণার্থী সেই কিশোরের আক্রমণে আহত হন পাঁচ জন। পুলিশ তাকে গুলি করে মারে। পরে তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে হাতে আঁকা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পতাকা মিলেছিল। পাওয়া গিয়েছিল একটি ভিডিও-ও। যাতে আইএসের প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়েছিল ওই কিশোর। শুক্রবারের হামলায় অবশ্য এখনও সরাসরি আইএস যোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ট্রেনের সেই ঘটনার পরে গোটা জার্মানি জুড়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই এ দিনের হামলা। সপ্তাহান্তের ছুটি শুরু হয়েছে। ফলে অফিস-ফেরত মানুষজন থেকে শুরু করে অনেকেই এ দিন ভিড় জমিয়েছিলেন রেস্তোরাঁ, শপিং মলে। বাচ্চা-কাচ্চাও ছিল অনেক। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, স্থানীয় সময় সন্ধে ছ’টা নাগাদ প্রথম গুলি চলে ম্যাকডোনাল্ড রেস্তোরাঁর ভিতরে। তার পর লাগোয়া হানাওয়া স্ট্রিটে। সেখান থেকে রেস্তোরাঁর উল্টো দিকের ‘অলিম্পিয়া আইনকাউফ সেনঠম’-এ (শপিং সেন্টার) ঢুকে পড়ে আততায়ীরা। শোনা যায় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ, আতঙ্কিত মানুষের চিৎকার।
পুলিশের কাছে খবর যেতেই তারা প্রথমে ঘিরে ফেলে চারপাশের রাস্তা। তার পর ঢোকে শপিং মলে। গোটা শপিং মল তখন তছনছ। ছড়িয়ে রয়েছে ব্যাগ-জুতো। পরে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘এক জনকে দেখলাম মাটিতে পড়ে। সম্ভবত আর বেঁচে নেই। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে এক মহিলা। হাউহাউ করে কাঁদছেন।’’
কিন্তু আততায়ীরা কোথায়! কখন তারা পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছে, কেউ জানতে পারেনি। এক বার শোনা যায়, কাছের মেট্রো স্টেশন মারিয়েন প্লাৎজে ঢুকেছে জঙ্গিরা। সেখানেও হামলা হয়েছে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছড়ায়। পুলিশের ধারণা, বন্দুকবাজরা শহরের অন্য এলাকায় গিয়েও হামলা চালানোর চেষ্টা করতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে বাস-ট্রেন— সব পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মিউনিখবাসীকে বলা হয়, বাড়ির বাইরে না-বেরোতে। হামলার কোনও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড না-করতে। ট্যাক্সিচালকদের নির্দেশ দেওয়া হয় কোনও যাত্রী না-তোলার জন্য। আপাতত শহর জুড়ে হন্যে হয়ে আততায়ীদের খোঁজ চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলার পরে পুলিশের ধারণা হয় তাদের সংখ্যা তিন। তাদের কাছে দূর পাল্লার বন্দুক রয়েছে। রাতে সরকারি সূত্রে বলা হয়, এক জন বন্দুকবাজ সম্ভবত নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছে।
মিউনিখের সেখানে হামলা হয়েছে। ছবি সৌজন্যে গুগ্ল ম্যাপ।
এত বড় মাপের জঙ্গি হামলা সাম্প্রতিক কালে জার্মানিতে হয়নি। তবে এ দিন যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী জার্মানির বৃহত্তম জঙ্গি হামলার স্মৃতি। দোতলা অলিম্পিয়া শপিং সেন্টারের কাছেই মিউনিখ স্টেডিয়াম। ১৯৭২ সালে অলিম্পিক্স চলাকালীন ওই স্টেডিয়ামেই ১১ জন ইজরায়েলি অ্যাথলিটকে পণবন্দি করেছিল প্যালেস্তিনীয় জঙ্গিরা। পরে তাঁদের সকলকে মেরে ফেলা হয়। মারা যান এক জন জার্মান পুলিশও।
এ দিনের হামলা কী কারণে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। রাত পর্যন্ত কেউ হামলার দায় নেয়নি। তবে ‘উচ্ছ্বাস’ প্রকাশ করেছে ‘ইসলামিক স্টেটের সমর্থক’ বলে দাবি করা একটি গোষ্ঠী। আরবি ভাষায় লেখা টুইটে তারা বলেছে, ‘‘আল্লাকে ধন্যবাদ। আল্লা ইসলামিক স্টেটের সদস্যদের সমৃদ্ধশালী করুন। ইউরোপে ইসলামিক স্টেট ছড়িয়ে পড়ছে।’’
যদিও এ দিনের ঘটনাকে জঙ্গি হামলা আখ্যা দিয়েও এর সঙ্গে ইসলামি জঙ্গিদের জড়িত থাকার ইঙ্গিত মেলেনি বলেই দাবি করেছেন জার্মান পুলিশের মুখপাত্র। হামলার ঠিক পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘আমরা জানি না ওখানে ঠিক কী ঘটেছে। কিন্তু যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং তাঁদের সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিচ্ছি।’’
জার্মান পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানাচ্ছে, গত ১০ মাসে জার্মানিতে একের পর এক ঘটনা প্রমাণ করেছে, সন্ত্রাসবাদীরা যে কোনও সময় হামলা চালাতে পারে। পাঁচ দিনে দু’টি আক্রমণ সেই আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণ করল।
আরও পড়ুন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy