গণতন্ত্রের দাবিতে তাঁর দীর্ঘ দিনের লড়াই। যার মাসুল দিতে গিয়ে টানা ১৫ বছর গৃহবন্দি থেকেছেন। আজ তিনি মুক্ত এবং মায়ানমারের অন্যতম প্রধান বিরোধী নেত্রী। অথচ রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়ে মুখে কুলুপ নোবেলজয়ী আউং সান সু চি-র। মাস তিনেক পরেই দেশে সাধারণ নির্বাচন। তাই নেত্রীর এই নীরবতার পিছনে রাজনৈতিক স্বার্থই দেখছেন কূটনীতিকদের একাংশ।
অভিযোগ, সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের নির্যাতন ও সরকারি অব়জ্ঞা থেকে বাঁচতেই দেশছাড়া রোহিঙ্গারা। গোটা ঘটনায় আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশ। যার জেরে প্রথমে অস্বীকার করলেও আজ ব্যাঙ্ককে রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকে যোগ দিতে কার্যত বাধ্যই হয়েছে মায়ানমার।
কিন্তু সু চি কেন এ নিয়ে কিছু বলছেন না? তাঁর এই নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তোলেন তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামা-ও। গত কাল অস্ট্রেলিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, ২০১২ থেকে অন্তত দু’বার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে হস্তক্ষেপ করতে সু চি-কে অনুরোধ করেছেন তিনি। সু চি অবশ্য বরাবর সরকারের কোর্টেই বল ঠেলতে চেয়েছেন। দিন দশেক আগের এক জনসভায় রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে একটি বাক্যেই দায় সারেন তিনি। বলেন, ‘‘মায়ানমার সরকারকেই এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।’’
সু চি-র এইরকম আচরণের পিছনে রাজনৈতিক স্বার্থ দেখছেন সমালোচকরা। তাঁদের ব্যাখ্যা, নভেম্বরে দেশে সাধারণ নির্বাচন। সেখানে তাঁর দল এনএলডি (ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি)-র জয়ের সম্ভাবনাও যথেষ্ট। দেশে প্রায় ৯০ শতাংশ বৌদ্ধ। এবং অধিকাংশই রোহিঙ্গা-বিরোধী বলে অভিযোগ। তাই এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের সমর্থনে মুখ খুলে তীরে এসে তরী ডোবাতে চাইছেন না বিরোধী নেত্রী সু চি।
রাষ্ট্রপুঞ্জ অবশ্য রোহিঙ্গাদের বিষয়টিকে আদৌ খাটো করে দেখতে চাইছে না। অভিবাসন সমস্যার সমাধানে আজ তাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন। এই বৈঠকে রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী বিষয়ক সহকারী হাই কমিশনার ভলকার টার্ক বলেন, ‘‘নিজের নাগরিকদের রক্ষা করার দায়িত্ব সে দেশেরই।’’ মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের কেন নিজের নাগরিক বলে স্বীকার করে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মায়ানমার অবশ্য দাবি করেছে, শরণার্থী সমস্যার জন্য শুধু মায়ানমারকে কাঠগড়ায় তুলে বিষয়টিতে রাজনৈতিক রং লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। বৈঠকে হাজির মায়ানমারের বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিনিধি তিন লিন্ বলেন, ‘‘এখানে মানুষ পাচারের সমস্যাটাই সব চেয়ে বড়।’’ সমস্যার সমাধানে আজ ফের আন্তর্জাতিক সমর্থন চাওয়া হয় মায়ানমারের তরফে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy