Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

নিজের বেলা আঁটিসাঁটি! দাঁত চেপেই কাঠগড়ায় মার্ক জুকেরবার্গ

আগের রাতে তিনি কোন হোটেলে ছিলেন, কিছুতেই তা রাষ্ট্র করতে রাজি নন ফেসবুক-কর্তা। গত এক সপ্তাহে কাকে-কাকে তিনি মেসেজ করেছেন, সে-ও তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত!

মার্কিন কংগ্রেসের শুনানি-কক্ষে ফেসবুক-কর্তা জুকেরবার্গ। ছবি: এপি।

মার্কিন কংগ্রেসের শুনানি-কক্ষে ফেসবুক-কর্তা জুকেরবার্গ। ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০২
Share: Save:

দু’বার ঢোক গিললেন মার্ক জুকেরবার্গ। এক বার গ্লাসে চুমুক। আর বোকা-বোকা হাসির ফাঁকেই আমতা-আমতা করে জবাব দিলেন, ‘‘না, কোনও ভাবেই না।’’

আগের রাতে তিনি কোন হোটেলে ছিলেন, কিছুতেই তা রাষ্ট্র করতে রাজি নন ফেসবুক-কর্তা। গত এক সপ্তাহে কাকে-কাকে তিনি মেসেজ করেছেন, সে-ও তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত! অথচ তাঁরই সংস্থা থেকে বেহাত হয়ে গিয়েছে প্রায় ৯ কোটি নেটিজেনের ‘ব্যক্তিগত তথ্য’। এমনকি তাঁর নিজেরও! মার্কিন কংগ্রেসে তিনিই এই দাবি করেছেন।

তবু চিঁড়ে ভিজল না ক্যাপিটল হিলে। কাল বিকেলে তাঁকে ঘণ্টা পাঁচেক নাগাড়ে বিঁধেছেন ৪২ জন সেনেটর। যৌথ শুনানি ডেকেছিল বিচারবিভাগীয় ও বাণিজ্য বিষয়ক কমিটি। শুনানি হয় বুধবার সকালেও। তবে মঙ্গলবার ৪ ইঞ্চি ‘বাড়তি গদি’-র চেয়ারে বসে যে রোবট-সুলভ জুকেরবার্গকে দেখা গেল, তা দেখে অনেকেই বলছেন, ‘‘লোকটা ভাঙলেও, মচকানোর বান্দা নয়।’’ জুকেরবার্গ যখন ক্যাপিটল হিলে পা রাখছেন, বাইরে তখন ছেলে-মেয়েদের ভিড়। তাঁদের টি-শার্টে ছাপানো— #ডিলিটফেসবুক। কারও চোখে আবার ঢাউস রোদচশমা। তাতে লেখা, ‘স্টপ স্পাইং’।

ব্যবহারকারীদের উপর নজরদারি চালিয়ে তথ্য চুরির পাশাপাশি, দেশ-বিদেশের নির্বাচন প্রভাবিত করার অভিযোগে বিদ্ধ ফেসবুক। ঘৃণা ছড়াতে ভুয়ো খবরের পিছনেও ফেসবুকের ‘কালো হাত’ রয়েছে বলে দাবি একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের। কাল শুনানিতে সব ‘ভুল’ স্বীকার করে নিলেও, এ জন্য রাশিয়াকেই একহাত নেন ফেসবুক কর্তা। মার্কিন ভোটে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে কংগ্রেসে প্রশ্ন উঠতেই জুকেরবার্গ বলেন, ‘‘আমাদের আসল লড়াইটা রাশিয়ার হ্যাকারদের সঙ্গে। রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে আমাদের। এ-ও যেন অস্ত্র প্রতিযোগিতা।’’ তাঁর দাবি, আগামী দিনেও ফাঁদ পাততে পারে মস্কো। রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত চলছে— এই যুক্তি দেখিয়ে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি জুকেরবার্গ। তবে জানিয়েছেন, গোড়া থেকেই তদন্তে সহযোগিতা করছে ফেসবুক।

সেনেটরদের একাংশ অবশ্য তাঁর রাশিয়া ‘জুজু’-র কথা সবটা মানতে চাননি। কারণ অভিযোগ, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাকে ওই তথ্য নিজেরাই বেচে দিয়েছিল ফেসবুক। জুকেরবার্গের দাবি, তথ্য বেহাত হয়ে যাওয়ার কথা ২০১৫-য় জানতে পারেন তিনি। কিন্তু এর পরেও ব্যবহারকারীদের কেন সতর্ক করা হয়নি, তার সদুত্তর দিতে পারেননি কর্তা। থেকে থেকেই শুধু আউড়ে গিয়েছেন— ‘‘ফেসবুক আমার সংস্থা। সব দায় আমার। তবে ভবিষ্যতে এমন যাতে না হয়, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আমার সহকর্মীরা।’’ সেনেটররা ফেসবুকের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে চেয়েও সওয়াল করেন। সুর নরম রেখে মার্ক জানান, সঠিক নিয়ন্ত্রণ আরোপে তাঁর আপত্তি নেই। খবর এসেছে, অ্যানালিটিকার অন্যতম শীর্ষ কর্তা আলেকজান্ডর টেলার আজই ইস্তফা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তদন্তের আওতায় আনা হবে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিকেও।

জুকেরবার্গের দাবি, গোড়ায় একবার অ্যানালিটিকা সব তথ্য মুছে ফেলার কথা বলেছিল। কিন্তু তা মেনে নেওয়া যে ভুল হয়েছিল, স্বীকার করেন ফেসবুক-কর্তা। জুকেরবার্গেরই সংস্থা হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছিল। তবে এ দিন তিনি আশ্বস্ত করেছেন, এই অ্যাপ সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। এর মেসেজ ফেসবুক সিস্টেমের নজরের বাইরে।

শেষ বেলায় অবশ্য খোলস ছাড়েন জুকেরবার্গ। বুক চাপড়ে বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি ‘আমেরিকার স্বপ্ন’-কেই সার্থক করেছেন। সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়েন বাণিজ্য কমিটির চেয়ারম্যান সেনেটর জন থুনে। আবার হুঁশিয়ারও করেন, ‘‘আপনার এই স্বপ্ন, যেন আমজনতার দুঃস্বপ্নের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।’’

জুকেরবার্গই সর্বেসর্বা। তাই ফেসবুক থেকে তাঁকে ছাঁটাইয়ের প্রশ্নই ওঠে না। সংবাদমাধ্যমের একাংশের অবশ্য দাবি, এ দিন তিনি তাঁর ইস্তফা-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিতেও তৈরি হয়ে এসেছিলেন। তাঁর নোটবইয়ে লেখা ছিল, বাইরের কিছু অ্যাপই যে গন্ডগোল পাকাচ্ছে, তা অ্যাপল-কে জানানো সত্ত্বেও তারা সেটা নিজেদের গ্রাহকদের জানায়নি। ভাবটা, ‘দোষ কি আমার একার!’ জুকেরবার্গকে এটা মুখে বলতে হয়নি, শুনানির বিরতিতে নিজের নোটবইটা শুধু খোলা রেখে চেয়ার ছেড়েছিলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE