‘ফ্রেঞ্চ প্সাইডারম্যান’ এলেইন রবার্ট। ছবি: সংগৃহীত।
১২ জুন, সোমবার পুলিশের সামনে একেবারে খালি হাতেই তরতরিয়ে দেওয়ার বেয়ে উপরে চড়তে লাগলেন এক বছর পঞ্চান্নর ব্যক্তি। দেখতে দেখতে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ৩৯৪ ফুট উঁচু টাওয়ারের ছাদে পৌঁছে যান তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছে স্পেনের বার্সেলনার স্কাই হোটেলে। এটি স্পেনের চতুর্থ উচ্চতম টাওয়ার। যিনি এই অসম্ভব কাজটি করেছেন তাঁর নাম এলেইন রবার্ট। ফ্রান্সের বাসিন্দা। তবে রবার্টের ক্ষেত্রে এটাই প্রথম নয়। এ যাবত্ বিশ্বের ১৩০-এরও বেশি উঁচু ইমারত এ ভাবেই চড়েছেন তিনি। কিন্তু কেন এমন ঝুঁকি নেন তিনি?
রবার্ট জানান, আগে উঁচুতে উঠলেই মাথা ঘুরত তাঁর। শরীরে অস্বস্তি হত। ভয়ও করত। কারণ, তিনি ‘ভার্টিগো’র শিকার। কিন্তু এই ভয়কে জয় করার একটা জেদ চেপে যায় এক দিন। আরও আরও বেশি উঁচুতে পৌঁছানোর নেশাই আজ তাঁকে চিনিয়েছে বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষকে। তিনি ‘ফ্রেঞ্চ প্সাইডারম্যান’ নামেই বেশি পরিচিত গোটা দুনিয়ায়। যত উঁচু বিল্ডিং, তত বড় চ্যালেঞ্জ আর সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার অনন্দও তত বেশি। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার বুর্জ খলিফা থেকে আইফেল টাওয়ার সবই তিনি চড়েছেন খালি হাতেই।
রবার্টের এই যাত্রাপথ মটেই মসৃণ ছিল না। একে তো ‘ভার্টিগো’র সমস্যা। তার উপর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ তাঁর এই অভিযানগুলিতে শুরুতে অনুমতিও মিলত না।
১৯৯৭-এ ১৪৮৩ ফুট উঁচু কুয়ালালামপুরের পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারে খালি হাতে চড়তে শুরু করেন রবার্ট। কিন্তু ৮৮ তলা টাওয়ারের ৬০ তলায় পৌঁছানোর পর তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু এতে দমানো যায়নি তাঁকে। ১৯৯৯-এ পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারসও-এ হোটেল ম্যারিয়ট-এর ৫৫৮ ফুট উঁচু টাওয়ারে চড়ে নজর কাড়েন অসংখ্য মানুষের।
বুর্জ খলিফায় রবার্ট।
ফেব্রুয়ারি ২০০৩, সরকারি অনুমতি নিয়ে এক লক্ষ দর্শকের সামনে ৬৫৬ ফুট উঁচু ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অফ আবু ধাবির টাওয়ারের মাথায় খালি হাতে চড়ে জনপ্রিয় হয়ে যান রবার্ট। সে বছরই মে মাসে ৩১২ ফুট উঁচু লন্ডনের লয়েড বিল্ডিং-এ চড়েন তিনি। তবে এ বার ‘স্পাইডার ম্যান’ ছবির প্রচারে ১৮ হাজার ডলারের বিনিময়ে। আর এই ‘স্পাইডার ম্যান’ ছবির প্রচার করেই গোটা ইউরোপে বিখ্যাত হয়ে যান রবার্ট। মানুষ তাঁকে ‘ফ্রেঞ্চ প্সাইডারম্যান’ নামে ডাকতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: পার্কিং করার সময় নেই বলে দোকানের ভিতরেই গাড়ি চালিয়ে ঢুকলেন ক্রেতা!
৫ জুন ২০০৮-এ বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে প্রচারে নিউ ইয়র্ক টাইম্স বিল্ডিং-এ চড়েন রবার্ট। সেখানে যে ব্যানার নিয়ে তিনি চড়েছিলেন তাতে লেখা ছিল, ‘৯/১১-র হামলায় যত মানুষ মরেছে, প্রতি সপ্তাহে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বিশ্ব উষ্ণায়নে’। অবশ্য এ কাজে অনুমতি না থাকায়, নিউ ইয়র্ক টাইম্স বিল্ডিং-এ ছাদে পৌঁছতেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৯৯৭-এর অসম্পূর্ণ অভিযান ১ সেপ্টেম্বর ২০০৯-এ সম্পূর্ণ করেন রবার্ট। মাত্র ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে ১৪৮৩ ফুট উঁচু কুয়ালালামপুরের পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের চুড়ায় পৌঁছান তিনি। কিন্তু এর জন্য পরে ‘অপরাধমূলক অনুপ্রবেশ’-এর দায়ে তাঁর দু’ মাসের জেল এবং মোটা টাকা জরিমানা হয়।
কিন্তু বাধা যতই আসুক, থেমে থাকেননি রবার্ট। ভয় আর স্নায়বিক দুর্বলতাকে হারিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়ান, জয় করেন দেশ-বিদেশের উঁচু উঁচু ইমারতগুলিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy