Advertisement
১১ মে ২০২৪

প্রয়াত মানবাধিকার নেত্রী আসমা জাহাঙ্গির

রবিবার লাহৌরে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে থেমে গেল সেই প্রতিবাদী স্বর। তিনি আসমা জাহাঙ্গির।

আসমা জাহাঙ্গির।

আসমা জাহাঙ্গির।

সংবাদ সংস্থা
লাহৌর শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৬
Share: Save:

এমন একটা সময় ছিল যখন মানবাধিকারকে কোনও ‘বিষয়’ বলে মনেই করা হত না! তার পর একটা সময় এল, যখন বন্দিদের অধিকার নিয়েও ভাবনা শুরু হল। কথাগুলো বলতেন যিনি, তাঁকে একেবারেই পছন্দ করতেন না পাকিস্তানের প্রাক্তন সেনাপ্রধান এবং প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ। রবিবার লাহৌরে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে থেমে গেল সেই প্রতিবাদী স্বর। তিনি আসমা জাহাঙ্গির।

পাক গুপ্তচর সংস্থা মাঝেমধ্যেই সন্দেহভাজন হিসেবে নানা ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যেত। তাদের আদালতে তোলা পর্যন্ত হত না। তাদের বিনা পয়সায় মামলা লড়তেন আসমা। নিরপরাধের মুক্তির জন্য জান লড়িয়ে দিতেন। মুশারফের বিরাগভাজন হন সে কারণেই। ২০০৭ সালে গ্রেফতার করা হয় আসমাকে। ১৯৭১ সালে যে ক’জন পাকিস্তানি জীবন বিপন্ন করে বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়ান, তার মধ্যে ছিলেন আসমার বাবা মালিক গোলাম জিলানি। বাবার সুবাদে তো বটেই, মুক্তিযুদ্ধের পাক সেনার বর্বরতার জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে আসমা অনড় ছিলেন বলে বাংলাদেশও তাঁকে চেনে এক ডাকে।

মাত্র ৬৬ বছর বয়সে এই আইনজীবী, সমাজকর্মীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ কন্যা মুনিজায়ে জাহাঙ্গির এক টুইটে বলেছেন, ‘‘মাকে হারিয়ে আমি বিধ্বস্ত।’’

আরও পড়ুন: ৭১ আরোহী নিয়ে ধ্বংস রুশ বিমান

পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাশ করে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু। পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন-এর চেয়ারপার্সনও ছিলেন। ৯০-এর দশকে রাষ্ট্রপুঞ্জের হয়ে পাকিস্তান সম্পর্কে রিপোর্ট তৈরি করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন আসমাই।

এক সপ্তাহ আগেই তো অক্সফোর্ডে দেখা হল। বিশ্বাসই করতে পারছি না, উনি আর আমাদের মধ্যে নেই!
মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়াই হবে ওঁর (আসমার) প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য।

মালালা ইউসুফজাই

গণতন্ত্রকামীদের পক্ষে সওয়াল করায় ১৯৮৩ সালে জেনারেল জিয়া উল হকের শাসনেও কারাবাস করেছেন আসমা। পেয়েছেন প্রাণনাশের হুমকি। ভারত-পাক শান্তির জন্যও সরব হয়েছেন বরাবর। পাকিস্তানে বহুচর্চিত আইনজীবীদের আন্দোলনের সময়ে প্রধান বিচারপতি ইফতিকার চৌধুরির পুনর্বহালেও সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাঁর।

আসমার মৃত্যুতে আজ শোকবার্তা জানান এক সময়ে তাঁর কট্টর বিরোধীরাও। প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খকন আব্বাসি ও প্রেসিডেন্ট মামুন হুসেন শোকপ্রকাশ করেছেন। পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাশাপাশি শোক জানান নওয়াজ-কন্যা মরিয়মও। শোক জানান মালালা ইউসুফজাই। ভারতে জাভেদ আখতার, শাবানা আজমি, নন্দিতা দাশরাও শোকার্ত। শাবানা লিখেছেন, ‘‘পাকিস্তান সব চেয়ে নির্ভয় বিপ্লবীকে হারাল। মানবাধিকার আন্দোলন হারাল তার সব চেয়ে বড় নেতাকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE