Advertisement
০৪ মে ২০২৪

তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত আমেরিকায় মৃত ১০

পূর্বাভাস ছিলই। অবশেষে আছড়ে পড়ল প্রাণঘাতী সেই তুষারঝড়। সপ্তাহ শেষের দু’টো দিন আর বাইরে নয়, বাড়ির ভিতরে থাকাই শ্রেয়। দশটি মার্কিন রাজ্যে জারি হয়েছে এমনই সতর্কতা। শুক্রবার দুপুর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রচণ্ড তুষারপাত। গোটা দেশে এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ১০ জন।

গাড়ির উপর থেকে বরফ সরানোর চেষ্টা। ওয়াশিংটনে শনিবার। ছবি: এএফপি

গাড়ির উপর থেকে বরফ সরানোর চেষ্টা। ওয়াশিংটনে শনিবার। ছবি: এএফপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:১৪
Share: Save:

পূর্বাভাস ছিলই। অবশেষে আছড়ে পড়ল প্রাণঘাতী সেই তুষারঝড়। সপ্তাহ শেষের দু’টো দিন আর বাইরে নয়, বাড়ির ভিতরে থাকাই শ্রেয়। দশটি মার্কিন রাজ্যে জারি হয়েছে এমনই সতর্কতা। শুক্রবার দুপুর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রচণ্ড তুষারপাত। গোটা দেশে এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ১০ জন।

নিউ জার্সিতে থাকেন পিউ মজুমদার। কথা বলতে বলতেই তিনি জানালেন, ‘‘এখনও প্রচণ্ড ঝড় হচ্ছে। বাড়ির ভিতর থেকেই আওয়াজ পাচ্ছি।’’ আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস পেয়ে আগে থেকেই কোমর বেঁধেছেন তিনি। গত কাল অফিস থেকে ফেরার পথেই সেরে ফেলেছেন সপ্তাহ শেষের বাজার। শুধু পিউ নন, দুর্দিনের রসদ সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সবাই। যেমন বাল্টিমোরের শ্যারন। তাঁর কথায়, ‘‘২০১০ সালে ঝড়ের সময়ে বাড়ির ভিতর আমি আর মেয়ে। সঙ্গে শুধু নুডলস। আর কিচ্ছু নেই!’’ তবে এ বার আর সেই ভুল করতে নারাজ শ্যারন। কাল সন্ধে থেকেই তাই সুপার মার্কেটগুলিতে উপচে পড়েছে ভিড়। অনেকে যদিও মন্তব্য করেছেন, তড়িঘড়ি সুপার মার্কেটের স্টক শেষ করার জন্যই এতটা ‘বাড়াবাড়ি রকমের পূর্বাভাস’!

এ যুক্তি অবশ্য মানতে নারাজ প্রশাসন। ২০১০ সালে স্নোম্যাগেডন নামের একটি বড়সড় তুষারঝড়ের মুখোমুখি হয়েছিল উত্তর আমেরিকা। সে সময়ে প্রায় দেড় ফুটের কাছাকাছি বরফ পড়েছিল। আবহাওয়াবিদদের কথা অনুযায়ী, ২০১০-র রেকর্ডকেও ছাপিয়ে যাবে এ বারের তুষারপাত। দুই থেকে তিন ফুট বরফের চাদরে ঢাকা পড়তে পারে বাল্টিমোর, ওয়াশিংটন। ঘণ্টায় আশি কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসতে পারে ঝড়।

‘‘এখনই বাইরে প্রায় এক ফুট বরফ। আশঙ্কা আজ রাতের মধ্যেই আরও এফ ফুট পড়বে’’, বললেন ওয়াশিংটনের বাসিন্দা ভাস্কর চক্রবর্তী। তিনি জানালেন, এ সপ্তাহের মতো বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওয়াশিংটনের মেট্রোও।

নিউ জার্সি এবং নিউ ইয়র্ক প্রশাসন জানিয়েছে, উপকূল বরাবর বন্যার জন্যও আগাম সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। বরফ পড়ে বন্ধ রাস্তাঘাট। সেই অবস্থায় কেন্টাকি শহরের রাস্তাতেই প্রায় ১২ ঘণ্টা আটকে বহু মানুষ। যেমন, তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে ওখানে আটকে ছিলেন ড্যানি গার্নার। বরফ-জমাট রাস্তা। পর পর ট্রাক। একটু এগোনোরও জায়গা নেই। ড্যানি বলেছেন, ‘‘খাবার, জল কিছুই ছিল না। তবে আমরা ভাগ্যবান যে গাড়িতে গ্যাস ছিল। তাই হিটার চালিয়ে রাখতে পেরেছি। নইলে গাড়ির ভিতরেই হয়তো জমে যেতাম।’’ কেন্টাকি পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের এখন একটাই কাজ। এক গাড়ি থেকে আর এক গাড়িতে যাচ্ছি। আর দেখছি, ভিতরে কেউ আটকে নেই তো?’’

দশটি রাজ্যে জারি হয়েছে সতর্কতা। তার আওতায় রয়েছে ৮৫০ লক্ষ বাসিন্দা। ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বাউসার বলেছেন, ‘‘এই ঝড়ে মৃত্যুভয় রয়েছে।’’ ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে সাত হাজারেরও বেশি বিমান বাতিল করা হয়েছে। আবহাওয়ার ফলে আরও সাত হাজার বিমান উঠতে দেরি হয়েছে বলে বিমান মন্ত্রক সূত্রের খবর। উত্তর ক্যারোলাইনায় বিদ্যুৎহীন ১ লক্ষেরও বেশি বাড়ি। যদিও ‘‘এখনও অতটা ভয়ানক পরিস্থিতি আমাদের এখানে হয়নি’’, বলেই পিউয়ের বক্তব্য। সপ্তাহান্তের দু’দিন কোনও মতে গৃহবন্দি কাটালেও সোমবার কী হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পিউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE