Advertisement
০৩ মে ২০২৪
ঐক্যের ডাকে সাড়া নেই

এটাই কি ট্রাম্পের আমেরিকা!

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেই ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু প্রচার-পর্বে ধারাবাহিক ভাবে তিনি যে জাতিবিদ্বেষের আবহ তৈরি করেছিলেন, তা থেকে বেরোতে পারছেন না ট্রাম্প-ভক্তরা।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৪
Share: Save:

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেই ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু প্রচার-পর্বে ধারাবাহিক ভাবে তিনি যে জাতিবিদ্বেষের আবহ তৈরি করেছিলেন, তা থেকে বেরোতে পারছেন না ট্রাম্প-ভক্তরা।

বিপুল ভোটে হিলারি ক্লিন্টনকে হারিয়ে ট্রাম্প দেশের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে গত দু’দিন ধরে সংখ্যালঘু-নিগ্রহের বিক্ষিপ্ত খবর আসছে। মুসলিম, হিসপ্যানিক, কৃষ্ণাঙ্গ এবং এলজিবিটি সম্প্রদায়, কেউই রেহাই পাচ্ছেন না ট্রাম্পপন্থীদের রোষ থেকে। অভিযোগ, লুঠপাট, প্রাণনাশের হুমকি, শারীরিক নিগ্রহ, বর্ণ-বিদ্বেষী দেওয়াল লিখন — সবই চলছে পাল্লা দিয়ে।

গত বছর ডিসেম্বরে ট্রাম্পের মুখে প্রথম শোনা গিয়েছিল কথাটি। মার্কিন মুলুকে মুসলিমদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হবে বলে সুর চড়া করেছিলেন তিনি। সেই কথায় আলো়ড়ন পড়ে যায় সারা বিশ্বে। কিন্তু তীব্র সমালোচনার মুখেও নিজের অবস্থান থেকে একচুল সরেননি ট্রাম্প।

জিতে আসার পরে অনেক কিছুই রাতারাতি পাল্টেছে। বিভেদ ভুলে ট্রাম্প শুনিয়েছেন ঐক্যের বাণী। তাঁর

প্রচার-ওয়েবসাইট থেকেও মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার সেই বিতর্কিত ঘোষণা উধাও হয়ে যায় কিছু ক্ষণের জন্য। যা দেখে সর্বত্র প্রশ্ন উঠেছিল, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে কি উদ্দেশ্যপূর্ণ ভাবেই এই সিদ্ধান্ত? সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই ওয়েবসাইটে আবার ফিরে এসেছে ওই কথা। ট্রাম্প শিবির জানিয়েছে, এটা প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেই ঘটেছে। এর মধ্যে অন্য কোনও অর্থ খোঁজার কোনও মানে নেই। সাইটে এখন মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধের পাশাপাশি বহাল তবিয়তে রয়েছে ট্রাম্পের সেই সব বক্তৃতার ভিডিও, যেখানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনের পরে এক সাংবাদিক ট্রাম্পের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, মার্কিন কংগ্রেস কি তাঁর সুপারিশে মুসলিমদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সিলমোহর বসাবে? এর জবাব না দিয়েই চলে গিয়েছেন ট্রাম্প।

প্রশাসন কোন পথে হাঁটবে, তা এখনও অস্পষ্ট। তবে পথে-ঘাটে সংখ্যালঘুরা আতঙ্কে সিঁটিয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ। সান দিয়েগোয় স্টেট ইউনিভার্সিটির এক কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম ছাত্রীকে নিগ্রহের অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশের কাছে। পুলিশকে সেই ছাত্রী জানান, তাঁর উপরে চড়াও হয় দুই ব্যক্তি। ট্রাম্পের নামে স্লোগান দিতে দিতে তাঁর পার্স কেড়ে নেয় তারা। এর পরে মুসলিমদের অকথ্য গালিগালাজ করে গাড়ি ভাঙচুর করে।

কিছু কিছু জায়গায় মুসলিম মহিলারা হিজাব পরে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন বলে অভিযোগ শোনা গিয়েছে। কেউ কেউ দাবি করেছেন, মুসলিম মহিলাদের হিজাব টেনে ছিঁড়ে দিয়ে নিগ্রহ চালাতেও হাত কাঁপেনি বিদ্বেষীদের। তাই যতটা পারা যায় ঝুঁকি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন দেশের সংখ্যালঘুরা। একটি সূত্রের খবর, বিদ্বেষের শিকার হতে হচ্ছে স্কুলের শিশুদেরও। হিজাব না পরেই স্কুলে আসছে মেয়েরা। তাঁদের ভয়, যদি ট্রাম্পের দলবল হিজাব পরা দেখে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়! কানসাসের একটি স্কুলে ট্রাম্পের ছবি দেওয়াটি-শার্ট পরা দুই খুদেই নাকি তাঁদের বান্ধবীর হিজাব টেনে খুলে দেয়। স্কুল পাঁচ দিনের জন্য সাসপেন্ড করেছে তাদের। খুদেদের কাছে যখন জানতে চাওয়া হয়, এমন কেন করল তারা? উত্তর, ‘‘ওকে তো এমনিই লাথি মেরে বের করে দেওয়া হবে।’’ ওয়াশিংটনের কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস-এর দাবি, ‘‘ট্রাম্পের প্রচারের সময় থেকেই এই মুসলিম-বিরোধী আবহটা বেশি করে তৈরি হয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু যেটা ভয়ের, সেটা হচ্ছে এই গন্ডগোল কোথায় গড়াবে!

একটি মার্কিন দৈনিকের দাবি, ট্রাম্পপন্থীরা বিদ্বেষমূলক কাজকর্ম শুরু করেছে। প্রচারপর্বে মুসলিম, মহিলা, অভিবাসন নিয়ে নানা রকম বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প। দৈনিকটি জানিয়েছে, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যান্ডন স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে একটি প্রার্থনাঘরের দেওয়ালে স্প্রে-পেন্টে ট্রাম্পের নাম লিখে দিয়েছে কেউ। মিনেসোটা হাইস্কুলে চোখে পড়েছে ‘সাদাদের আমেরিকা’, ‘আফ্রিকায় ফিরে যাও’ জাতীয় দেওয়াল লিখন। মিশিগানের একটি স্কুলের ক্যান্টিনে ‘দেওয়াল তৈরি হোক’ স্লোগানও উঠছে।

ট্রাম্পকে রাষ্ট্রনায়ক মানতে অস্বীকার করে বিক্ষোভের দ্বিতীয় দিনেও পথে নেমেছেন অনেকে। ‘নট মাই প্রেসিডেন্ট’ স্লোগানে এ দিনও স্তব্ধ হয়ে যায় ওরেগনের পোর্টল্যান্ড শহর! স্লোগান, বিক্ষোভ, ভাঙচুর— দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হয় শহর জুড়ে। বিক্ষোভকারীদের থামাতে পুলিশকে রবার-বুলেট, পেপার স্প্রে, স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করতে হয়। লস অ্যাঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া, ডেনভার, মিনিয়াপোলিস, বাল্টিমোর, ডালাস ও অকল্যান্ডেও বিক্ষোভ হয়েছে। এ দিনও নিউ ইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে দফায় দফায় স্লোগান দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

ট্রাম্পের ‘স্বপ্নের আমেরিকা’র ছবি কি এমনই হবে? সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

trump america
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE