Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Sports News

ব্রিটিশদের উড়িয়ে সিরিজ জয় ভারতের

অ্যান্ডারসনের ব্যাট থেকে ছিটকে আসা বল উমেশ যাদবের হাতে জমা পড়তেই মুম্বইয়ে সোমবারের সকালে অকাল দিপাবলীর উচ্ছ্বাস। কারিগর সেই রবিচন্দ্রন অশ্বিন। শেষটাও হল তাঁরই হাতে। এই ইনিংসে ছ’টি উইকেট। ম্যাচে ১২। তিনি একা নন, পুরো সিরিজে কোনও এক জনের নাম নেওয়া মুশকিল। কোনও একজনের ব্যাটে বা বলে ভর করে এই সিরিজ জয় হয়নি ভারতের।

উচ্ছ্বাস ভারতীয় ক্রিকেটারদের। ছবি: রয়টার্স।

উচ্ছ্বাস ভারতীয় ক্রিকেটারদের। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ১০:১৫
Share: Save:

ইংল্যান্ড ৪০০ ও ১৯৫

ভারত ৬৩১

এক ইনিংস ও ৩৬ রানে জয় ভারতের

অ্যান্ডারসনের ব্যাট থেকে ছিটকে আসা বল উমেশ যাদবের হাতে জমা পড়তেই মুম্বইয়ে সোমবারের সকালে অকাল দিপাবলীর উচ্ছ্বাস। কারিগর সেই রবিচন্দ্রন অশ্বিন। শেষটাও হল তাঁরই হাতে। এই ইনিংসে ছ’টি উইকেট। ম্যাচে ১২। তিনি একা নন, পুরো সিরিজে কোনও এক জনের নাম নেওয়া মুশকিল। কোনও একজনের ব্যাটে বা বলে ভর করে এই সিরিজ জয় হয়নি ভারতের। বরং এমন অল-মেন সিরিজ বহুদিন দেখেনি ভারতীয় ক্রিকেট। কখনও বল হাতে অশ্বিন তো কখনও জাডেজা। কখনও ব্যাট হাতে মুরলী বিজয় তো কখনও বিরাট কোহালি। আর ব্যাটে বলে যিনি বাজিমাত করে গেলেন তিনি জয়ন্ত যাদব। কুম্বলে-বিরাটের এই সংসারে সাফল্য কথা বলে। দেখা যায় অদম্য এক বোঝাপড়ার ছবি। যার ফল এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন বিরাট কোহালি। তাঁর অনবদ্য ডাবল সেঞ্চুরি ফের আরও এক বার প্রমাণ করে দিল বিরাট-বিরাটই। তাঁকে যখন ম্যান অব দ্য ম্যাচ ঘোষণা করা হচ্ছে, গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানিয়েছে। হাততালিতে ফেটে পড়ে ওয়াংখেড়ে। সচিনের ঘরের মাঠে এসে এ ভাবে দাদাগিরি করে যাওয়া, বিরাটের অতি সমালোচকও প্রশংসা করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। ম্যাচ শেষে বিরাট বলেন, “এটা আমার কাছে একটি বিশেষ মুহূর্ত। যে ভাবে দর্শকরা দলের কঠিন মুহূর্তে আমাদের সমর্থন করেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।”

কোহালি এ্যান্ড টিম জয়ের পর। ছবি- রয়টার্স

রাজকোটে প্রথম টেস্টে ড্র দিয়ে শুরু করেছিলেন বিরাট কোহালিরা। প্রথম টেস্টের ভুল শুধরে দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই জয়ে ফেরা। সেই ধারা চলছেই। চতুর্থ টেস্টের চতুর্থ দিন ১৮২/৬ এ শেষ করেছিল ইংল্যান্ড। পঞ্চম দিন সকালে মাত্র ১৩ রানই যোগ করতে পেরেছিলেন কুকরা। চার ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই টসে হারের মুখ দেখতে হয়েছিল ভারতকে। কিন্তু টস হারকে প্রতিবন্ধকতা হতে দেয়নি টিম ইন্ডিয়া। তার সঙ্গে তো ছিলই দলে চোট আঘাতের সমস্যা। কেউ সুস্থ হয়ে ফিরছেন তো কেউ ছিটকে যাচ্ছেন দল থেকে। কিন্তু কোনও কিছুই প্রভাব ফেলতে পারেনি টিম ইন্ডিয়ার ড্রেসিংরুমে। বরং নবাগত জয়ন্ত যাদব হোক বা আট বছর জাতীয় দলে ফেরা পার্থিব পটেল সকলকেই দারুণভাবে মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে পুরো দল। এটাই আসলে টিম স্পিরিট। যার প্রভাব প্রতিমুহূর্তে দেখা গিয়েছে ভারতের খেলায়।

চতুর্থ টেস্টে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ৪০০ রানে অল-আউট হয়ে যান ব্রিটিশরা। যদিও ৪০০ রান নেহাৎই কম নয়। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটিংয়ের সামনে যেন এই রানটাও খুব নগন্য। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের প্রাপ্তি বলতে অভিষেকেই অধিনায়ক অ্যালেস্টার কুকের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে কেটন জেনিংসের সেঞ্চুরি। কুক আউট হয়েছিলেন ৪৬ রানে। এর পর কখনও মঈন আলি (৫০) তো কখনও বাটলার (৭৬)এর সঙ্গে জুটি বেঁধে ইংল্যান্ডের ইনিংসকে নিয়ে গিয়েছিলেন ভাল জায়গায়। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। বরং প্রথম ইনিংস থেকেই ভারতীয় বোলারদের দাপট ছিল দেখার মতো। একা অশ্বিনই তুলে নিয়েছিলেন ছ’টি উইকেট। চারটি উকেট জাডেজার। এই দুই বোলারের সৌজন্য অন্য কাউকে আর বিশেষ খাটতে হয়নি।

প্রথম ইনিংসে ভারতীয় বোলাররা যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই হালল ধরেন ব্যাটসম্যানরা। শুরু করেন মুরলী বিজয়। তাঁর নামের পাশে লেখা হয় ১৩৬ রান। চোট সারিয়ে ফিরে ভরসা দিতে পারেননি লোকেশ রাহুল। পূজারা ফেরেন ৪৭ রানে। এর পরটা ছিল ইতিহাস তৈরি হওয়ার সময়। ব্যাট হাতে বাজিমাত করেন বিরাট কোহালি। নামের পাশে লিখে নেন ২৩৫ রানের এক চোখ ধাঁধানো ইনিংস। ম্যাচের সেরাও তিনি। করুণ নায়ার (১৩), পার্থিব পটেল (১৫), অশ্বিন (০), জাডেজা (২৫)রা পর পর প্যাভেলিয়নে ফিরে যাওয়ার পরও যে ভারতীয় ইনিংসে রেকর্ড অপেক্ষা করেছিল তা কে জানত। ন’নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সেটাও করে দিলেন জয়ন্ত যাদব। প্রথম কোনও ভারতীয় এই সময় নেমে এই রান করলেন। বিজয়, বিরাট, জয়ন্তর হাত ধরে ভারতের ইনিংস শেষ হয়েছিল ৬৩১ রানে।

২৩১ রানের লক্ষ্যে চতুর্থ দিনের শেষে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই সমস্যায় পড়ে ইংল্যান্ড ইনিংস। জো রুটের ৭৭ ও বেয়ারস্টোর ৫১ ছাড়া আর বড় রান নেই ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে। এ বারও সেই অশ্বিন। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত ভুবনেশ্বর কুমার (১), জাডেজা (২) ও জয়ন্ত যাদব (১)এর। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-০ এগিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত কর ভারতীয় দল। এ বার চেন্নাইয়ে শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ ৪-০ করাই লক্ষ্য মেন ইন-ব্লুর।

আরও পড়ুন: কোহালি নিয়ে ইংরেজ বিদ্রুপের মধ্যে ‘নাম্বার নাইনের’ রূপকথা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India England Test
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE