Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বার্লিনের টিকিট পেতে গেলে রোনাল্ডো নির্ভরতা কাটাতে হবে

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে ঘরের মাঠে জিতল জুভেন্তাস। তবে একটা অ্যাওয়ে গোল করে খুব খারাপ অবস্থায় নেই রিয়ালও। কেন হারলেন রোনাল্ডোরা। কী করে জুভেন্তাস চমকে দিল রিয়ালকে। বিশ্লেষণে ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়..উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে ঘরের মাঠে জিতল জুভেন্তাস। তবে একটা অ্যাওয়ে গোল করে খুব খারাপ অবস্থায় নেই রিয়ালও। কেন হারলেন রোনাল্ডোরা। কী করে জুভেন্তাস চমকে দিল রিয়ালকে। বিশ্লেষণে ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়..

গোলের পর রোনাল্ডোর সেলিব্রেশন। —ফাইল চিত্র।

গোলের পর রোনাল্ডোর সেলিব্রেশন। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০৪:০৯
Share: Save:

জুভেন্তাস-২ (মোরাতা, তেভেজ-পেনাল্টি)

রিয়াল মাদ্রিদ ১ (রোনাল্ডো)

ইতালির অচেনা ফুটবল

ইতালীয় ক্লাব দল মানেই জানি আল্ট্রা ডিফেন্সিভ খেলা। প্রতিআক্রমণে গোল করার চেষ্টা করা। মঙ্গলবার রাতে জুভেন্তাসকে দেখে সেই ভুল ভাঙল। ভাল লাগল দেখে জুভেন্তাস আধুনিক ফুটবলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। বল দখলে রেখে অনেক বেশি ডিরেক্ট ফুটবল। গুটিয়ে না বসে থেকে রিয়ালকে ওদের হাফেই চেপে ধরে রাখা। ফাইনাল থার্ডে এসে শটের পর শট।

একা রোনাল্ডোতে হবে না

বেল থাক, রদ্রিগেজ থাক, রিয়াল মাদ্রিদকে জিততে হলে এখনও সেই ভরসা রাখতে হয় রোনাল্ডোর উপরেই। পিছিয়ে পড়ার পরে রিয়াল আক্রমণে ঝড় তুলল ঠিকই। তবে প্রতিটা মুভ তো রোনাল্ডোকে দিয়েই শেষ হল। অনেক পাস খেলে রোনাল্ডোর হেডেই তো সমতা ফেরাল রিয়াল। বেঞ্জিমা না থাকায় ওকে সেন্টার ফরোয়ার্ডের মতো খেলতে হয়েছে। নিজের পছন্দের পজিশনটা পায়নি। উইংয়ে থাকলে বা শ্যাডো স্ট্রাইকারে যেমন খেলা ছড়াতে পারে সেটা এ দিন পারেনি। কিন্তু বারবার উপরনীচ করে দলকে সাহায্য করেছে। প্রতিটা বলের জন্য লড়াই করেছে। কিন্তু বোঝা গেল রোনাল্ডো থাকলেও রিয়ালে সুয়ারেজ বা নেইমার নেই। রদ্রিগেজ একটু আধটু সাপোর্ট দিলেও পুরো চাপটাই পড়ছে রোনাল্ডোর উপর। আন্সেলোত্তির খুব তাড়াতাড়ি একটা রাস্তা বার করতে হবে।

ঘরের শত্রু বিভীষণ

কার্লোস তেভেজ ভাল খেলবে সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ ছিল না। তবে কী সুন্দর সাপোর্টটাই ওকে দিল আলভারো মোরাতা। জুভেন্তাস কোচ আলেগ্রির হাতে ফের্নান্দো লোরেন্তে অপশানটাও ছিল। কিন্তু প্রাক্তন রিয়াল ফুটবলারকেই নামিয়ে দিলেন মাঠে। আমার মনে হয় এটা একটা চাল ছিল। প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে এমনিতেই ফুটবলাররা তেতে থাকে। মনে আছে ১৯৭৬-এ মোহনবাগান ছাড়ার পরে যখন প্রথম বার ওদের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলাম তখন কোচকে আলাদা করে কিছু বলতে হয়নি। এমনিতেই তেতে ছিলাম। প্রমাণ করার ছিল, ‘‘আমাকে ছেড়ে ভুল করেছো দেখো।’’ সেই জিনিসটাই মোরাতা করল। ‘গোল পোচারের’ (বেশি নড়াচড়া না করে বক্সের আশেপাশে থেকেই গোল করা) মতো যেমন প্রথম গোলটা করল। ঠিক তেমনই যতক্ষণ খেলল রিয়াল রক্ষণকে নাজেহাল করল। ওর মুভমেন্ট যেমন সুন্দর। ঠিক তেমনই ক্ষিপ্র।

রিয়াল হারের তিন কাহন

জুভেন্তাস ভাল খেলার থেকেও রিয়াল খারাপ খেলেছে। ওদের হারের প্রধান কারণ ছিল মার্সেলো। গোটা ম্যাচটাই দেখলাম লেফট ব্যাকে খেলা মার্সেলো আর সেন্টার ব্যাক রাফায়েল ভারানের মধ্যে কতটা জায়গা ফাঁকা থাকছিল। সেই জিনিসটার ফায়দা তুলল জুভেন্তাস। দুই, সের্জিও র‌্যামোসকে মাঝমাঠে খেলানো। মানছি আন্সেলোত্তির হাতে লোক ছিল না। কিন্তু ফর্মেশন পাল্টে দিতে পারতেন। মাঝমাঠের সেই পেনিট্রেটিভ খেলাটা র‌্যামোসের মতো ডিফেন্ডারের থেকে আশা করা যায় না। ইস্কোকে তুলে হার্নান্দেজকে নামানোটাও ভুল ছিল। তিন, কার্লোস তেভেজ। এই বয়সেও কী খেলাটাই খেলল ও। ওয়ার্কলোড নিল যেমন। তেমন মাথা ঠান্ডা করে পেনাল্টিটাও মারল।


গোল করেও টিম হারল। জুভেন্তাসে হতাশ রোনাল্ডো।

বার্লিন যাবে কে

প্রথম পর্ব জুভেন্তাস জিতেছে ঠিকই কিন্তু অ্যাওয়ে গোল পাওয়ায় রিয়ালকে এগিয়ে রাখব। আর প্রথম পর্ব জিতে নেওয়ায় আমার মনে হয় আবার ইতালীয় দলের মতোই বের্নাবাওয়ে খেলবে রিয়াল। আল্ট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবলে চলে যেতে পারে। পির্লো, বুফোঁ, এভ্রা, তেভেজদের মতো বিশ্বমানের ফুটবলার থাকলেও জুভেন্তাসের গড় বয়স বেশি। সেই আন্দাজে রিয়ালে রদ্রিগেজ, ইস্কো, ক্রুজের মতো তরুণ ফুটবলাররা আছে। তবে রিয়ালকে একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। অতিরিক্ত রোনাল্ডো নির্ভরতা কাটাতে হবে। গ্যারেথ বেলকে এ দিনের মতো খেললে চলবে না।

রিয়াল হারের খলনায়ক সেই গ্যারেথ বেল

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর গোলও বাঁচাতে পারল না রিয়াল মাদ্রিদকে। আর ম্যাচ শেষে সেই চেনা ছবি ফিরল। ফের রিয়াল সমর্থকদের তোপের মুখে পড়তে হল ফুটবলারদের। বিশেষ করে সেই গ্যারেথ বেলকেই।

সাম্প্রতিক কালে রিয়াল সমর্থক হোক বা স্প্যানিশ মিডিয়া। রিয়াল হারলেই দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে ক্লাবের রেকর্ড সই করানো ওয়েলসের তারকাকে। এ দিনও বেলের খারাপ পারফরম্যান্সকেই রিয়াল মাদ্রিদের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসাবে দেখা হল। আয়ার্ল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার রয় কিন যেমন বলছেন, ‘‘ম্যাচটা দেখে মনে হল রিয়াল দশ জন ফুটবলার নিয়ে খেলছিল। বেলকে তো খুঁজেই পাওয়া গেল না।’’ জুভেন্তাসের ঘরের মাঠ ছাড়ার সময় ফের সমর্থকরা টিটকিরি দিল বেলকে ইঙ্গিত করে। যা বর্তমানে চেনা এক ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকী এক ওয়েবসাইটের করা পোলের রেজাল্টে ধরা পড়েছিল, বেলকে দলে দেখতে চান না সমর্থকরা। যদিও ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে আবার রিয়ালের ইতালীয় কোচ কার্লো আন্সেলোত্তি তাঁর দলের ব্রিটিশ তারকার পাশেই দাঁড়ালেন। ‘‘আমাদের গোটা দলটাই খারাপ খেলেছে। কিন্তু এখনও জেতার অনেক সুযোগ আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE