ডাক্তার বা মনোবিদের সাহায্য নিতে চান না। নিজেই লড়বেন জীবনের কঠিন লড়াই।
তিনি সৌরভ মণ্ডল।
সামনে রাখবেন সেই মানুষটাকে। যাঁর বলের আঘাতে ফিল হিউজ প্রাণ হারানোর পরও তিনি মাঠে ফিরতে পেরেছেন।
তিনি শন অ্যাবট।
‘‘এ বার বুঝতে পারছি মনের মধ্যে কোন সাইক্লোনের সঙ্গে যুদ্ধ করে শন অ্যাবটকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হচ্ছে,’’ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কাফেটেরিয়ায় বসে শুক্রবার দুপুরে বলছিলেন সৌরভ। বলছিলেন, ‘‘এটা আমার নিজের লড়াই। একান্ত নিজের। এই লড়াইয়ে ডাক্তার বা মনোবিদের সাহায্য নিলে আমি জীবনের কোনও যুদ্ধেই আর জিততে পারব না। সামনে ওই মানুষটাকে শুধু রাখব। জানি সবার সমর্থন, শুভেচ্ছা আছে। নিজেকে ফিরিয়ে আনতেই হবে। এই তো সোমবার থেকে প্র্যাকটিস। মে-র প্রথম সপ্তাহে ম্যাচ। মাঠে নামব। খেলবও।’’
পারবেন তো ?
বললেন, ‘‘পারতেই হবে। এখন থেকে প্রতিটা ম্যাচ শুধু অঙ্কিতের আত্মার শান্তির জন্য খেলতে চাই। প্রতিটি সাফল্য ওকে উৎসর্গ করতে হবে।’’ সেই মুহূর্তটা গত ক’দিন শুধুই তাড়িয়ে বেড়িয়েছে তাঁকে। চোখের জল মুছে বললেন, ‘‘জানি লড়াইটা কঠিন। তবু আমাকে মাঠে ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবেই।’’
সাহায্য চাইবেন আর এক জনের। তাঁর বেহালার প্রতিবেশী আর এক সৌরভের। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। যাঁকে প্রত্যাবর্তনের সম্রাট বলেন অনেকে। ‘‘জানি, মহারাজদার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলে এই যুদ্ধের আরও রসদ পাওয়া যাবে,’’ বললেন সৌরভ মণ্ডল।
দুর্ঘটনার দিন ইস্টবেঙ্গল কোচ প্রণব নন্দী পরিবেশ হাল্কা করার জন্যই মজা করে তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘এমনিতে তো তুই স্লো। দিনের সেরা স্প্রিন্টটা এমন মারলি, একটা মানুষ মেরে ফেললি!’’ দু’দিন পরই যে কথাগুলো এমন নির্মম সত্যি হয়ে উঠবে, ভাবতে পারেননি সৌরভ। সে দিনের ঘটনা বলতে গিয়ে গলা বুজে আসছিল তাঁর। তবু বললেন, ‘‘বলটা যেখানে পড়ছিল, অঙ্কিত ছিল সেখান থেকে প্রায় ৬০ গজ দূরে। আমি ৩৫ গজ মতো দূরে ছিলাম। ও যে দৌড়ে এসে ক্যাচ ধরার জন্য অমন ডাইভ দেবে, ভাবতে পারিনি। টেরও পাইনি যে ও দিক থেকে ও দৌড়ে আসছে। ভেবেছিলাম বলটা ধরে ছুড়ে দেব, যাতে একটা অন্তত রান বাঁচে। ও দৌড়চ্ছিল ক্যাচ নিতে। কেউই কল দিলাম না কেন, সেটাই আফসোস হচ্ছে।’’
হাসপাতালে অঙ্কিতের মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়েও ভাবতে পারেননি সৌরভ যে, তিনি বেঁচে নেই। ‘‘মনের অবস্থা এমন ছিল যে, ওর মৃতদেহের কাছে গিয়ে মনে হল ও যেন নিঃশ্বাস ফেলছে। চমকে উঠলাম। তার পরই মনিটরে চোখ পড়তে ভুলটা ভাঙল। কাঁদতে কাঁদতে ওকে বললাম, ভাই আমায় ক্ষমা করে দিস, এটা আমি চাইনি। মনে হচ্ছিল পায়ে জোর নেই। থরথর করে কাঁপছিলাম।’’
ঘটনাগুলো ভুলে নিজেকে যে ফিরিয়ে আনা যাবে না, বুঝতে পারছেন সৌরভ। বললেন, ‘‘অঙ্কিতের মৃত্যুর পর দু-তিন দিন পাগলের মতো ঘুরে বেড়িয়েছি। জানি, এই কষ্ট নিয়েই আমাকে সারা জীবন কাটাতে হবে। অঙ্কিতের বাবা-মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোটাই এখন আমার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় পাস করতেই হবে।’’
মে-র শুরুতে বিয়ে। জীবনের নতুন ইনিংস। পাশাপাশি মাঠে ফেরার লড়াইও।
ময়দানের সব চেয়ে বড় যোদ্ধার শিরস্ত্রাণ এখন সেই সৌরভের মাথা থেকে এই সৌরভের মাথায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy