(বাঁ দিকে) অভিনেত্রী কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেয়ের সঙ্গে কণীনিকা (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত
‘সোলো ট্রিপ’ সেরে কলকাতায় ফিরলেন অভিনেত্রী কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। লন্ডনে ‘সোলো ট্রিপে’ গিয়ে সেখান থেকে একগুচ্ছ ছবি ইনস্টাগ্রামে অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন অভিনেত্রী। বাঙালি মায়েদের একা বেড়াতে যেতে বিশেষ দেখা যায় না। সন্তান-পরিবার ছেড়ে একা একা বেড়াতে যাওয়া মানেই সমাজের চোখরাঙানির ভয় থাকে। অভিনেত্রী কি সে সবের তোয়াক্কা না করেই বেরিয়ে যেতে পারলেন? কেমন লাগল দিন কয়েক নিজের মতো করে সময় কাটিয়ে? কোনও ছবির প্রিমিয়ারের পার্টি হোক কিংবা টলিপাড়ার অন্য অনুষ্ঠান— মেয়ে হওয়ার পর একা খুব বেশি দেখা যায় না কণীনিকাকে। টলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, মেয়েকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারেন না কণীনিকা। মেয়েকে ছাড়া বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করার সময়েও কি মনখারাপ হয়েছিল তাঁর?
অভিনেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শুটিংয়ের কাজেই লন্ডনে গিয়েছিলেন তিনি। শুটিং শেষ করার পর তিন দিন লন্ডনের বিভিন্ন প্রান্তে একাই ঘুরে বেড়িয়েছেন। কণীনিকা বললেন, ‘‘বিয়ের আগে ২০১৫ সালে আমি এক বার ইউরোপে সোলো ট্রিপে গিয়েছিলাম। তবে বিয়ের পর কিংবা মেয়ে হওয়ার পর এই অভিজ্ঞতাটা যেন একেবারেই আলাদা। আবার যেন নিজের জীবনের ‘সিঙ্গলহুড’-এ ফিরে গেলাম। মেয়ে হওয়ার পর কিয়ার সব দায়িত্ব আমি নিজেই সামলেছি, কখনও কোনও আয়া রাখিনি। ও আমাকে ছাড়া একবারেই থাকতে পারে না। চার বছর পর কিয়াকে ছেড়ে একা কোথাও যাওয়া সহজ ছিল না। তবে শুটিং সেরে যখন তিন দিন একা ঘুরলাম, তখন কিন্তু মনে হল এই ছুটিটা আমার দরকার ছিল। মেয়ে আমি দু’জনেই ভিডিয়ো কলে কান্নাকাটি করতাম, তবুও মনে শান্তি ছিল, মায়ের কাছে আমার মেয়ে ভালই থাকবে।’’
মা হওয়ার পর সংসার সামলে, কাজ সামলে আর খুদেকে সামলে নিজের জন্য সময় বার করতে পারেন না মহিলারা। আর কেউ যদি খানিকটা সময় বার করেও নেন, তখনই শুরু হয়ে যায় সমাজের চোখরাঙানি। ছেলেমেয়েকে রেখে মা চলে গিয়েছেন ঘুরতে— এমন ঘটনা ঘটলেই বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন রকম বাঁকা কথার জোয়ার শুরু হয়। কণীনিকা বললেন, ‘‘এই বার ঘুরতে গিয়ে আমি আমার পছন্দের খাবারটা অর্ডার করে খেলাম। এই প্রথম বার আমাকে খাবারটা কারও সঙ্গে ভাগ করে নিতে হল না। এই অল্প ক’দিন আমি আগের কণীনিকার মতো জীবন উপভোগ করলাম। মা হওয়ার অনুভূতি আলাদা, সন্তানের সঙ্গে খাবার ভাগ করে নেওয়ার মুহূর্তেরও কোনও তুলনা হয় না, তবে নিজের জন্য খানিকটা সময় বার করে নেওয়ার মধ্যেও আলাদা সুখ আছে। আমার মনে হয় এই সুখটা সব মহিলারই মাঝেমধ্যে উপভোগ করা দরকার। মেয়ে হওয়ার পর আমার আনন্দ-মুহূর্ত বলতে, ওর সঙ্গে বাড়িতে সময় কাটানো। অন্য কোনও আনন্দ এখন আর আমার জীবনে নেই। সন্তান হওয়ার পর নিজের সত্তাটাই ভুলে যান মহিলারা। এ ভাবে চলতে থাকলে কিন্তু একটা সময়ের পর সন্তানের প্রতিচ্ছবি হয়েই থেকে যাব আমরা।’’
বিয়ের পর অনেক ছেলেই একা ঘুরতে যান। তবে মহিলাদের মধ্যে সেই তাগিদ কম চোখে পড়ে। কোথাও যেন আত্মবিশ্বাসের অভাব হয় অনেকের মধ্যেই। একা পারব তো? কোনও সমস্যা হবে না তো? মনের মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। কণীনিকা বললেন, ‘‘আমিও প্রথমটা ভয়ই পেয়েছিলাম। তবে খানিকটা সাহস জুগিয়ে মোবাইলের ভরসায় কখনও ট্রেন-বাসে চেপে, কখনও পায়ে হেঁটে দিব্যি ঘুরে বেড়িয়েছি। এই ছ’টা বছর বড্ড নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলাম অন্যের উপর। তবে লন্ডনের এই ট্রিপ করে বুঝলাম না, আমি এখনও একা নিজেকে সামলাতে পারি। এই অনুভূতিটা কিন্তু সব মহিলারই হওয়া জরুরি।’’
সংসার করা, খুদেকে সামলানো, পরিবারকে আগলে রাখা— এই সবের মাঝে মহিলারা নিজেকে গুরুত্ব দিতে ভুলে যান। সবটা সামলে নিজের ভাল লাগা, মন্দ লাগাকেও কিন্তু গুরুত্ব দিতে হবে। সমাজের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই নিজের জন্য সময় বার করতে হবে। কণীনিকা পেরেছেন, পারবেন আপনিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy