খাওয়াদাওয়াই কেবল নয়, ঘুমের পরিমাণ, শ্রম সব কিছুর উপরেই হজমপ্রক্রিয়া অনেকটা নির্ভর করে। ছবি: শাটারস্টক।
পুজো এ বার ভার্চুয়াল। এতে কোনও সন্দেহ নেই। বাড়িতে থাকুন বা বাইরে পুজোর সময় ভাল-মন্দ খাবার না খেলে জীবনটাই কেমন ফ্যাকাসে লাগে। এদিকে অম্বলের সমস্যা বা অ্যাসিডিটি নিয়ে ভোগান্তির ভয়ও আছে। তবে নিয়ম মেনে খাবার খেলে কিন্তু হাইপার-অ্যাসিডিটি বা বদহজমের সমস্যা নিয়ে কাতর হতে হবে না। গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট সুজয় মৈত্র জানান, সাধারণ মানুষ যাকে অ্যাসিডিটি বা অম্বল বলেন তা আসলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স।
সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, আমাদের দেশের প্রায় ৮ শতাংশ মানুষ অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যায় ভোগেন। এছাড়াও ডিওডেনাল আলসার, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস)-সহ অন্যান্য কিছু কারণেও মুখ টক হয়ে যেতে পারে। মূলত খাদ্যাভ্যাস ও বদলে যাওয়া জীবনযাত্রার বদলের ফলে এই সমস্যা হয় বলে জানালেন সুজয় মৈত্র।
ভোজনরসিক বাঙালি সব সময়ই ভালমন্দ খাবার ছুতো খোঁজে। ইচ্ছেমতো যখন তখন যা খুশি খেলে পাকস্থলীর ওপর তো তার প্রভাব পড়ে। যখন তখন খাবার খাওয়া, মশলাদার ও ভাজা খাবার, শরীরচর্চা না করা, সেডেন্টারি লাইফ অর্থাৎ নাগাড়ে চুপচাপ শুয়ে বসে থাকা আর খেয়ে যাওয়া অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি ওজন বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:ইভেরমেক্টিন কি করোনা মোকাবিলার নয়া তুরুপের তাস? কী বলছেন চিকিৎসকরা
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যখন খুশি প্যান্টোপ্রাজলজাতীয় ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়।
অতিরিক্ত মনের চাপ, ধুমপান, মদ্যপানেও অম্বলের ঝুঁকি বাড়ে। মাছ, মাংস বেশি খেলে এবং ফল বা সবজি কম খেলেও ঝুঁকি বাড়ে। অনেকে ইচ্ছে মতো ব্যথার ওষুধ ও অন্যান্য ওষুধ খান, তাদেরও হজম সংক্রান্ত গোলমালের সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা বেশি দেখা যায়। অ্যাসিডিটি হলে বেশিরভাগ মানুষই ভাবেন বুঝি বা অ্যান্টাসিড খেলে সমস্যা চলে যাবে।
আরও পড়ুন:বিপদসঙ্কেত! ‘কেরলের শিক্ষা না নিলে পুজোর পর করোনা-সুনামি’
ইন্টারন্যাল মেডিসেনের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল জানান, যখন তখন যা খুশি খাবার অভ্যাস, সিগারেট আর মদ্যপান করলে এই সমস্যা থেকেই যায়। অবশ্য এ সব কারণ ছাড়াও পেপটিক আলসার, হায়াটাস হার্নিয়া, হরমোনের তারতম্য বা পেটে টিউমার থাকলে গ্যাস-অম্বলের সম্ভাবনা থাকে। তাই লাগাতার কোনও কারণ ছাড়া এই সমস্যা চলতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত বললেন পুষ্পিতা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর কারণ ডিপ ফ্রাই অর্থাৎ ভাজা খাবার খাওয়া। আর যখন তখন খাওয়া। বিশেষ করে পুজোর সময় বাইরে গেলে কখনও আবার লোভনীয় খাবার দেখলেই মনটা পেটুক হয়ে পড়ে। সামনে খাবার দেখলে খিদে না পেলেও খেয়ে ফেললে ঝুঁকি থাকে।
অম্বলের সমস্যায় কারও কারও বমি পায়। ফাইল ছবি।
উৎসবের সময় মদ্যপানের হিড়িক, সঙ্গে সিগারেটেও মারাত্মক ক্ষতি হয়। সবই খাওয়া যেতে পারে, কিন্তু বুঝে খেতে হবে, পরামর্শ পুষ্পিতার। অম্বলের সমস্যা অনেকে বুঝতে পারেন না। মুখ টক হয়ে যাওয়া, গলা বুক জ্বালা, বদ হজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়াও অনেক সময় অম্বলের কারণে খুব মাথা ব্যথা করে, বমি পায়। আর সার্বিক ভাবে খুব শরীর খারাপ লাগে। যারা ঘন ঘন চা কফি পান করেন বা অ্যাসিডিটি কমাতে কোলা জাতীয় পানীয় খান, তাদের এই সমস্যা বেশি হয়, বললেন সুজয় মৈত্র। অতিরিক্ত নুন খেলে এবং খাবারে ফাইবার (শাক, সবজি, ফল) না থাকলেও প্রবণতা বাড়ে।
আরও পড়ুন:দ্রুত মেদ ঝরাতে চান? বিপাকক্রিয়ার হার বাড়াতে কী কী করবেন
কিছু নিয়ম মেনে চললে অম্বল নিয়ে কষ্ট পেতে হয় না। যেমন-পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান করা দরকার। বাড়িতে দিনভর শুয়ে থাকলে জল পানের কথা মনে থাকে না। বাইরে গেলে যেখানে সেখানে জল পান করবেন না। বিশেষত এই করোনা আবহে বাইরে জল বা খাবার খেতে গিয়ে মাস্ক খুলে বিপদে পড়ার ঝুঁকি থাকে। রেস্তরাঁর খাবার আনিয়ে খেলে গরম করে নিলে ভাল। চাইনিজ খাবার খেলে অবশ্যই আজিনামোটো বাদ দিয়ে খেতে হবে।
আরও পড়ুন:হার্ট ভাল রাখার অব্যর্থ দাওয়াই, কেন রোজ খেতেই হবে ‘নিরামিষ মাংস’
অম্বলের সমস্যা ছাড়াও চাইনিজ ফুড সিন্ড্রোম হয়ে মাথা ঝিম ঝিম করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন। এর মূল কারণ আজিনামোটো। হাইপার অ্যাসিডিটি হলে প্যান্টোপ্রাজল জাতীয় ওষুধ খাবেন না। এ ক্ষেত্রে কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। একই সঙ্গে মানসিক অবসাদ কমাতে হবে আর বুঝে খেতে হবে। অনেক সময় অ্যাসিডিটি গলা জ্বালা থেকে বুকে অস্বস্তি হতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy