প্রতীকী ছবি।
পেট নয়। সমস্যা এখন মূলত হার্ট নিয়ে বা ‘হৃদয়’ নিয়ে! এবং সেই সূত্রে সংক্রামক ব্যাধিকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে অসংক্রামক হরেক রোগ।
অন্তত সে-দিকেই ইঙ্গিত করছে চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক পত্রিকার একটি গবেষণাপত্র।
দু’দশক আগেও এ রাজ্যের বাসিন্দাদের মধ্যে পেটের রোগের দাপট ছিল সব চেয়ে বেশি। ২০১৬ সালে পৌঁছে সেটা হয়েছে হৃদ্রোগ। দেখা যাচ্ছে, গত বছরে মৃত্যুর প্রধান চারটি কারণ হৃদরোগ, স্ট্রোক, আত্মহত্যা এবং ‘রেসপিরেটরি ইনফেকশন’ বা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ।
আধুনিক জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস যে নানান রোগ ডেকে আনছে, সেই বিষয়ে চিকিৎসকেরা সতর্কবার্তা দিচ্ছিলেন। বিশেষ করে দাপট বাড়ছে হৃদ্রোগ, ডায়বিটিস, ক্যানসারের মতো অসংক্রামক রোগের। এ বার কার্যত সেই ইঙ্গিতে সিলমোহর দিল ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার টাকায় চলা এই গবেষণার প্রকাশিত তথ্য।
ওই গবেষণাপত্র থেকে জানা যাচ্ছে, এ রাজ্যে অপুষ্টি, জলবাহিত রোগের প্রকোপ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ১৯৯০-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী জীবনের ঝুঁকির বিভিন্ন কারণের তালিকায় প্রথম দিকে ছিল গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের অপুষ্টি এবং জলবাহিত নানা রোগ। কিন্তু ২০১৬ সালে দেখা গিয়েছে, প্রথম দু’টি ঝুঁকিই হল অস্বাস্থ্যকর খাবার ও উচ্চ রক্তচাপ। চিকিৎসকেরা জানান, হৃদ্রোগ বাড়াচ্ছে এই দু’টি ঝুঁকিই। এবং মহিলাদের তুলনায় পুরুষেরা হৃদ্যন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন বেশি।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে ওই গবেষণার কাজে যুক্ত ছিলেন ‘ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এর এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, ‘ডিসএবিলিটি অ্যাডজাস্টেড লাইফ ইয়ার্স’ এবং ‘ইয়ার্স অব লাইফ এফেক্টেড উইথ ডিসএবিলিটি’ দু’টিই বদলেছে। অর্থাৎ অসুখ নিয়ে জীবনযাপন এবং অসুখের জন্য জীবনের যতটা সময় গিয়েছে— এ রাজ্যে দু’টির চরিত্রই বদলে গিয়েছে। এবং যার জেরে ঘটছে ‘এপিডেমিওলজিক্যাল’ পরিবর্তন।
কোনও কোনও অঞ্চলে অবশ্য সংক্রামক রোগের দাপট একই রকম থেকে গিয়েছে। এবং সেই সব ব্যাধির অপ্রতিহত দাপটের মধ্যেই বাড়ছে হৃদ্রোগ আর স্ট্রোকের মতো অসংক্রামক রোগ। আক্রমণের জোড়া ফলা সক্রিয় বলে সেখানে বিপদ আরও বেশি। ‘‘ওই সব এলাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। কারণ, দেখা যাচ্ছে, একই রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় পুষ্টিকর খাবার মিলছে না। আবার কোথাও অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় তেলমশলাযুক্ত খাবার খাওয়ায় হৃদ্রোগের মতো সমস্যা বেশি হচ্ছে,’’ বলছেন সতীনাথবাবু।
ওই গবেষণাপত্রে প্রকাশিত তথ্য প্রসঙ্গে হৃদ্রোগ-চিকিৎসক সত্যজিৎ বসু জানান, যে-কোনও উন্নয়নশীল দেশেই এই পরিবর্তনটা চোখে প়ড়ছে। এ রাজ্যে হৃদ্রোগের অন্যতম কারণ স্বাস্থ্যকর খাবার না-খাওয়া। অতিরিক্ত তেলজাতীয় এবং আটা-ময়দার খাবার হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা ডেকে আনে। ‘‘হৃদ্রোগের চিকিৎসা যে শুধু শহরকেন্দ্রিক হতে পারে না, সর্বত্রই তার প্রয়োজন সমান— সেটাই আবার মনে করিয়ে দিল এই তথ্য। কলকাতার বাইরে জেলাগুলিতে হৃদ্রোগের চিকিৎসার বিশেষ সুযোগ নেই। তার জেরে হৃদ্রোগে প্রাণহানি বাড়ছে,’’ বলেন সত্যজিৎবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy