Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ওষুধের দোকানে ফর্সা হওয়ার ক্রিম কিনতে গেলে এ বার সাবধান!

ওষুধের দোকানে ফর্সা হওয়ার ক্রিম কিনতে গেলে সাবধান! কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নতুন ফরমান, বিনা প্রেসক্রিপশনে মুখে বা গায়ে মাখার কয়েকটি ক্রিম আর কেনা যাবে না।

স্টেরয়েড ক্রিমের শিকার। — নিজস্ব চিত্র

স্টেরয়েড ক্রিমের শিকার। — নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০২
Share: Save:

ওষুধের দোকানে ফর্সা হওয়ার ক্রিম কিনতে গেলে সাবধান! কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নতুন ফরমান, বিনা প্রেসক্রিপশনে মুখে বা গায়ে মাখার কয়েকটি ক্রিম আর কেনা যাবে না। নিষেধাজ্ঞার বেড়া, প্রধানত স্টেরয়েড-মেশানো ক্রিমের উপরেই। ছুটকো-ছাটকা কারণে ওষুধের দোকান থেকে ইচ্ছে মতো কিনে যা ব্যবহার করাটাই দস্তুর।

ত্বকবিশেষজ্ঞদের মতে, স্টেরয়েড মেশানো এই ধরনের ক্রিমের যথেচ্ছ প্রয়োগে গালে বা মুখে ত্বকের জটিল অসুখ দেখা দিচ্ছে। কারও মুখ পোড়া দাগে ভরপুর, কেউ রোদে বেরোলেই অসহ্য জ্বালায় অস্থির। কখনও বা হরমোনের গোলমাল হওয়ায় মেয়েদেরও দাড়িগোঁফ গজাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সচেতনতা ছড়াতে রীতিমতো টাস্কফোর্স গড়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন চালাচ্ছেন ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞেরা। এত দিনে তার সুফল মিলেছে।

কেন্দ্রীয় ড্রাগকন্ট্রোলারের দফতর সূত্রের খবর, গায়ে বা মুখে মাখার স্টেরয়েড ক্রিমগুলো এখন শিডিউল এইচ তালিকাভুক্ত। গত ১২ অগস্ট গেজেটে নোটিস দিয়ে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এর বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার তরফে আপত্তি ধোপে টেকেনি। ফলে, গেজেট প্রকাশের ৪৫ দিন বাদে এই সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয়ে গিয়েছে।

তার সঙ্গে সাধারণ মানুষদের সতর্ক করতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের এক কর্তার কথায়, ‘‘এ বার থেকে শিডিউল এইচ-ভুক্ত ওষুধ বা ক্রিমের মোড়ক ও টিউবে অন্তত ৫ মিলিমিটার চওড়া একটি লাল দাগ থাকবে। তাতে ‘শিডিউল্‌ড ড্রাগ’ শব্দটিও লেখা হবে।’’ শীঘ্রই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে বলে তাঁরা জানাচ্ছেন।

ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞেরা এত দিন স্টেরয়েড মেশানো ক্রিমের মোড়কে সিগারেটের প্যাকেটের মতো বিধিসম্মত সতর্কীকরণের দাবিতে সওয়াল করছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছ থেকে সাড়া মেলায় তাঁরা খুশি। একেবারে গোড়া থেকে এই আন্দোলনের শরিক তথা টাস্কফোর্সের প্রাক্তন সভাপতি ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞ কৌশিক লাহিড়ীর কথায়, ‘‘রোজ চেম্বারে দশ জন রোগীর মধ্যে চার জনই মুখে উল্টোপাল্টা ক্রিম মাখার উপসর্গ নিয়ে হাজির হন। কিছু কিছু ক্রিমের টিউবে ‘স্কিন লাইটেনিং’ কথাটাও লেখা থাকে। অনেকেই ফর্সা হতে এ সব মাখেন।’’ চিকিৎসকদের দাবি, এক বার স্টেরয়েড মেশানো ক্রিম মাখা অভ্যেস করলে ত্বক স্টেরয়েডের নেশা ধরে নেয়। ক্রিম মাখা বন্ধ করলেও জ্বালাযন্ত্রণা বাড়তে থাকে। ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষের কথায়, ‘‘শুধুমাত্র শ্বেতি, এগজিমার মতো ত্বকের অসুখে স্টেরয়েড মেশানো ক্রিম মুখে বা গায়ে মাখা যেতে পারে। সেটাও ডাক্তারের কথা শুনে অল্প-অল্প করে মাখতে হয়।’’

ত্বকরোগ, যৌন রোগ ও কুষ্ঠরোগ সংক্রান্ত ইন্ডিয়ান জার্নালে প্রকাশ, বছর-বছর এ ধরনের ক্রিমের পসার ১৬ শতাংশ করে বাড়ছে। স্টেরয়েড বিশিষ্ট ক্রিমের বাজার বছরে কম করে ১৪০০ কোটি টাকার। মুম্বইয়ের দীপক পারিখ, লখনউয়ের আবির সারস্বত, হায়দরাবাদের রাজিতা দামিশেট্টী বা কলকাতার অরিজিৎ কুণ্ডুদের অভিজ্ঞতা, অনেকেই বিউটি ক্লিনিক, হাতুড়ে ডাক্তার বা ওষুধের দোকানদারের পরামর্শে এ সব ক্রিম কেনেন। গালে মেচেতার কালচে ছোপ, ব্রণ, দাদ, খুসকির মতো খোসা ওঠার সমস্যায় এমন ক্রিমের ব্যবহার এখনও বহুল প্রচলিত। রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলারের দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এখন থেকে গায়ে বা মুখে মাখার স্টেরয়েড ক্রিমের অবাধ বিক্রি নিয়েও আমাদের নজরদারি চালাতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

skin disease Steroid cream Ministry of Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE