Advertisement
২১ মে ২০২৪
Covid-19

ডায়ারিয়াও হতে পারে করোনার অন্যতম উপসর্গ

এসিই-২ রিসেপটর নামে যে রিসেপটরের মাধ্যমে শরীরে পা রাখে করোনা, তার প্রাচুর্য যেমন শ্বাসনালীতে আছে, আছে পাকস্থলী, অন্ত্রতেও। কাজেই একের বদলে অন্যটি আক্রান্ত হতেই পারে।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২০ ১৮:৫৯
Share: Save:

জ্বর, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, গা-হাত-পা ব্যথা ইত্যাদি নেই মানেই করোনা নেই, এমন কিন্তু না-ও হতে পারে। চিনের বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, কিছুক্ষেত্রে পেটের গোলমালও হতে পারে রোগের একমাত্র উপসর্গ। কারণ এসিই-২ রিসেপটর নামে যে রিসেপটরের মাধ্যমে শরীরে পা রাখে করোনা, তার প্রাচুর্য যেমন শ্বাসনালীতে আছে, আছে পাকস্থলী, অন্ত্রতেও। কাজেই একের বদলে অন্যটি আক্রান্ত হতেই পারে।

আমাদের এই কলকাতাতেই ঘটেছে এমন। অন্তত তেমনই মত সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর। প্রথম দিকে যে সমস্ত করোনা রোগী ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে দু’-এক জনের জ্বর-কাশির বদলে উপসর্গ ছিল পেটের গোলমাল। ফলে তাঁরা বুঝতে পারেননি যে করোনা সংক্রমণ হয়েছে। দেরি হয়েছে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। বেড়েছে বিপদ। এখান থেকেই আসে চিন্তা। গরম ও বৃষ্টির এই আবহাওয়াতে মাঝেমধ্যে পেটের গোলমাল তো হতেই পারে। তার উপর লকডাউনে ঘরে বসে ভাল-মন্দ খাওয়া হচ্ছে বিস্তর। এবার তাতেও যদি মিশে থাকে করোনার ভয়, তবে তো বিপদের শেষ নেই!

বিপদ বলে বিপদ

শুনে নেওয়া যাক লেখক ও ইতিহাসবিদ ফার্ন রিডেল-এর অভিজ্ঞতার কথা। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মাসখানেক শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি। তবে রোগটা যে কোভিড তা জানতেই কেটে গিয়েছিল কিছু দিন। কারণ, প্রথম দিকে তাঁর ছিল কেবল লুজ মোশন, গা বমি আর পেটব্যথা। দু’-চার দিনে তা কমার বদলে বাড়তে লাগল। মনে হল ফুড পয়জনিং হয়েছে। ডাক্তার দেখানো হল। কয়েকদিনের মধ্যে অবস্থা যখন বেশ জটিল, জানা গেল কোভিড হয়েছে তাঁর। ১০-১১ দিনের মাথায় জলশূন্যতা মারাত্মক রূপ নিল। সঙ্গে ভীষণ মাত্রায় গা বমি, ক্লান্তি, গা-হাত-পা ব্যথা ও কাঁপুনি। দিনে ৬ লিটার জল এবং ওআরএস চলল। বিছানায় একেবারে মিশে গেলেন তিনি। লুজ মোশন রইল মোটামুটি যেমনকার তেমন। তারপর আস্তে আস্তে ২৬ দিনের মাথায় সেরে উঠলেন। কিন্তু ক্লান্তি রইল আরও দিন ১০-১৫।

তো, এই হল গ্যাস্ট্রো করোনা। ফুসফুসে ঢোকা জীবাণু বেরিয়ে গেলেও পেটে ঢুকলে সে চট করে বেরনোর নাম করে না। ভুগিয়ে ভুগিয়ে ক্লান্ত, অবসন্নকরে ফেলে।

গ্যাস্ট্রো করোনা

হ্যাঁ, করোনার আক্রমণে পেটের হাল যখন বেহাল হয়ে যায়, তাকে বলা হয় গ্যাস্ট্রো করোনা। তার স্বরূপ সম্বন্ধে উহানের ইউনিয়ন হাসপাতাল ও টাঙ্গি মেডিকেল কলেজের বিজ্ঞানীর জানিয়েছেন, অনেক সময়েই করোনা সংক্রমণের রেশ এসে পড়ে পেটে। স্রেফ পেটে। উপসর্গ, ওই আগে যেমন বলা হয়েছে, লুজ মোশন, দিনে কম করে বার চারেক, পেট ব্যথা, বমি, গা বমি। সঙ্গে ক্লান্তি, গা-হাত-পা ব্যথা। এ সব রোগীদের রোগ নির্ণয় হতে হতে বেশ খানিকটা সময় পার হয়ে যায়। কারণ মানুষ বুঝতেই পারেন না বদহজম হল না অন্য কিছু। তবে গ্যাস্ট্রো করোনার সুবিধে হল, এক্ষেত্রে সংক্রমণের প্রকোপ মোটের উপর কম থাকে। তবে ভোগান্তির সময়কাল থাকে বেশি।

“ভোগান্তি বেশি হয় সেটা ঠিক।” বললেন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। তাঁর কথায়:“কারণ, ফুসফুসের কষ্ট কমানোর জন্য অনেক রকম ব্যবস্থা নিই আমরা। অক্সিজেন দেওয়া হয়। নেবুলাইজারের মাধ্যমে কষ্ট কমানোর চেষ্টা করা হয়। ওষুধপত্রও দেওয়া হয় কিছু। কিন্তু পেটের জন্য বিশেষ কিছু করা যায় না। ভাইরাস থেকে হয়েছে, কাজেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার প্রশ্ন নেই। অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই তেমন কিছু। শুধু ওআরএস খেয়ে বা স্যালাইন চালিয়ে জলশূন্যতা কম রাখা হয়। সেজন্য শরীর থেকে ভাইরাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত কষ্ট থেকে যায়।’’

নিউ ইয়র্কের লেনক্স হিল হাসপাতালের এমার্জেন্সি মেডিসিনের চিকিৎসক রবার্ট গ্ল্যাটারের মতও তাই। তিনি জানিয়েছেন, “অনেকের ক্ষেত্রে পেটের গোলমাল দিয়ে রোগের সূত্রপাত হলেও পরে একে একে আসে অন্য উপসর্গ। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য এটাই থেকে যায় মূল উপসর্গ হিসেবে।” নিউ ইয়র্কের এক দল গবেষক ২০৬ জন মৃদু কোভিড রোগীর উপর সমীক্ষা করে দেখেছেন, এঁদের মধ্যে ৪৮ জনের স্রেফ পেটের সমস্যা ছিল, ৬৯ জনের পেটের সমস্যা দিয়ে শুরু হলেও পরে কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর আসে একে একে। আর ৮৯ জনের ছিল প্রচলিত উপসর্গই—কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর।

তবে কি মল থেকেও ভাইরাস ছড়ায়?

গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মল পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে। তাতে ভাইরাস আছে এবং তা সংক্রমণ ঘটাতে পারে। করোনার রোগী মলত্যাগ করার পর হাত ভাল করে পরিষ্কার না করলে সমস্যা হতে পারে। সমস্যা হতে পারে গ্রামেগঞ্জে, যেখানে এখনও যত্রতত্র মলত্যাগের অভ্যাস আছে।এই মল জলে বাহিত হয়ে খাবারে এসে মিশলে, যাকে বলে ফিকো-ওরাল রুট, সেই খাবার খেলে ও সেই জলে বাসনপত্র ধুলে সমস্যা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন, চিন-এর বিজ্ঞানীরা। বিপদ এড়াতে কয়েকটি সাবধানতার কথা বলেছেন তাঁরা। যেমন—

• টয়লেট থেকে এসে ও খাওয়ারআগে হাত ভাল করে সাবান-জলে ধুয়ে নেওয়া।

• কাঁচা শাক-সব্জি-ফল জলে খানিকক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর রগড়ে ধুয়ে নেওয়া।

• জীবাণুমুক্ত জল পান করা।

• কাঁচা শাক-সব্জি-ফল এখন না খাওয়াই ভাল। খেতে গেলে এমন সব্জি ও ফল খেতে হবে যা খোসা ছাড়িয়ে খেতে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid-19 Diarrhea Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE