Advertisement
০২ মে ২০২৪
শ্রীরামপুর ওয়ালশ

কিট বাড়ন্ত, রক্ত পাচ্ছেন না রোগী

দিয়াড়ার গোবিন্দপুরের চন্দ্রিমা পাত্র থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। বছর দশেকের মেয়েটিকে পনেরো দিন অন্তর রক্ত নিতে হয় শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে এসে। বৃহস্পতিবারেও এসেছিল। কিন্তু হাসপাতালের ব্লাড-ব্যাঙ্কে রক্ত মেলেনি। অগত্যা মেয়েকে নিয়ে মা মৌমিতাদেবীকে কলকাতায় ছুটতে হল।

প্রকাশ পাল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০১:২১
Share: Save:

দিয়াড়ার গোবিন্দপুরের চন্দ্রিমা পাত্র থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। বছর দশেকের মেয়েটিকে পনেরো দিন অন্তর রক্ত নিতে হয় শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে এসে। বৃহস্পতিবারেও এসেছিল। কিন্তু হাসপাতালের ব্লাড-ব্যাঙ্কে রক্ত মেলেনি। অগত্যা মেয়েকে নিয়ে মা মৌমিতাদেবীকে কলকাতায় ছুটতে হল।

একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হল নালিকুলের ডাঙা মহেশপুরের কিশোর জয় মালিকের বাবা কার্তিকবাবুকেও।

কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বেশ কিছু দিন ধরেই চন্দ্রিমা বা জয়ের মতো অনেককেই এখানে রক্ত নিতে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে। শ্রীরামপুর ওয়ালশের ব্লাড-ব্যাঙ্কে রক্ত থেকেও রোগীরা তা পাচ্ছেন না। কেননা, রক্তের এইচআইভি পরীক্ষার কিট নেই।

সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ত্রিদীপ মুস্তাফি। তিনি বলেন, ‘‘পুরনো কিট দিয়ে এখন আর ওই পরীক্ষা হচ্ছে না। এ জন্য অ্যালাইজা রিডার কিট এখনও আমাদের হাসপাতালে আসেনি। অন্য হাসপাতাল থেকে তা করাতে হবে। এতে কিছু সমস্যা হচ্ছে। আশা করছি, শীঘ্রই সমস্যা মিটবে।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও সমস্যার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কিটের জোগান কম রয়েছে। ঠিক হয়েছে, যত দিন জোগান স্বাভাবিক না হচ্ছে, যে হাসপাতালে কিট থাকবে সেখানে অন্য হাসপাতালের রক্ত পরীক্ষা করা হবে। ওয়ালশ হাসপাতালের রক্ত ইমামবাড়ায় পরীক্ষা করা হবে।’’ তবে, কিটের জোগান স্বাভাবিক না হলে অন্য হাসপাতালেও একই সমস্যা হতে পারে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন।

এমনিতে মাস দু’য়েক ধরে রক্তের সঙ্কটে ভুগেছে শ্রীরামপুরের হাসপাতালটি। গরমে সে ভাবে রক্তদান শিবির না হওয়ায় গত কয়েক মাসে রক্তের জোগান প্রয়োজনের নিরিখে অনেকটাই কম ছিল। মজুদ রক্ত দিয়ে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত বা হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে ভর্তি রোগীদের রক্তের চাহিদা কোনওরকমে মেটানো গিয়েছিল। কিন্তু অন্য হাসপাতাল বা নার্সিংহোম থেকে রোগীদের জন্য রক্ত নিতে এসে বহু মানুষকেই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। এখন অবশ্য সেই সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। গত দু’সপ্তাহে অন্তত চারটি রক্তদান শিবির হয়েছে। কিন্তু গোল বেধেছে কিট নিয়ে।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রতি সপ্তাহে গড়ে ২২০-২২৫ ইউনিট রক্ত প্রয়োজন হয়। শ্রীরামপুর মহকুমা তো বটেই, তা ছাড়াও চন্দননগর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকেও রোগীরা এখানে রক্ত নিতে আসেন। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর এবং সংলগ্ন নানা জায়গা থেকে গঙ্গা পেরিয়েও অনেকে আসেন। অন্তত এক সপ্তাহ ধরে অবশ্য রক্ত না নিয়েই সবাইকে ফিরে যাতে হচ্ছে। এইচআইভি কিট না থাকায় চলতি মাসের ৮ তারিখের পর থেকে রক্ত পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। ওই দিনের পর থেকে একাধিক শিবির হয়েছে। কিন্তু সেই সব শিবিরের শতাধিক ইউনিট রক্ত পড়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের আশঙ্কা, পরীক্ষা করতে বেশি দেরি হলে সংগৃহীত রক্ত ফেলে দিতে না হয়! কেননা, ৩৯ দিন পর্যন্ত রক্ত ব্লাড-ব্যাঙ্কে রাখা যায়। স্বাস্থ্যকর্তাদের আশ্বাস, কয়েক দিনের মধ্যেই সংগৃহীত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।

চুঁচুড়া ইমামবাড়া, চন্দননগর বা আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে অবশ্য এই সমস্যা নেই বলে সেখানকার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। চন্দননগর হাসপাতালের সুপার শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এইচআইভি কিট আমাদের এখানেও ছিল না। তবে, এখন সমস্যা মিটেছে।’’ ইমামবাড়া হাসপাতালের সুপার সুভাষ মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘এখানেও কিটের অভাব ছিল। তবে, এখন সমস্যা নেই। জোগান স্বাভাবিক।’’ ওই হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওয়ালশে রক্ত না থাকায় শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, বৈদ্যবাটি থেকেও অনেকে রক্ত নিতে আসছেন।’’

তবে, রোগীদের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে ওই বক্তব্য পুরোপুরি মেলেনি। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত জয় মালিকের বাবা কার্তিকবাবু বলেন, ‘‘বুধবার ওয়ালশে এসে রক্ত না নিয়ে ফিরে যাই। ছেলের বি-পজিটিভ রক্ত। চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে ফোন করতেই রক্ত নেই বলে ফোন রেখে দিল। আর চন্দননগরেও রক্ত পাওয়া যাবে না বলে এখানে শুনলাম। শেষে কলকাতায় সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে রক্ত নিয়ে আসি। তাতে পাঁচ ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় লাগল।’’ মৌমিতাদেবী বলেন, ‘‘ওয়ালশের ডাক্তারবাবুরা বললেন, কিট না থাকায় রক্ত পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। শুনলাম চন্দননগরেও নেই। কলকাতা থেকে রক্ত নিয়ে এলাম মেয়ের জন্য। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে আমাদের খুব অসুবিধা। কেননা, আমাদের তো নিয়মিতই এখানে আসতে হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE