Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Influenza

করোনার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে সাধারণ ফ্লু, বলছে পরিসংখ্যান

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য বলছে, শুধু এই দুই দেশেই নয়, গোটা পৃথিবী জুড়েই তীব্র ভাবে কমে গিয়েছে ফ্লুয়ের ঘটনা।

কমছে সাধারণ সর্দি-জ্বরের পরিমাণ।

কমছে সাধারণ সর্দি-জ্বরের পরিমাণ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:১৬
Share: Save:

করোনার কারণে বহু দেশ থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু। হালে আমেরিকায় নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এমনটাই বলছে পরিসংখ্যান। দেখা যাচ্ছে, চলতি মরসুমে যে সংখ্যক মানুষের ফ্লু হয়েছে, তা ১৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর প্রধান জন ম্যাককালে সম্প্রতি জানিয়েছেন, ১৮৮৯-৯০ সালে ফ্লু অতিমারির আগে ১৮৮৮ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ এতটা কমে গিয়েছিল। ‘‘তার পর থেকে গত ১৩০ বছরে ফ্লুয়ের পরিমাণ কখনও এতটা কমে যায়নি’’, বলছেন তিনি। সাধারণত জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে আমেরিকায় এই সর্দি-জ্বরের পরিমাণ সবচেয়ে বেড়ে যায়। কিন্তু চলতি মরসুমে তার পরিমাণ চোখে পড়ার মতো করে কমে গিয়েছে। প্রতি ১ লক্ষ মানুযের মধ্যে যেখানে ২৭ জন ফ্লুয়ে আক্রান্ত হতেন, সেখানে এ বার আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ১.১ জন। এই যদি আমেরিকার অবস্থা হয়, তা হলে তার পাশে ইংল্যান্ডের অবস্থা আরও স্পষ্ট। সেখানে সংখ্যাটা প্রায় শূন্যয় নেমে গিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য বলছে, শুধু এই দুই দেশেই নয়, গোটা পৃথিবী জুড়েই তীব্র ভাবে কমে গিয়েছে ফ্লুয়ের ঘটনা।

ভারতের ক্ষেত্রেও কি এমনটাই সত্যি? হাতে এমন কোনও তথ্য না থাকলেও, এমন সম্ভাবনা আছে, তা মানছেন এখানকার চিকিৎসকেরাও। চিকিৎসক যোগীরাজ রায়ের মতে, ‘‘অনেক সময়েই দেখা যায়, ফুসফুসে একটা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লে, অন্যটার কমে। এ ক্ষেত্রে তেমনও কিছু হয়ে থাকতে পারে।’’

ভাইরোলজিস্ট ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘করোনার কারণে মানুষ বেশ কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছেন। মাস্কের ব্যবহার তো আছেই, তার সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা বা দূরত্ব বজায় রাখার মতো বিষয়ও আছে। ফলে একের থেকে অন্যের সংক্রমণ ছড়ানোর হারও কমে গিয়েছে।’’ তাঁর মতে, এই কারণেই ফ্লুয়ের পরিমাণ কমে গেলেও যেতে পারে। ‘‘করোনা অনেক বেশি সংক্রামক বলে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরেও কিছু ক্ষেত্রে তার সংক্রমণ ঘটেছে। কিন্তু ফ্লুয়ের ভাইরাস অতটাও সংক্রামক নয়। ফলে তা সে ভাবে ছড়াতে পারেনি’’, বলছেন ইন্দ্রনীল। তা ছা়ড়া শরীরে করোনাভাইরাস প্রবেশ করলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তার মধ্যে ফ্লুয়ের ভাইরাস এসে ঢুকলে সেই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তাকে দ্রুত আটকে দিতে পারে বলেও মনে করছেন ইন্দ্রনীল।

প্রতি বছর ইংল্যান্ডে প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রাণ হারান এই ফ্লুয়ে আক্রান্ত হয়ে। এই শীতে করোনার উপরে ফ্লুয়ের সংক্রমণ হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যেতে পারত। তাই অনেক আগে থেকেই এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করছিল ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কিন্তু এখন দেখা গেল, পরিস্থিতি উল্টে ভালর দিকেই চলে গিয়েছে।

ভারতে এমন কিছু হচ্ছে কি না, তা জানার জন্য পরিসংখ্যান নেওয়া প্রয়োজন। সেই পরিসংখ্যান যত ক্ষণ না পাওয়া যাচ্ছে, তত ক্ষণ এ বিষয়ে কিছুই বলা যাবে না বলে মত যোগীরাজ রায়ের। ‘‘ফ্লুয়ের পরীক্ষা এখানে হয়। কিন্তু ব্যাপক হারে হয় না। সাধারণ সর্দিকাশি হলে ক’জনই বা ফ্লুয়ের পরীক্ষা করান। যত ক্ষণ না ভারতে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত পরিসংখ্যান নেওয়া হচ্ছে, তত ক্ষণ বলা সম্ভব নয়, এখানেও ফ্লু কমে গিয়েছে কি না’’, বলছেন তিনি।

আগামী দিনে আরও বেশি পরীক্ষা হলে বোঝা যাবে, এই কথা কত দূর সত্যি। করোনার কারণে সাধারণ ফ্লুও নিজের চরিত্র বদলাবে কি না, ক্রমশ হারিয়ে যাবে কি না— সে কথা বুঝতেও সময় লাগবে আরও কিছু মাস। এই ফ্লুয়ের উপরে টিকার প্রভাব পড়বে কি না, সে দিকেও নজর রাখবেন চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Influenza
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE