ছেলেরা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া। তারা বড় হতে সংসারের কাজও কমে এসেছে। সেই বিয়ের আগে শেষ জিনস পড়েছিলেন। আলসে শরীরে মেদ জমেছে বলে বেশ কয়েক বার সিদ্ধান্ত নিয়েও তা বাতিল করতে হয়েছে কৃষ্ণনগরের রাখি দে।
তবে এ বার আর বাতিল টাতিলের কোনও ব্যাপার নেই। সটান ভর্তি হয়ে গিয়েছেন জিমে। পুজোর মাস তিনেক আগেই। মেদও ঝড়িয়ে ফেলেছেন অনেকটাই। তিনি বলছেন, ‘‘কুড়ি বছর আগে জিন্স পড়েছি। মোটা হয়ে গিয়েছিলাম বলে পড়তে পারিনি। এ বার পুজোয় জিন্স-টপ পড়ে বেরব।’’ রাখি দে ব্যাতিক্রমী চরিত্র নন। নদিয়া-মুর্শিদাবাদে এ বার পুজোর আগে মহিলাদের জিমে ভর্তি হওয়ার ঢল নেমেছে। সেখানে কলেজ পড়ুয়াদের পাশাপাশি মাঝ বয়েসি স্কুল শিক্ষকরা রয়েছেন। পুজোর আগে শহরের মুখ বিজ্ঞাপনে ঢাকা পড়েছে। বহরমপুর-কৃষ্ণনগরে এখন বহুজাতিক পোশাক বিপণীর ছড়াছড়ি। কলেজ পড়ুয়া ডিম্পি পাল বলছেন, ‘‘ওয়েস্টার্ন পোশাক শুধু কিনলেই তো হবে না। তা শরীরের সঙ্গে মানানসই হতে হবে তো। তাই জিম জয়েন করেছি।’’
নাকাশিপাড়ার আজিজা খাতুন থেকে মুরাগাছার সুপর্ণা দাস সবাই ছুটছেন জিমে। কৃষ্ণনগরের ইলা বিশ্বাসের জিমে গত মাসে প্রায় পঁচিশ জন ছাত্রী ভর্তি হয়েছেন। শমিতা ঘোষের জিমে পনেরো জন। শমিতা বলেন ‘‘অধিকাংশেরই বয়স ১৮-৩৫।’’ তিনি জানান, ক্লাসঘর ছোট। জায়গা দেওয়া কঠিন হয়ে উঠছে। তবে পুজোর পর এদের প্রায় তিনভাগ ই হয়তো ছেড়ে চলে যাবেন। কয়েকবছর ধরে এমনটাই চলছে।
তারক সেন ত্রিশ বছর ধরে ছেলেদের জিম চালান। তার কথায়, ‘‘এ বছর বাহুবলি দেখে অনেকেই সিক্স প্যাকের আবদার নিয়ে জিমে আসছে। গত দু’মাসে প্রায় পঞ্চাশ জন নতুন ছেলে ভর্তি হয়েছেন জিমে। অনেকেই দশ বারো কেজি ওজন কমিয়েছেনও।’’ ছাত্রদের তাঁর আশ্বাস, ‘‘কৃষ্ণনগরের মূল উৎসব জগদ্ধাত্রী পুজো। তার আগে অনেকের সিক্স প্যাক তৈরি হয়ে যাবে।’’
শুধু ওজন কমানোই নয়। উল্টো ছবিও রয়েছে। কলেজ পড়ুয়া রাজেশ গড়াই বলেন, ‘‘আগে ভীষন রোগা ছিলাম। বন্ধুরা বিদ্রুপ করতো। জিম করে ১১ কেজি ওজন বাড়িয়েছি।’’ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আজিজা খাতুন কৃষ্ণনগরের একটি জিমে ভর্তি হয়েছেন কিছুদিন আগে। তাঁর কথায়, ‘‘উৎসব তো সবার। আমরা বন্ধুরা সবাই একসঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাই। নতুন পোশাক ও কিনি ইদ আর পুজো উপলক্ষে। সেগুলো যাতে মানানসই হয় তাই একটু জিমে আসা।’’ ছাত্রী থেকে শিক্ষিকা, প্রায় সকলেরই এখন ধ্যানজ্ঞান শরীরচর্চা। কলেজ শিক্ষিকা শিপ্রা সরকার তো বেজায় খুশি। গত এক মাস জিমে ভর্তি হয়ে ন’ কেজি ওজন কমিয়েছেন তিনি। সদ্য কলেজ পাশ করা দেবিকা দাস, সুকন্যা ঘোষেরা বলেন, ‘‘ব্যানার পোস্টারের মডেলদের মতো জিরো ফিগারের আশা করি না ঠিকই, তা বলে পুজোয় সাজবো, আর পোশাক শরীরের মানানসই হবে না সেটা হতে পারে? তাই জিমে ভর্তি হওয়া।
একই ছবি বহরমপুরেও। এখানে বিভিন্ন জিমের ট্রেনাররা জানান, মেয়েদের এই জিমে এসে শরীর চর্চার পুজোর মুখে অনেক বেড়েছে। বহরমপুরের রানীবাগান এলাকার একটি জিমে ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। ওই সংস্থার কর্ণধার অমিত বসু বলছেন, এমনিতে বহরমপুরে মেয়েদের জিমে ভর্তির পরিমাণ ভালো নয়। তবে পুজোর মুখে ছেলে মেয়ে ভর্তি বেড়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy