কদর: প্রবল গরমে চাহিদা বেড়েছে পুরনো এসি-রও। ক্রেতার বাড়িতে সেই মেশিন পৌঁছে দেওয়ার পথে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
বহুতলের আটতলার ঘরে দীর্ঘ সময় ধরে একটানা চলছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটি। রাত আটটা নাগাদ হঠাৎই সেটি থেকে ধোঁয়া ও আগুনের ফুলকি বেরোতে থাকে। তা বুঝে উঠে যন্ত্রটি বন্ধ করার আগেই ধোঁয়ায় ভরে যায় গোটা ঘর। তড়িঘড়ি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা নেমে আসতে পারলেও আগুন ছড়িয়ে যায় গোটা বাড়িতে। পরে দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
রবিবার রাতে ফুলবাগান থানা এলাকার মানিকতলা মেন রোডের একটি বহুতলে অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটির দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার দিকেই আঙুল উঠেছে। শুধু এই একটি ঘটনাই নয়, গত কয়েক দিনে শহরে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে প্রাথমিক কারণ হিসাবে উঠে এসেছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি। কখনও দীর্ঘক্ষণ ধরে চলতে থাকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থেকে আগুন লেগেছে আবাসিক ভবনে, কখনও আবার এসিতে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুনের ফুলকি দেখা গিয়েছে সরকারি অফিসে। শহরে তাপপ্রবাহের মধ্যেই এসি থেকে আগুন লাগার প্রবণতা কয়েক গুণ বেড়েছে বলে মনে করছেন দমকলকর্মীদের একাংশ। এর পিছনে এসির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়াকেই দায়ী করছেন তাঁদের অনেকে। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিতে একটানা দীর্ঘ সময় ধরে এই যন্ত্র ব্যবহারের ফলে তা গরম হয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আগুন লাগছে বলে মনে করছেন দমকলকর্মীরা।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মধ্যে সাধারণত এখন স্প্লিট এসি এবং উইন্ডো এসি ব্যবহার করা হয়। আবাসিক বাড়িতে স্প্লিট এসি এবং অফিস বা হাসপাতালগুলিতে সাধারণত উইন্ডো এসি-র ব্যবহারের প্রচলন বেশি। স্প্লিট এসির ক্ষেত্রে তার কুলিং ইউনিটটি থাকে বাইরে, উইন্ডো এসির ক্ষেত্রে তা কিছুটা ঘরের ভিতরে এবং কিছুটা অংশ বাইরে বেরিয়ে থাকে। এসি রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন কারণে এসিতে আগুন লাগতে পারে। তাই নিয়মিত এসির রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত এর দেখাশোনা করা না হলে যন্ত্রের ভিতরে ধুলো জমে যায়, যা আগুন লাগার জন্য সহায়ক। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, এসির ভিতরে এক ধরনের ফিল্টার থাকে, যার ভিতরে ধুলো আটকে যায়। ময়লাযুক্ত ফিল্টার এবং ইউনিট ফ্যান এসিকে স্বাভাবিক কাজ করতে বাধা দেয়। এসি রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত প্রভাব হালদারের কথায়, ‘‘ইউনিট ফ্যান এবং ফিল্টারে সাধারণত ধুলো আটকায়। এগুলি পরিষ্কার থাকলে এসি সহজেই স্বাভাবিক কাজ করতে পারবে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, বছরের পর বছর এগুলি পরিষ্কার না করেই এসি ব্যবহার করা হয়ে চলেছে। এর ফলে বহু ক্ষেত্রে যন্ত্রটি গরম হয়ে আগুন লেগে যায়।’’
শুধু ইউনিট ফ্যান বা ফিল্টার পরিষ্কারই যথেষ্ট নয়। এসির ক্ষেত্রে কম্প্রেসরের ভূমিকাও অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানাচ্ছেন মেরামতির সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা। ঘরের ভিতরের গরম বাতাস বাইরে বার করে দেওয়ার কাজটাই মূলত করে এই কম্প্রেসর। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, কম্প্রেসরের ভিতরে একটি ‘ফিন’ থাকে। দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করার ফলে সেই ফিনে ধুলো জমে তার কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। দীর্ঘ সময় ধরে এসি চালানোর পরেও যদি ঘর ঠান্ডা না হয়, তা হলে ধরে দিতে হবে যে, কম্প্রেসরটি ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। দীর্ঘ দিন ধরে এই অবস্থায় এসি চালালে আগুন লাগার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায় বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা।
দমকলের এক কর্তা যদিও বলেন, ‘‘এসির রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, ঠিক গুণমানের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার না করার মতো বিভিন্ন কারণ নানা সময়ে আগুন লাগার কারণ হিসাবে তদন্তে উঠে আসছে। এই ধরনের গাফিলতি এড়ানোর দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে এসির রক্ষণাবেক্ষণে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy