—প্রতীকী চিত্র।
পাঁচ বছর আগে নয়াদিল্লিতে জ্যোতি সিংহের মতো প্রাণ হারাতে হয়নি তাঁকে। কিন্তু খাস কলকাতায় ভরদুপুরে ২৭ বছরের এক তরুণীকে ডেকে নিয়ে গিয়ে যে ভাবে পরপর ছ’জন মিলে তাঁকে ধর্ষণ করেছে, বীভৎসতার নিরিখে তা-ও নিছকই কম বলা যাচ্ছে না। এমনটাই মনে করছেন মনোবিদ বা মনোরোগের চিকিৎসকদের একাংশ। এবং মেয়েটির মুখ বেঁধে, ছুরি দেখিয়ে নির্যাতনে ১৫-১৬ বছরের তিন কিশোরের জড়িত থাকার ঘটনা অনিবার্য ভাবেই উস্কে দিচ্ছে ২০১২ সালের দিল্লির সেই ঘটনা।
পুলিশের একাংশও বলছে, শুধু ধর্ষণ নয়, ইদানীং নানা অপরাধেই নাবালকদের জড়িয়ে পড়ার কথা জানা যাচ্ছে। শহর এবং শহরতলির বিভিন্ন পাড়াতেও নানা কুকর্মে নাবালকদের জড়িত থাকার অভিযোগ মিলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি নাবালকদের আক্রোশ যেন বেশি। কিন্তু কেন?
এর পিছনে আপাত ভাবে আর্থ-সামাজিক পরিবেশের প্রভাব দেখছেন সমাজতত্ত্বের শিক্ষকেরা। তাঁদের মতে, কিছু ক্ষেত্রে কোনও কিশোর কী ধরনের পরিবেশে বেড়ে উঠছে, তার প্রভাবও দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কিশোরের পরিবারে হয়তো মহিলাদের উপরে অত্যাচার বা অপমানের ঘটনা লাগাতার ঘটে। সে সব দেখতে দেখতেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি এমন আচরণ স্বাভাবিক বলে ধরে নেয় তারা। এদের মধ্যে অনেকেই নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
নাবালকদের এই ধরনের অপরাধে বারবার জড়িয়ে পড়া নিয়ে মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের ব্যাখ্যা, বর্তমান সময়ে মূল্যবোধ ক্ষয়ে যাচ্ছে। তাৎক্ষণিক তৃপ্তির খোঁজে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে মানুষ। এমন ঘটনায় অনেক সময়েই দোষীরা পার পেয়ে যাওয়ায় আরও উৎসাহ পাচ্ছে।
কলকাতার ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’র শিক্ষক-চিকিৎসক সুজিত সরখেলের মতে, এটাকে বলা হয় ‘অ্যান্টি-সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার’। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকেই এই সমস্যাটি স্পষ্ট ভাবে ফুটে ওঠে। মাদকাসক্ত হলে এই ধরনের প্রবণতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তারাতলা এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, অভিযুক্তেরা ওই এলাকায় বিভিন্ন কুকর্মের পাশাপাশি মাদকের নেশাতেও অভ্যস্ত।
মনোরোগের চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম আবার অপ্রাপ্তবয়স্ক কারও কোনও প্রবণতাকে কোনও ধরনের ‘ডিসঅর্ডার’-এর তকমা দেওয়ার পক্ষপাতী নন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, কোনও কোনও কিশোর স্বভাবগত ভাবে সামাজিক মেলামেশায় তত দড় নয়। আর পাঁচ জন সমবয়সীর মতো তারা হয়তো সে ভাবে মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারে না। জয়রঞ্জনের কথায়, ‘‘চেপে থাকা প্রবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও অনেকে ধর্ষণে জড়িয়ে পড়ে।’’
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ কুন্ডুও বলছেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে সমাজের কোনও অংশে ঘা খাওয়া কিশোর-তরুণেরাও নিষ্ঠুর হয়ে উঠতে পারে। ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তির জেরেও বড়সড় অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে তারা।’’ তারাতলার ঘটনাটির প্রেক্ষিতে আর একটি দিককেও গুরুত্ব দিচ্ছেন জয়রঞ্জনবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘মাথায় রাখতে হবে, এটি গণধর্ষণের ঘটনা। দল বেঁধে কুকাজের সময়েও অনেকে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ ক্ষেত্রেও ঘটনাটির খুঁটিনাটি দেখলে সবটা বোঝা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy