Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

এখনও চালু হল না মেয়ো হাসপাতাল

খাতায়-কলমে উদ্বোধন হয়েছে গত ১ জানুয়ারি। সেজেগুজে তৈরি মেয়ো হাসপাতালের দু’টি তল। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার প্রায় তিন মাস বাদেও শুরু হল না চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কাজ। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, শীঘ্রই মেয়ো হাসপাতালের পরিষেবা শুরু হবে। স্ট্র্যান্ড রোডে ওই হাসপাতালের সামনে নীল-সাদা বোর্ডে ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায়’ ১ জানুয়ারি থেকে পরিষেবা শুরুর কথা ঘোষণা করে ফলকও লাগানো হয়।

মেয়ো হাসপাতাল, এখন যেমন। — নিজস্ব চিত্র।

মেয়ো হাসপাতাল, এখন যেমন। — নিজস্ব চিত্র।

অশোক সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৯
Share: Save:

খাতায়-কলমে উদ্বোধন হয়েছে গত ১ জানুয়ারি। সেজেগুজে তৈরি মেয়ো হাসপাতালের দু’টি তল। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার প্রায় তিন মাস বাদেও শুরু হল না চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কাজ।

মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, শীঘ্রই মেয়ো হাসপাতালের পরিষেবা শুরু হবে। স্ট্র্যান্ড রোডে ওই হাসপাতালের সামনে নীল-সাদা বোর্ডে ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায়’ ১ জানুয়ারি থেকে পরিষেবা শুরুর কথা ঘোষণা করে ফলকও লাগানো হয়। মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক, ফিজিওথেরাপি, চক্ষু এবং ইএনটি— মেডিক্যাল কলেজের এই ক’টি বিভাগের আউটডোর খোলার কথাও লেখা হয়েছিল ওই ফলকে। কিন্তু রবিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, প্রথম দু’টি তল সেজেগুজে প্রস্তুত। তবে, উপরের তিনটি তলে পুরনো কাঠামোই সার।

১৮৩৫ সালে এশিয়ার প্রথম মেডিক্যাল কলেজ চালুর প্রায় ৪৩ বছর আগে হাওড়া সেতুর কাছে তৈরি হয়েছিল মেয়ো হাসপাতাল। গোড়ায় এটির খ্যাতি ছিল মূলত চোখের চিকিত্‌সার জন্য। এক সময়ে শহরের অন্যতম ব্যস্ত এই চিকিত্‌সাকেন্দ্র দু’দশকের উপরে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।

হাসপাতালের জরাজীর্ণ পুরনো ভবনটি ভেঙে বছর আটেক আগে কেএমডিএ-কে দিয়ে নয়া ছ’তলা ভবনের কাঠামো তৈরি করায় তৎকালীন রাজ্য সরকার। বাম-আমলের শেষ দিকে মেয়ো হাসপাতালে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। ২০১০-এর ৩০ জুলাই কলেজের তত্‌কালীন অধ্যক্ষ উত্‌পল দত্ত সাংবাদিকদের জানান, “মেডিক্যাল কলেজের কিছু বহির্বিভাগ মেয়ো হাসপাতালের প্রথম দু’টি তলে স্থানান্তরিত হবে।” সেই সঙ্গেই ঘোষণা হয়েছিল হাসপাতালের তিনতলায় ডায়ালিসিস ইউনিট এবং উপরের দু’টি তলায় সাধারণ শল্য, স্ত্রীরোগ ও শিশু চিকিত্‌সা বিভাগ হবে। ৩০০ শয্যার হাসপাতালের রূপরেখাও তৈরি হয়েছিল ওই সময়েই।

তা হলে কেন বাম আমলেই পরিষেবা চালু করা গেল না? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, “২০০৪-এর গোড়ায় তত্‌কালীন মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্যসচিব এবং স্থানীয় বিধায়ককে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করে রাজ্য সরকার। বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করে কমিটি। কিন্তু সেটি বাস্তবায়িত করা যায়নি।”

প্রাক্তন স্থানীয় বিধায়ক তথা সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ সুধাংশু শীল বলেন, “প্রশাসনিক নানা সমস্যা ছিল। এক ব্যক্তি ওই হাসপাতালটির মালিক বলেও দাবি করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে আপস-মীমাংসার পর বকেয়া ব্যাঙ্কঋণ এবং সংশ্লিষ্ট নানা সমস্যা দূর করি আমরা। কিন্তু মেয়ো-র নবরূপ দেওয়ার মুখে সরকার বদলে গেল।” তাঁর অভিযোগ, বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই চালু না হয়ে পড়ে আছে মেয়ো হাসপাতাল।

আইনি জটিলতা মিটে গিয়েছে। তা হলে কেন চালু হচ্ছে না মেয়ো-র পরিষেবা? স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সুশান্তকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এত বড় কাজ তো রাতারাতি করা সম্ভব হয় না। তবে হয়ে যাবে।” তা হলে কেন প্রবেশপথে নোটিস লাগিয়ে ১ জানুয়ারি হাসপাতাল চালুর কথা লেখা হয়েছিল? তার সদুত্তর মেলেনি। স্বাস্থ্য-অধিকর্তা শুধু বলেন, “সরকারি রীতি, টেন্ডার এ সব প্রক্রিয়া আছে। আশা করছি, মাস দুয়েকে এগুলো হয়ে যাবে।” মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক পদস্থ অফিসার অবশ্য বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি খুব শীঘ্রই ন্যূনতম কিছু পরীক্ষা ওখানে চালু করতে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE