অর্জুন ভরদ্বাজ। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র। বয়স ২৩। সোমবার মুম্বইয়ের একটি হোটেলের কুড়িতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে। জানা গিয়েছে, মানসিক অবসাদে ভুগছিল অর্জুন।
অর্জুনের মতোই অনেক তরতাজা মানুষের আত্মহত্যার কাহিনি এখন প্রায়শই শোনা যাচ্ছে। এ দেশেই শুধু নয়, এখানকার গণ্ডি ছাড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দুনিয়ার নানা প্রান্তে। পরিসংখ্যান দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু)।
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গোটা দুনিয়া জুড়েই মানসিক অবসাদগ্রস্ত মানুষজনের সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছরে প্রকাশিত এক রিপোর্টে এমন আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে হু। সংস্থার ডিরেক্টর, মার্গারেট চ্যান বলেন, “মনোস্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। এই পরিসংখ্যান দুনিয়ার সব দেশের জন্যই আশঙ্কাজনক। ফলে এই বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।”
আরও পড়ুন
আপনার বয়স কত? জেনে নিন সুস্থ থাকতে কতটা ঘুমের প্রয়োজন
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী ২০৩০-এর মধ্যে বিশ্বে প্রতিবন্ধকতার অন্যতম কারণ হয়ে উঠবে মানসিক অবসাদ। মনোস্বাস্থ্যের অবনতির জন্য ধীরে ধীরে বাড়ছে আত্মহত্যার মতো ঘটনা। সারা বিশ্বের গরিব ও মধ্যবিত্ত আয়ের দেশগুলিই এতে সবচেয়ে বেশি করে ভুগছে। বিদেশেই নয়, ঘরের ছবিটাও কম আশঙ্কার নয়। গত ২০১৫-র পরিসংখ্যান তুলে ধরে হু জানিয়েছে, এ দেশে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ অবসাদ ভোগেন। সেই সঙ্গে উৎকণ্ঠাজনিত সমস্যায় ভুগছেন আরও তিন কোটি ভারতীয়।
এ নিয়ে চিন্তিত কেন্দ্রীয় সরকারও। মনোস্বাস্থ্য নিয়ে আমূল সস্কারের ইঙ্গিত দিয়ে গত মাসেই সংসদে পাশ হয়ে গিয়েছে নতুন মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা বিল, ২০১৬। সেই আইন কার্যকর হলে, আত্মহত্যা আর অপরাধ হিসাবে গন্য হবে না।
আরও পড়ুন
ব্রিটিশ বাচ্চারাই সবচেয়ে বেশি কাঁদে! কেন?
• মানসিক অবসাদ কী?
মানসিক অবসাদগ্রস্ত মানুষেরা দীর্ঘ সময় ধরেই মনোকষ্টে ভোগেন। তাতে বদল ঘটে তাঁদের আচার-আচরণ, অনুভূতিতে। দৈনন্দিন জীবনে কাজকর্মেও ব্যাঘাত ঘটায় সার্বিক ভাবে ভাল থাকা আর হয়ে ওঠে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক প্রজন্মের জীবনযাত্রার তাল অতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। তাতে প্রভাব পড়ছে সার্বিক স্বাস্থ্যে। অস্বাস্থ্যকর খাবারদাবার থেকে শুরু করে অনিয়মিত জীবনযাপনও এর জন্য দায়ী।
মানসিক অবসাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে বেশ কয়েকটি অভ্যাসে বদল ঘটানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কী কী কারণে অবসাদ বাড়তে পারে?
• একসঙ্গে অতিরিক্ত খাওয়া
খিদে চেপে রেখে অসময়ে বেশি পরিমাণ খাওয়ার অভ্যাস বিপদ ডেকে আনছে অনেকের। এতে শরীরে যেমন মেদ জমার পাশাপাশি মনেও বিষাদের ভার চাপছে। ওজন বাড়ার দরুণ হীনমন্যতায় ভুগছেন তাঁরা। তাতেও মানসিক ভাবে অবসাদ বাড়ছে।
• চাপের কাছে নতিস্বীকার করা
দৈনন্দিন জীবনে স্ট্রেস বাড়ার ফলেও প্রভাব পড়ছে মনোস্বাস্থ্যে। সামান্য স্ট্রেস ভাল হলেও অতিরিক্ত চাপে ভেঙে পড়ছেন অনেকেই। স্ট্রেস বাড়ায় শরীরের সেরোটনিন নামে এক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ কম হচ্ছে। আর তাতে অবসাদ বাড়ছে। কারণ, হ্যাপিনেস হরমোন নামে বেশি পরিচিত এই রাসায়নিক আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার পিছনেও অনেকাংশে দায়ী।
• ইন্টারনেট আসক্তি
কানাডার ম্যাকমাস্টার ইউনিভারসিটির এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মানসিক অবসাদ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। নেট দুনিয়ার আসক্তির ফলে প্রভাব পড়ছে দৈনন্দিন কাজকর্মে। ফলে সামাজিক পরিবেশ থেকেও সরে আসছেন তাঁরা।
• দিনের বেলা ঝিমোতে থাকা
মানসিক অবসাদের একটি অন্যতম কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাব। অবসাদগ্রস্ত মানুষেরা দিনের বেলাতেও ঝিমোতে থাকেন। এর পিছনে রয়েছে রাতে পর্যাপ্ত না ঘুমোনো বা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকা।
• শারীরিক কসরত না করা
কাজের চাপেই হোক বা অনীহার কারণে, শারীরিক কসরত না করলেও তাতে বাড়তে পারে মানসিক অবসাদ।
• তেল-মশলাযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া
অনেকেই জাঙ্ক ফুড বা অন্যান্য ফ্যাটি ফুড এড়িয়ে থাকতে পারেন না। হাই-ফ্যাট ডায়েটের ফলে আচার-আচরণেও বদল ঘটতে পারে। এমনকী মস্তিষ্কের প্রদাহও হতে পারে। তাতে বাড়তে পারে অবসাদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy