Advertisement
২১ মে ২০২৪
Ministry of Health & Family Welfare

ধর্ষিতাদের ‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’ বন্ধে কর্মশালা স্বাস্থ্য ভবনে

ধর্ষিতাদের মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষায় ‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ করার যৌক্তিকতা ও নতুন কী পদ্ধতিতে তাঁদের পরীক্ষা করা হবে, সে বিষয়ে বুধবার এক কর্মশালা হল স্বাস্থ্য ভবনে।

‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ করার যৌক্তিকতা ও নতুন কী পদ্ধতিতে তাঁদের পরীক্ষা করা হবে, সে বিষয়ে বুধবার এক কর্মশালা হল স্বাস্থ্য ভবনে।

‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ করার যৌক্তিকতা ও নতুন কী পদ্ধতিতে তাঁদের পরীক্ষা করা হবে, সে বিষয়ে বুধবার এক কর্মশালা হল স্বাস্থ্য ভবনে। —ফাইল ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৪৮
Share: Save:

ধর্ষণের প্রমাণ পেতে ধর্ষিতার ‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’ নিয়ে বিতর্ক বহু পুরনো। ওই পরীক্ষা মহিলাদের পক্ষে মর্যাদাহানিকর বলে মন্তব্য করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তার পরেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ওই পরীক্ষা হয়েছে। একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, ‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’ না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এ বার রাজ্যেও যাতে সেই নিয়ম মানা হয়, তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ করল স্বাস্থ্য দফতর।

ধর্ষিতাদের মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষায় ‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ করার যৌক্তিকতা ও নতুন কী পদ্ধতিতে তাঁদের পরীক্ষা করা হবে, সে বিষয়ে বুধবার এক কর্মশালা হল স্বাস্থ্য ভবনে। প্রতিটি জেলা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্ত্রীরোগ বিভাগের এক জন করে চিকিৎসক, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা, ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ এবং প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, কেউ এই ধরনের পরীক্ষা করলে তাঁকে অসদাচরণের দায়ে পড়তে হবে। কর্মশালায় জানানো হয়, ‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’-এ বোঝা যায় না, সংশ্লিষ্ট মহিলা ধর্ষিতা কি না। বরং ততে অস্বস্তি বোধ করেন সেই মহিলা। যাতে তাঁর মানসিক যন্ত্রণা বেড়ে যায়।

ঝাড়খণ্ডের একটি ধর্ষণের মামলায় নিম্ন আদালতে অভিযুক্তেরা দোষী সাব্যস্ত হলেও পরে ‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’ রিপোর্টের ভিত্তিতে খালাস পেয়ে যান। দুই সন্তানের মা তথা ধর্ষিতার পক্ষ নিয়ে ঝাড়খণ্ড সরকার সুপ্রিম কোর্টে যায়। তখনই সর্বোচ্চ আদালত উপলব্ধি করে, ধর্ষণের মামলায় ‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’ অপ্রয়োজনীয়। আর সেই পরীক্ষার রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে অনেক অপরাধী মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। ‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে শীর্ষ আদালত। এ দিনের প্রশিক্ষক তথা আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সোমনাথ দাস বলেন, ‘‘টু-ফিঙ্গার টেস্টের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এই পরীক্ষায় ধর্ষণের অভিযোগ সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায় না। শুধু বোঝা যায়, ওই মহিলা যৌন মিলনে অভ্যস্ত কি না।’’ তিনি জানান, ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রক একটি এসওপি জারি করলেও তার প্রচার বা বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ তখন ওই পদ্ধতি যে নিষিদ্ধ, তা জোর দিয়ে বলা ছিল না।

সোমনাথ বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে এই পরীক্ষার রিপোর্টের বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়। মনে রাখতে হবে, নির্যাতিতাকে মানসিক ভাবে সুস্থ রেখে, সুবিচার পেতে সহযোগিতা করতে হবে। তাই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় জোর দেওয়া প্রয়োজন।’’ কর্মশালায় শেখানো হয়, ধর্ষিতার যৌনাঙ্গ-সহ অন্যান্য অঙ্গের ক্ষত কী ভাবে পরীক্ষা করতে হবে। নির্যাতিতার শরীর থেকে অভিযুক্তের দেহরসের নমুনা সংগ্রহ কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা-ও জানানো হয়। স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যও উপস্থিত ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE