Advertisement
০২ মে ২০২৪

সহজে সিঁড়ি ভাঙতে হুইলচেয়ার পড়ুয়াদের

কোন প্রযুক্তিতে চলবে এই নতুন হুইলচেয়ার? শ্রমণা জানাচ্ছেন, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এই হুইলচেয়ার তৈরি করা হয়েছে। সিঁড়ির সামনে গেলে চেয়ারে বসেই সেই সিঁড়ি টপকাতে পারবেন প্রতিবন্ধী মানুষেরা।

প্রদর্শনীতে হুইলচেয়ারটির মডেল দেখাচ্ছেন পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

প্রদর্শনীতে হুইলচেয়ারটির মডেল দেখাচ্ছেন পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৭ ০১:৫৮
Share: Save:

সিনেমার প্রতিবন্ধী চরিত্র হুইলচেয়ার নিয়ে এগোতে গিয়ে আটকে গিয়েছিলেন সিঁড়ির সামনে। তার পরেই স্বগতোক্তির স্বরে সংলাপ ছিল, ‘ওহ! নট স্টেয়ার্স এগেন!’’ হলিউডি সিনেমা ‘দ্য প্লেয়ার্স’-এর এই সংলাপই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শ্রমণা চক্রবর্তীর মাথায় উস্কে দিয়েছিল নতুন ধরনের হুইলচেয়ারের ভাবনা। তা থেকেই তিন সহপাঠীকে নিয়ে নতুন ধরনের ব্যাটারিচালিত হুইলচেয়ার তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। যা শুধু মাটিতেই চলবে না, সিঁড়ি বেয়েও উঠতে পারবে!

লিলুয়ার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়াদের অনেকেই তাঁদের পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে ফি বছর নানা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন। তা নিয়ে প্রদর্শনীও হয়। সেখানেই এই নতুন ধরনের হুইলচেয়ার প্রযুক্তি তৈরি করে দেখিয়েছেন শ্রমণা এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চূড়ান্ত বর্ষের পড়ুয়া সুমন্ত লাহা, দেবদীপ চট্টোপাধ্যায় ও প্রীতম দাস। তাঁদের তৈরি এই নতুন হুইলচেয়ার নিয়ে বিদেশেও প্রদর্শনী এবং সম্মেলনে গিয়েছেন ওই পড়ুয়ারা।

কোন প্রযুক্তিতে চলবে এই নতুন হুইলচেয়ার? শ্রমণা জানাচ্ছেন, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এই হুইলচেয়ার তৈরি করা হয়েছে। সিঁড়ির সামনে গেলে চেয়ারে বসেই সেই সিঁড়ি টপকাতে পারবেন প্রতিবন্ধী মানুষেরা। সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় তার উচ্চতা, ঢাল চেয়ারে বসে নিজে থেকেই সামলে নিতে পারবেন। ‘‘প্রতিবন্ধী মানুষেরা ২-৩টি সিঁড়ি পেরোতে গিয়েও অসহায় বোধ করেন। অনেক সময়েই অন্যের সাহায্য নিয়ে সিঁড়ি পেরোতে হয়। এই চেয়ার তা থেকে মুক্তি দেবে,’’ বলছেন শ্রমণা।

আরও পড়ুন: নবান্ন-সৈনিকের মৃত্যু, পুলিশি হুমকিতে বিতর্ক

ওই পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, বাজারচলতি হুইলচেয়ার হাত দিয়ে ঠেলতে হয়। ব্যাটারিচালিত চেয়ারগুলির ক্ষেত্রে ‘জয়স্টিক’ দিয়ে চালাতে হয়। কিন্তু হাত-পা অসাড় হয়ে গেলে তা চালানো সম্ভব হয় না। পিছন থেকে কাউকে ঠেলে নিয়ে যেতে হয়। সেই অসুবিধার কথা মাথায় রেখে এই হুইলচেয়ার চালানোর ক্ষেত্রেও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। কী সেই প্রযুক্তি? শ্রমণা বলছেন, চেয়ারে বসে থাকা মানুষটির মাথার সঙ্গে একটি সেন্সর জুড়ে দেওয়া হবে। মাথার নড়াচড়ার মাধ্যমে চেয়ারের গতি ও দিক নির্ণয় করা যাবে।

প্রশ্ন উঠেছে, এই নতুন প্রযুক্তির চেয়ার কতটা বাণিজ্যিক ভাবে সফল হবে? ওই পড়ুয়াদের দাবি, বিদেশি সংস্থার তৈরি ব্যাটারিচালিত হুইলচেয়ারের দাম অনেক বেশি। কিন্তু এই নতুন প্রযুক্তির হুইলচেয়ার অনেক কম দামে মিলতে পারে। তাঁরা জানান, এই নতুন প্রযুক্তি নিয়ে ইতিমধ্যেই আগ্রহী হয়েছে কয়েকটি বাণিজ্যিক সংস্থা। প্রাথমিক কথাবার্তাও হয়েছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক সাধন ঘোষ বলেন, ‘‘চেয়ারের ভাবনাটা খুবই ভাল। বাণিজ্যিক ভাবে কতটা সফল হচ্ছে তা না ভেবে আপাতত ওদের উদ্ভাবনী শক্তিটাকে উৎসাহ দেওয়া উচিত। হয়তো দেখা যাবে এই সব ভাবনাকে পুঁজি করেই ভবিষ্যতে অনেক কিছু বাজারে আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE