ছবি :সংগৃহীত।
দিনভর অফিসে হাড় ভাঙা খাটুনির পরে কিংবা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে পকেটের ওজন বুঝে অনেকেই ঢুকে পড়েন রেস্তোরাঁ কিংবা ফাস্ট ফুডের দোকানে। জিভে জল আনা সেই সব এগরোল, পিৎজা যে দেহে ডেকে আনতে পারে ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ, তা আর জানেন ক’জনে!
চিকিৎসকদের মতে, অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার স্থুলতার সমস্যা ডেকে আনে, আর তা থেকেই বাড়তে পারে ক্যানসারের আশঙ্কা। এই খাবারগুলো বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে-মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার খেলে দেহে এমন এক ধরনের ফ্যাট বাড়ে, যার জেরে বেশ কিছু হরমোনের কাজ এলোমেলো হয়ে যায়। তাতেই ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, রাজ্যে মহিলারা স্থূলতার সমস্যায় বেশি ভুগছেন। পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিমবঙ্গে যথাক্রমে ৬.১ ও ৭.১ শতাংশ পুরুষ এবং মহিলা স্থূলতায় ভুগছেন। একই হারে প্রতি বছর বাড়ছে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যাও। প্রতি বছর ১৫ হাজারেরও বেশি মহিলা নতুন ভাবে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। শহরে স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, চর্বি জাতীয়, তেলমশলা যুক্ত খাবার শহুরে মানুষেরা অনেক বেশি খান। কম বয়সেই বাইরের খাবাের আসক্ত হয়ে পড়েন। ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ চর্বি জাতীয় খাবার খেলে বেশি হয়। তার ফলে স্তন, ওভারির ক্যানসারের ঝুঁকি দেখা যায়।
ক্যানসার শল্যচিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তামাক জাতীয় পদার্থ যে ক্যানসারের সমস্যা বাড়ায় সেটা মানুষকে কিছুটা বোঝানো গিয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবারও সমান ভাবে ক্ষতিকর। স্থূলতা স্তন, ওভারি, জরায়ুর ক্যানসার এবং পুরুষদের ফুসফুস ও প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।’’
তা ছাড়া, বেশি দিন ধরে ঋতুস্রাব হলেও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে বলে মনে করছেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের জেরে দেহে ইস্ট্রোজেনের বাড়তি ক্ষরণ হয়। ক্যানসার চিকিৎসক আশিস মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘তেরো বছরের আগে ঋতুস্রাব শুরু হলে এবং পঞ্চাশের পরেও বন্ধ না হলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকতে পারে। তবে সন্তান হওয়ার পরে স্তন্যপান করালে ঝুঁকি কিছুটা কমে।’’
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সিগারেটের মতো ফাস্ট ফুডের উপরেও অতিরিক্ত কর ধার্য করে ভারতের কিছু রাজ্য এই সমস্যার মোকাবিলা করতে চাইছে। দীর্ঘদিন ধরেই ফ্রান্স, ডেনমার্ক, হাঙ্গেরি-সহ একাধিক দেশে ‘ফ্যাট ট্যাক্স’ চালু রয়েছে। এ বার সে পথেই হাটঁছে ভারত। এ রাজ্যেও সেই পরিকল্পনা চলছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ফ্যাট ট্যাক্সের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, সরকারের অতিরিক্ত কর চাপালেও সাধারণ মানুষ যদি সচেতন না হয়, এই ধরনের সমস্যার সমাধান করা যাবে না।
বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্যানসার গবেষণাগার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সচেতনতা প্রচারও চালাচ্ছে। তাদের কথায়, তিরিশের পরে মহিলাদের নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি শৈশব থেকেই খাদ্যাভাস নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। প্রচারের কাজে সঙ্গী হয়েছে বিভিন্ন স্কুল। এমন একটি স্কুলের এক শিক্ষিকার কথায়, ‘‘শৈশবেই ফাস্ট ফুডের ক্ষতিকর দিকগুলো জানতে পারলে বাচ্চারা সচেতন হতে পারবে, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy