ফাইল চিত্র।
পরপর দুদিন জমিয়ে দোল খেলেছিল ক্লাস এইটের অর্চিস্মান। বিকেল থেকেই শুরু হল কাশি আর শ্বাসকষ্ট, সঙ্গে শরীর জুড়ে র্যাশ। শুধু অর্চিস্মানই নয়, দোলের রঙ থেকে অনেকেরই ত্বক বিগড়ে যেতে পারে। র্যাশ, একজিমা আর ইচিং ছাড়াও কারও কারও আবার শ্বেতীর মতো দুধ সাদা দাগ হয়ে যায়। বাড়ে অ্যালার্জি জনিত অ্যাজমার অ্যাটাক। প্রত্যেক বার দোলের পর এ রকম সমস্যা নিয়ে চেম্বারে ভিড় জমানো রোগীর সংখ্যা নেহাতই কম নয়। অথচ একটু সতর্ক থাকলেই এই ধরনের শারীরিক উৎপাতের হাত এড়ানো যায় সহজেই। রাসায়ানিক রঙের বদলে প্রকৃতি থেকে তৈরি রং দিয়ে দোল খেললে এই সব সমস্যা কাছে ঘেঁষতে পারবে না।
উজ্জ্বল রং মানেই বিপদ
উজ্জ্বল রং-এর একটিও মানুষ, পশু পাখি সহ কোনও প্রাণীর জন্যেই ভাল তো নয়ই, উল্টে নানান ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পরিবেশ দূষিত হয়ে যায়। সুতরাং, চকচকে উজ্জ্বল রং দিয়ে রাঙিয়ে কাছের মানুষের বিপদ ডেকে আনবেন না। আর আমাদের পড়শি কুকুর, বেড়াল বা পাখিদের রং ছুঁড়ে বিপদের দিকে ঠেলে দেবেন না।
আবির খেলা কতটা নিরাপদ
অনেকের ধারণা জল রঙের তুলনায় আবির খেলা শরীরের জন্যে অনেক বেশি নিরাপদ। শ্রীকৃষ্ণের সময় অথবা নতুন ভাবে দোলকে সাধারণ মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনার হোতা মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের আমলে নানান প্রাকৃতিক উপাদান থেকে আবির সহ অন্যান্য রং তৈরি করা হতো। তাই হয়ত ত্বক কিছুটা উজ্জ্বল দেখাত। কিন্তু একালের আবির যে স্কিন ফ্রেন্ডলি এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। বরং আবিরের প্রভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। বিশেষ করে যাদের ড্রাই স্কিন তাঁদের বেশি সমস্যা হয়। যাদের অ্যাতোপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমার প্রবণতা আছে তাঁদের সমস্যা বেড়ে যায়। আবার অনেক সময় আবির চকচকে দেখাতে অভ্র ও মিহি কাচের গুঁড়ো মেশানো হয়। মুখে গলায় আবির ঘষে মাখানোর সময় ত্বক ছড়ে গিয়ে সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রবল। ব্রণ ফুস্কুড়ি সহ যে কোনও র্যাশ থাকলে সমস্যা বাড়ে। অনেক সময় আবিরের প্রভাবে অ্যাকনের সমস্যা হয়।
আরও পড়ুন: বাড়িতেই তৈরি করে নিন অরগ্যানিক রং
অ্যালার্জি ও হাঁপানি
জানেন নিশ্চয়ই ইদানীং দূষণের প্রভাবে বাচ্চা বুড়ো নির্বিশেষে সকলেরই অ্যালার্জি ও অ্যাজমার প্রবণতা বাড়ছে? প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ অ্যালার্জিতে ভোগেন। রাসায়ানিক রঙের প্রভাবে অ্যালার্জি ও অ্যাজমার প্রকোপ বাড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিল্পে ব্যবহৃত রং দোলের রং-এর প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর সংস্পর্শে ত্বকে কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস থেকে শুরু করে কেমিক্যাল লিউকোডার্মা অর্থাৎ শ্বেতীর ঝুঁকি বাড়ে। আবির উড়িয়ে দোল খেলার সময় বাতাসে ভেসে থাকা আবির শ্বাসনালীতে পৌঁছে যায়। ইরিটেশন হয়ে হাঁচি, সর্দি, কাশি এবং এর থেকে অ্যাজমার ঝুঁকি ভয়ানক বেড়ে যায়।
এতো অসুখের ফিরিস্তি শুনে ঘাবড়ে যাওয়ার কোনও কারণ নেই। ইদানীং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখানো পথ অনুসরণ করে ভেষজ রঙের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। ভেষজ রং দিয়ে রাঙিয়ে দিন বন্ধুদের।
আরও পড়ুন: দোল খেলার জন্য নিজেকে তৈরি করে নিন এ ভাবে
ত্বক বাঁচাবে নারকেল তেল
রং খেলতে বেরোনর আগে কয়েকটা নিয়ম মেনে চলতে পারলে অনেক সমস্যার হাত এড়ানো যায়।
প্রথমত, শুকনো ত্বক বেশি সংবেদনশীল হয়। তাই রং খেলার আগে সমস্ত শরীরে নারকেল তেল মেখে নিন। মাথাতেও ভাল করে তেল মেখে চুল বেঁধে রাখুন। ছোট চুল থাকলে টুপি পরে নিন। পুরো হাতা সুতির পোষাক পরুন। চোখ ঢেকে নিন সানগ্লাসে। জমিয়ে রঙ খেলার পর ঠান্ডা জলে ধারা স্নান করুন। এরপর মাইল্ড সাবান ব্যবহার করলে বিপদের সম্ভাবনা থাকবে না। দোল খেলুন মহানন্দে ত্বক আর চোখ বাঁচিয়ে। আর অনিচ্ছুক মানুষের গায়ে রং ছুঁড়ে তাকে বিব্রত করবেন না।
শুভ দোলযাত্রা, রঙে রঙে ভরে উঠুক সবার জীবন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy