কলকাতার রোলে মজে গোটা দুনিয়া। নিজস্ব চিত্র।
সদ্য আলাপের পর তেমন তেমন ভালবাসা পেলে মোহময়ী তরুণী যেমন প্রিয়জনের কাছে রহস্যের ঢাকনা খোলে, তাদের সহজ মেলামেশার হাত ধরে ‘আবার কবে দেখা হবে’-র টান যেমন করে ঠেকাতে পারে না প্রেমিক— কলকাতা শহরের রোলের সঙ্গে তেমনই প্রেম ভোজন রসিকদের। গোটা দেশের মধ্যে সেরা রোলের ঠিকানা এই শহর। তাই কলকাত্তাইয়া রোলের রহস্য, ফের চাখার ইচ্ছে— কোনওটাই কম আগ্রহের নয়।
কিন্তু জানেন কি, দুনিয়াকে এই রোলের ধারণা কে দিয়েছিলেন? আর কী ভাবেই বা? রোলের ইতিহাস জানতে হলে একটু পিছিয়ে যেতে হবে! সে ইতিহাসে জড়িয়ে আছে ইংরেজ-শাসিত কলকাতা।
সালটা ১৯০০। অধুনা কলকাতা কর্পোরেশনের জায়গায় একটা তাওয়া আর কিছু বিফ নিয়ে বসতেন রেজা মিয়া। হাসান রেজা। ফি সন্ধেয় সেই বিফ কাবাব খেতে ভিড় করেন ইংরেজরা। বিদেশ-বিভুঁইয়ে পড়ে থেকেও দোশোয়ালি কাবাবের এমন স্বাদ পেলে কে না নেশাড়ু হয়! কোনও কাজে ঊর্ধ্বতন বসকে ‘খুশ’ করতেও হাসান রেজার বিফ কাবাব ভেট দেওয়াই তখন হয়ে উঠেছে রোওয়াজ।
আরও পড়ুন: রঙিন মাছ বাঁচাতে দাওয়াই ঠান্ডা বোতল
হাতযশ! হাতের জাদু-ই স্বাদ বাড়ায় রোলের। নিজস্ব চিত্র।
তবে এতে একটা সমস্যায় পড়েছেন জনৈক ইংরেজ আধিকারিক। তাঁর ঊর্ধ্বতনটি ভয়ানক খুঁতখুঁতে। কাবাবের তেল হাতে লেগে যাওয়া একেবারে না পসন্দ। সটান সে কথা জানালেন রেজা মিয়াকে। অকুল পাথারে পড়লেন দোকানি। কাবার খাব, অথচ তেল লাগবে না আঙুলে— তা কী করে হয়! বাড়ি গিয়ে গিন্নিকে জানালেন সব। অনেক ভাবনার পর হাসান মিয়ার বিবি বের করলেন ফন্দি।
বিবির কথামতো, ময়দার লেচি বানিয়ে, বেলে, তেলে হালকা ভেজে তার মধ্যে পুড়ে দিলেন তুলতুলে বিফ। আর পরোটার বাইরের তেল শুষতে তাকে জড়িয়ে দিলেন ভাল জাতের ব্লটিং পেপারে। ব্যস, কেল্লা ফতে। সেই থেকেই শুরু অভিনব কাবাব খাওয়ার পদ্ধতি। তার পর থেকে রোজই নুন-লেবু-মশলা মাখানো সেঁকা মাংস পরোটায় পুড়ে তাওয়ার এক পাশে থরে বিথরে সাজিয়ে রাখতে শুরু করলেন হাসান মিয়া। কলকাতায় জন্ম নিল রসনাতৃপ্তির নয়া উপাদান— ‘রোল’।
পরে অবশ্যই বিফের জায়গায় এসেছে চিকেন, মাটন, এখন আবার ভেটকিও। আরও শৌখিন হতে পরোটার ভিতর দোকানি পুরে দিয়েছেন শশা, পেঁয়াজের মিক্সড ডাবলস। কিন্তু আদি ও অকৃত্রিম রোলে এ সবের বালাই ছিল না। বরং কাঠিতে সেঁকা কয়েকটা বিফ আর কেবল একটি পরোটার হাত ধরেই নিজাম’স-এর মালিক হাসান রেজা কলকাতাকে জিতিয়ে দিলেন ভোজনরসিকতার অন্য এক পাঠে।
আরও পড়ুন: রোগমুক্তির জন্য যোগ করছেন? শরীরের ক্ষতি হচ্ছে না তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy