Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

‘প্রণবকাকুর’ হাত থেকে পুরস্কার নেবেন কীর্ণাহারের তৃপ্তিদেবী

কাকুর হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার খবরটা পাওয়ার পর থেকেই কার্যত রাতের ঘুম উবে গিয়েছে তৃপ্তিদেবীর। বাবার মুখে কাকুর কথা খুব শুনেছে। কত যে সব গল্প। ছোটবেলায় উপনয়নের দিন কাকু নাকি বাবার টিকি ধরে টানাটানি করে মজা করেছিলেন। সেই কাকুর হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার কথা ভেবেই এত উত্তেজনা!

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ক্লাস নিচ্ছেন তৃপ্তি বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ক্লাস নিচ্ছেন তৃপ্তি বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

অর্ঘ্য ঘোষ
কীর্ণাহার শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ০৩:১৫
Share: Save:

কাকুর হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার খবরটা পাওয়ার পর থেকেই কার্যত রাতের ঘুম উবে গিয়েছে তৃপ্তিদেবীর। বাবার মুখে কাকুর কথা খুব শুনেছে। কত যে সব গল্প। ছোটবেলায় উপনয়নের দিন কাকু নাকি বাবার টিকি ধরে টানাটানি করে মজা করেছিলেন। সেই কাকুর হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার কথা ভেবেই এত উত্তেজনা!

কে এই ‘কাকু’?

পাড়াতুতো আর পাঁচটা কাকু নন তিনি। তিনি তৃপ্তিদেবীর বাবার সহপাঠী, বাল্যবন্ধু, খোদ দেশের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। চলতি মাসের ১২ মে রাষ্ট্রপতি ভবনে রাজ্যের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে তাঁর হাত থেকেই ‘ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেল অ্যাওয়ার্ড ফর লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট’ পুরস্কার নিতে দিল্লি যাচ্ছেন তৃপ্তি বন্দ্যোপাধ্যায়।

বছর তিপান্নর তৃপ্তিদেবীর বাড়ি কীর্ণাহারের নাগডিহি পাড়া। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৯৮১ সালে তিনি এএনএমআর হিসাবে যোগ দেন নানুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এরপর ২০০৩ সালে বাঁকুড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হেলথ সুপারভাইজার পদে উন্নীত হন। সেখানে প্রত্যন্ত এলাকায় শিশুমৃত্যু রোধে তাঁর ভূমিকা বিশেষ প্রশংসা পায়। একই সঙ্গে তিনি স্নাতকও হন।

মঙ্গলবার বিকালে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে তাঁর পুরস্কার পাওয়ার চিঠি এসে পৌঁছয়। তারপরই এখন তিনি যেখানে কর্মরত রয়েছেন, সেই নানুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বয়ে যায় খুশির হাওয়া। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হেলথ সুপার ভাইজার পদে কর্মরত থাকলেও একই সঙ্গে তিনি পালন করছেন অস্থায়ী পাবলিক হেলথ নার্সের ভূমিকাও।

কীর্নাহারেই তৃপ্তিদেবীর ছোট্ট সংসার। বাবা নীহারবাবু রাষ্ট্রপতির বাল্যবন্ধু। রয়েছেন ভাই প্রভাকরবাবু এবং তাঁর স্ত্রী। আর পরিবারের সদস্য হয়ে রয়েছেন লক্ষ্মী নামে এক আদিবাসি তরুণী। পিতৃহীন অভাবী ঘরের লক্ষ্মীকে সন্তান স্নেহে মানুষ করেছেন। লক্ষ্মী এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে স্থানীয় মুক্ত বিদ্যালয়ে। আইসিডিএসে কাজও করে সে। স্বভাবতই খুশির হাওয়া পরিবারে। নীহারবাবু বলেন, ‘‘সেবার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাইজ আনতে যাচ্ছে মেয়ে। পরিচয় পাওয়ার পর নিশ্চয় প্রণবেরও পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে যাবে।’’

নানুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা খুশি তো বটেই, যথেষ্ট গর্বিতও। ধারাবাহিকভাবে নিজের দ্বায়িত্ব যথাযথ পালনের পাশাপাশি পারিপার্শিক মানুষজনের সুখ-দুখের সঙ্গে যথার্থভাবে জড়িয়ে থেকেছেন তৃপ্তিদেবী। তাই সবদিক খতিয়ে দেখার পরই রাজ্যের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে তাঁকে পুরস্কৃত করছে সরকার। সহকর্মী হিসাবে আমাদেরও ভাল লাগছে।’’

তৃপ্তিদেবী অবশ্য গর্বের মতো কিছু করেছেন বলে মনেই করেন না। তাঁর পুরস্কার প্রাপ্তি নিয়ে এ দিন যখন সহকর্মীরা নানান আলোচনায় মসগুল তখন তিনি আইসিডিএস কর্মীদের অপুষ্টি জনিত রোগ সম্পর্কিত ক্লাস নিতে ব্যস্ত। ওই ক্লাসে হাজির ছিলেন দুই আইসিডিএস কর্মী মুন্তেহানা খাতুন এবং হাসমাতারা বেগম। তাঁরা বলেন, ‘‘দিদিকে বলেছিলাম দিদি আজকের দিনটা আপনার পুরস্কার পাওয়ার দিন হিসাবে উদযাপন করি। কিন্তু উনি জানিয়ে দিয়েছেন তোমাদেরও পুরস্কার পেতে হবে। তাহলেই আমার পুরস্কার পাওয়া স্বার্থক হবে।’’

কী বলছেন তৃপ্তিদেবী?

বলেন, ‘‘ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে! বাবার মুখে প্রণবকাকুর কথা এত শুনেছি, মনে হত যেন পাশের বাড়ির কোনও কাকু। কোনও দিন ভাবিনি, তাঁর হাত থেকে পুরস্কার নিতে হবে জেনে এত উত্তেজনা হবে। বাবার বাল্যবন্ধু হলেও তিনি যে রাষ্ট্রপতি!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE