কবে মিলবে পরিষেবা? ছবি: দিলীপ নস্কর।
ভবন তৈরি হয়েছে। রয়েছে রোগীদের ভর্তির জন্য ১০ শয্যার ব্যবস্থাও। ২০১৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফ্রেজারগঞ্জে এসে রিমোটে উদ্বোধনও করেছিলেন নামখানা ব্লকের হরিপুর পঞ্চায়েতের মহারাজগঞ্জ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পর্যাপ্ত চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে ধুঁকছে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। উপযুক্ত পরিষেবা মিলছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিত্সক ও কর্মীদের অভিযোগ, আরও কর্মী নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্বাস্থ্য দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিপুর পঞ্চায়েতের প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। প্রায় ত্রিশ বছর আগে মহারাজগঞ্জ গ্রামের কাছে ১১ বিঘা দানের জমিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি করা হয়। তখন থেকে বছর কয়েক আগে পর্যন্ত একটি ভবনেই স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হত। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী ভর্তি করে চিকিত্সার ব্যবস্থা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২০১০ সালে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন যোজনায় দেড় কোটি টাকা অনুমোদিত হয়। ওই টাকায় তৈরি হয় ১০ শয্যার একটি ভবন, চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার আবাসন, ল্যাবরেটরি। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়। ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয় ২০১২ সালে। গত বছর মুখ্যমন্ত্রী ভবনটির উদ্বোধনও করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিত্সক ও স্বাস্থ্য কর্মী না থাকায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ১০ শয্যার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালাতে হলে প্রয়োজন অন্তত তিন জন চিকিত্সক, ছ’জন নার্স ও পাঁচ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। প্রয়োজন এক জন ফার্মাসিস্ট, দু’জন সাফাইকর্মী ও এক জন করণিকেরও। অথচ, বর্তমানে চিকিত্সক রয়েছেন এক জন, ফার্মাসিস্ট, এক জন নার্স, তিন জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। আর রয়েছেন এক জন অস্থায়ী সাফাইকর্মী। ফলে, চালু করা যায়নি রোগী ভর্তি করে চিকিত্সা পরিষেবা বা ল্যাবরেটরির কাজকর্ম। বহির্বিভাগে অবশ্য চিকিত্সা চলছে। তা-ও অনিয়মিত বলে অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, সপ্তাহে দু’তিন দিন চিকিত্সক আসেন। বাকি দিনগুলিতে রোগীদের পরিষেবা দেন ফার্মাসিস্ট।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিত্সক বিশ্বজিত্ দাস বলেন, “আমার পক্ষে প্রতি দিন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া সম্ভব নয়। আমাকে দ্বারিকনগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক দিন করে রোগী দেখতে হয়। বাকি ৩-৪ দিন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই যাই। প্রতি দিন গড়ে ১০০ জন করে রোগী আসেন। স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে উপযুক্ত পরিষেবা দিতে পারি না। কর্মী নিয়োগের জন্য বহু বার স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছি।”
গ্রামবাসীদের পাশাপাশি এই অব্যবস্থায় হতাশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য জমিদাতা পরিবারটিও। ওই পরিবারের সদস্য প্রকাশ আদক বলেন, “আমার বাবা স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির জন্য জমি দিয়েছিলেন। তার পর থেকে একটা ঘর নিয়ে চলছিল কেন্দ্রটি। পরে ভবন তৈরি হয়। এলাকার মানুষের ভালর জন্যই তো জায়গা দেওয়া হয়েছিল। অথচ, গ্রামের মানুষ এখনও তেমন কোনও সুবিধা পাচ্ছেন না।” স্থানীয় বাসিন্দা রামকৃষ্ণ মণ্ডল ও জনার্দন জানা বলেন, “সরকার এত টাকা খরচ করে ভবন নির্মাণ করল। ১০ শয্যার ব্যবস্থাও হল। অথচ, চিকিত্সক ও কর্মীর অভাবে সব ভবন তালা বন্ধ পড়ে রয়েছে। এখানে রোগী ভর্তি করে চিকিত্সা পরিষেবা চালু হলে বাসিন্দারা ভীষণ ভাবে উপকৃত হতেন।” প্রায় একই বক্তব্য, স্থানীয় বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য বলাইলাল মিস্ত্রিরও। স্বাস্থ্যকেন্দের যথাযথ পরিষেবা না মেলায় গ্রামবাসীদের এখনও যেতে হয় প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের দ্বারিকনগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা ৫০ কিলোমিটার দূরের কাকদ্বীপ হাসপাতালে।
ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিত্সক ও কর্মী ঘাটতির কথা মেনে নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (ডায়মন্ড হারবার) প্রকাশ মৃধা বলেন, “নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় চিকিত্সক বা স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচনের পরে ওখানে প্রয়োজনীয় কর্মী পাঠানো হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy