লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে আমিরুল। নিজস্ব চিত্র।
পুজোর ছুটিতে অধিকাংশ চিকিৎসক! তাই মরণাপন্ন রোগীদেরও ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে লালবাগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
রবিবার সকালে বাড়িতে কীটনাশক খান ইসলামপুর চরগোপালপুরের অমিরুল শেখ। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে নসিপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখান থেক লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়। কিন্তু মহকুমা হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ভর্তি নিতে অস্বীকার করেন। বরং মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ। রোগীর মা শরিফা বিবি বলেন, “মহকুমা হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মুকুল রায়চৌধুরী জানান কোনও চিকিৎসক নেই। চিকিৎসা হবে না।”
অনেক অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। স্যালাইন নিয়ে হাসপাতালের দরজায় বকুল গাছের ছায়ায় ভ্যান-রিকশার উপরে শুয়ে প্রায় দু’ঘণ্টা ছটফট করেছেন মুমূর্ষু অমিরুল। পরে রোগীর পরিবারের লোকজন হইচই শুরু করলে চাপে পড়ে রোগী ভর্তি করতে বাধ্য হন ওই চিকিৎসক। অভিযোগ, পরিবারের কাছ থেকে ‘চিকিৎসকের অভাবে চিকিৎসা হবে না জেনেও ভর্তি করলাম’ বলে বয়ান লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সুপার দেবকুমার দে অবশ্য বলেন, “বেশ কয়েক জন চিকিৎসক ছুটিতে। রোগীর শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে ওই চিকিৎসক মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু রোগীর বাড়ির লোকজন বহরমপুরে নিয়ে যেতে রাজি হননি। তখন বাধ্য হয়ে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয়।”
অন্যদিকে এ দিনই পেটে ব্যথা নিয়ে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে আসেন ভগবানগোলা থানার চর শফিহাজির পাড়ার বাসিন্দা চানসুরা বিবি। দুপুর ১২টা থেকে চানসুরা বিবি হাসপাতালের গেটের বাইরে বসে থাকেন। ওই চিকিৎসক তাঁকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করেন। পরে হাসপাতাল চত্বরে ঘোরাফেরা করা এক দালালের খপ্পরে পড়ে মোটা অঙ্কের টাকা ‘ভিজিট’ দিয়ে স্থানীয় নার্সিংহোমের চিকিৎসককে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন। চানসুরা বিবির বাবা পেশায় দিনমজুর আবদুল সুভান শেখ বলেন, “আমরা গরীব মানুষ। ধার-দেনা করে মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি বলে ডাক্তারের কাছে কাতর আবেদন করলাম। কিন্তু তিনি কোনও কথা শুনলেন না।”
শুধু এ টুকুই নয়। যাঁরা ভর্তির রয়েছেন হাসপাতালে তাঁরা একদিনও চিকিৎসকের দেখা পাননি। এমনই অভিযোগ করেন দীনবন্ধু দাস, অর্ধেন্দু সরকার, উজির শেখরা।
লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে সুপার-সহ মোট চিকিৎসকের সংখ্যা ২৭ জন। কিন্তু তার মধ্যে অধিকাংশই ছুটিতে রয়েছেন বলে সুপার জানান। সুপার নিজেও ছুটিতে। বছরের অন্য সময়ে যেখানে লালগোলা, ভবগবানগোলা, রানিতলা, রানিনগর, ইসলামপুর, নবগ্রাম, মুর্শিদাবাদ থানার বিস্তীর্ণ এলাকার রোগীদের ভিড়ে সরগরম থাকে লালবাগ মহকুমা হাসপাতাল। ভিড় সামাল দিতে না পেরে প্রতি শয্যায় দু’তিন জন করে রোগী রাখা হয়। সেখানে এখন রোগী চাপ নেই। হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগই প্রায় রোগীশূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রোগী নেই ফলে নার্স দিদিদেরও দেখা নেই!
হাসপাতাল সূত্রের খবর, দুর্গাপুজো, ঈদুজ্জোহা, লক্ষ্মীপুজো, ভাইফোঁটা, কালীপুজো রয়েছে ছুটি রয়েছে পর পর। উৎসব মরশুমে একজন ছুটি কাটিয়ে আসার পরে অন্য চিকিৎসক ছুটিতে যাচ্ছেন নিজেদের বোঝাপড়ায়। ফলে একশ্রেণির চিকিৎসকের অনুপস্থিতি থাকছে হাসপাতালে। অস্থায়ী সুপার হওয়ার ফলে ওই চিকিৎসকদের উপরে তাঁর কোনও রাশ নেই বলেও অভিযোগ। ফলে ‘অভিভাবকহীন’ হাসপাতালে যথেচ্ছচার চলছে বলেও অভিযোগ। কীটনাশক খাওয়া রোগী ফিরিয়ে দেওয়ায় সবচেয়ে বড় প্রমাণ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy