প্রথম দিনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল অনেকটাই। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিন তাই আর কোনও ঝুঁকি নেননি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এমসিআই প্রতিনিধি দলের সামনে প্রথম দিন গরহাজির থাকা চিকিত্সক-অধ্যাপকদের একাংশকে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিন হাজির করিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে সচেষ্ট হলেন তাঁরা। তাতে অসুস্থ চিকিত্সককে বাড়ি থেকে ডেকে আনতে হয়েছে। তড়িঘড়ি করে ফিরিয়ে আনতে হয় কনফারেন্সে ভিনরাজ্যে থাকা এক চিকিত্সককে। তলব পেয়ে এ দিন বিমানে ফিরে আসেন তিনি। এমনকী পারিবারিক কারণে ছুটিতে থাকা একাধিক চিকিত্সককেও কলকাতা থেকে ডেকে আনা হয়। চক্ষু বিভাগের এক চিকিত্সক কলকাতা থেকে বিমানে ফিরতে গিয়ে ঠিক সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারেননি। ওই বিমানে আসতে না পারায় ফের পরবর্তী উড়ানের টিকিট কাটতে হয় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত বেলা তিনটে নাগাদ কোনওমতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। কলকাতা থেকে আরও কয়েকজন চিকিত্সক এ দিন ফিরে আসেন।
প্রতিনিধি দলের সামনে চিকিত্সক-অধ্যাপকরা হাজির হতে না পারলে সাধারণত তাদের পরিকাঠামোর মধ্যে বিবেচনা করেন না এমসিআই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। চিকিত্সক-অধ্যাপকের এই ঘাটতি থাকলে আগামী শিক্ষা বর্ষ থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ১৫০ আসনের অনুমোদন আটকে যাওয়ার আশঙ্কা। এমসিআই প্রতিনিধি দলের পরিদর্শনের প্রথম দিন সোমবার অন্তত ২০ শতাংশ চিকিত্সক-অধ্যাপক হাজির থাকতে পারেনি। দ্বিতীয় দিন তাই তাদের হাজির করাতে মরিয়া ছিলেন কর্তৃপক্ষ। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায়ের দাবি, “শেষ পর্যন্ত ৮৫ শতাংশের বেশি চিকিত্সক, অধ্যাপকদের আমরা প্রতিনিধি দলের সামনে হাজির করিয়েছি। সমস্যা হবে না বলেই আমরা আশাবাদী।”
গত বছর এমসিআই পরিদর্শনে দেখা গিয়েছিল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ১৫০ আসনে ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে যে পরিকাঠামো দরকার তার থেকে ২৩.৪ শতাংশ অধ্যাপক-চিকিত্সক কম রয়েছেন। তাতে ওই সংখ্যক আসনে ছাত্রছাত্রী ভর্তির করানোর অনুমোদন আটকে যেতে বসেছিল। ঘাটতি মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলে পরে এ বছরও ১৫০ আসনের অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই ঘাটতি মেটানো হয়েছে কি না তা দেখতেই এ বার পরিদর্শনে এসেছেন তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটি।
সোমবার এমসিআই প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে পৌঁছলে অন্তত ৪০ জন চিকিত্সক সময় মতো তাঁদের সামনে হাজির হতে পারেননি। তাঁদের একটা বড় অংশ কলকাতা থেকে ফিরছিলেন। ট্রেন অবরোধে আটকে পড়েছিলেন। তাতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে। পরে ট্রেন অবরোধের কথা বলে বারবার বোঝানোয় বিষয়টি বিবেচনা করতে রাজি হয় পরিদর্শক দলটি। ট্রেনে আটকে পড়া চিকিত্সকদের দেরিতে হলেও প্রতিনিধি দলের সামনে হাজির করাতে পেরেছিলেন কর্তৃপক্ষ। যাঁরা আসতে পারেননি তাদের বিষয়টি নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বেগে ছিলেন কর্তৃপক্ষ।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের একটি সূত্রই জানিয়েছে, শল্য বিভাগের চিকিত্সক অসুস্থ থাকায় সোমবার আসেননি। মঙ্গলবার তিনি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেন। জয়পুরে একটি কনফারেন্সে গিয়েছিলেন চক্ষু বিভাগের এক চিকিত্সক। এ দিন বিমানে শিলিগুড়ি ফিরে তিনিও দেখা করেন। ওই বিভাগের অপর এক চিকিত্সক পারিবারিক কারণে কলকাতায় ছুটিতে রয়েছেন। তিনিও কনফারেন্সে রয়েছেন বলে তাঁর বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রতিনিধিদের জানানোর কথা ঠিক হয়। পরে তা উচিত হবে না মনে করে ওই চিকিত্সককে বিমানে চলে আসতে বলা হয়। সময় মতো পৌঁছে বিমান ধরতে না পারায় পরের বিমানে তাকে এ দিন পৌঁছতে হয়েছে বাগডোগরায়। সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে হাজির হন।
প্যাথলজি এবং প্রসূতি বিভাগের দুই চিকিত্সকও এ দিন কলকাতা থেকে ফিরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। সোমবার আরও এক চিকিত্সক রাজধানী এক্সপ্রেসে গুয়াহাটি রওনা হন। তিনি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। তবে কর্তৃপক্ষের তত্পরতায় এমসিআই-এর ফর্মে সই করে ছুটির আবেদন করে গিয়েছিলেন। তা দেখিয়ে এ দিন বিষয়টি বিবেচনা করতে অনুরোধ করা হয় প্রতিনিধি দলের কাছে। প্যাথলজির অপর এক চিকিত্সক কনফারেন্সে ভিনরাজ্যে রয়েছে বলে প্রতিনিধিদের কাছে জানানো হয়। তবে ফরেন্সিক বিভাগে অধ্যাপক নেই। শিক্ষক-অধ্যাপক কম রয়েছে প্রসূতি এবং গাইনি বিভাগেও। এ বিষয়টি এমসিআই এর বিচারে কতটা গুরুত্ব পাবে সেদিকেই এখন তাকিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy