Advertisement
২০ মে ২০২৪

নিরাশ্রয় রোগীকে কাজ দিতে প্রকল্প বাঙুরে

নিজের নামও স্পষ্ট করে বলতে পারতেন না সেই যুবক। জড়ানো গলায় কোনওমতে বলতেন, ‘ফুড়ুৎ’। সেই থেকে হাসপাতালে ওটাই তাঁর নাম। ডাক্তার থেকে শুরু করে সাফাইকর্মী, সকলেই ওই নামে ডাকেন। সারা গায়ে পোকা ধরা ক্ষত সমেত পুলিশ এক দিন যাঁকে রাস্তা থেকে তুলে এনে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করেছিল, সেই ফুড়ুতের উদাহরণই এখন স্বাস্থ্য দফতরকে নতুন দিশা দেখাচ্ছে। নিরাশ্রয় রোগীদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি কী ভাবে হাসপাতালের কর্মী সমস্যা মেটানো যায়, সে ব্যাপারেও বাঙুরের পরিকল্পনা রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এখন অন্যতম নজির।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৪
Share: Save:

নিজের নামও স্পষ্ট করে বলতে পারতেন না সেই যুবক। জড়ানো গলায় কোনওমতে বলতেন, ‘ফুড়ুৎ’। সেই থেকে হাসপাতালে ওটাই তাঁর নাম। ডাক্তার থেকে শুরু করে সাফাইকর্মী, সকলেই ওই নামে ডাকেন। সারা গায়ে পোকা ধরা ক্ষত সমেত পুলিশ এক দিন যাঁকে রাস্তা থেকে তুলে এনে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করেছিল, সেই ফুড়ুতের উদাহরণই এখন স্বাস্থ্য দফতরকে নতুন দিশা দেখাচ্ছে। নিরাশ্রয় রোগীদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি কী ভাবে হাসপাতালের কর্মী সমস্যা মেটানো যায়, সে ব্যাপারেও বাঙুরের পরিকল্পনা রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এখন অন্যতম নজির।

২৩ বছরের ওই যুবক এখন বাঙুর হাসপাতালের কর্মী। তাঁর মতো আরও কয়েক জন নিরাশ্রয়কে কাজ দিয়ে জীবনের মূলস্রোতে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষকর্তারাও জানিয়েছেন, বিভিন্ন হাসপাতালেই এমন নিরাশ্রয় কিছু মানুষের হদিস পাওয়া যায়। মানবিক কারণে তাঁদের তাড়াতে পারেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, আবার শয্যা আটকে রেখে দিলে অন্য রোগীদের ঠাঁই দেওয়া সমস্যা হয়। এই ধরনের প্রকল্প চালু হলে তাঁরাও উপকৃত হবেন। কর্মীর অভাবে রোগীদের যে ভোগান্তি হয়, সেটাও কিছুটা কমবে।

হরিদেবপুরের বাসিন্দা ২৩ বছরের ওই যুবক পায়ে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন। থাকার কোনও পাকাপাকি আস্তানা ছিল না তাঁর। তাই ওই অবস্থাতেই রাস্তায় পড়েছিলেন। ক্ষত থেকে ছড়ানো সংক্রমণে পোকা ধরে গিয়েছিল। পুলিশ তাঁকে তুলে এনে বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু সেখানেও ওয়াডের্র রোগীরা আপত্তি জানাতে থাকেন। চিকিৎসক-নার্সরা তবু হাল ছাড়েননি। সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক জয়দীপ রায়ের নেতৃত্বে এক চিকিৎসক দল দীর্ঘ চেষ্টার পরে তাঁকে সুস্থ করে তোলেন।

কিন্তু তার পরেও হাসপাতাল থেকে এক পা-ও নড়েননি ফুড়ুৎ। তাঁকে চলে যেতে বললে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকেছেন, আর পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, “কোথায় যাব?” নিরাপত্তাকর্মীদের সাহায্য নিয়ে ওই তরুণকে হাসপাতাল থেকে বার করে দিতে পারতেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাঁরা তা করেননি। সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় এবং অন্য সিনিয়র ডাক্তারেরা স্থির করেন, যে ভাবেই হোক একটি বিকল্প ব্যবস্থা করে ফেলতে হবে।

বাঙুরের সহকারী সুপার সেবন্তী মুখোপাধ্যায় বলেন, “পিপিপি মডেলে এই হাসপাতালে রোগ নির্ণয় কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু সেখানে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর খুবই অভাব। তাই বহু ক্ষেত্রেই মুমূর্ষু রোগীদের ওয়ার্ড থেকে পরীক্ষা করাতে নিয়ে গেলে ট্রলি ঠেলতে হয় বাড়ির লোকজনকেই। আমরা স্থির করি ছেলেটিকে ওই কেন্দ্রে কাজ দেব। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাসের সহায়তায় সেটা করা সম্ভব হয়েছে।”

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ফুড়ুতের পরেও এমন আরও তিন জনকে চিহ্নিত করে কোনও কাজে যুক্ত করে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।

নিরাশ্রয় ফুড়ুৎ এখন হাসপাতাল সংলগ্ন রোগনির্ণয় কেন্দ্রে চাকরি করছেন। রাতে ওখানেই থাকেন। তাঁর কথায়, “আরও অনেক রুগ্ণ মানুষকে সেবা করার সুযোগ পাচ্ছি। নিজে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি বলেই সেবার মর্মটা বুঝি।” বাঙুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ফুড়ুতের শরীরের কিছু বিকৃতি সারাতে তাঁর প্লাস্টিক সার্জারি প্রয়োজন। পরের ধাপে সেটারও ব্যবস্থা করবেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE