অজানা জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে বাঁকুড়ায়। আর রোগীর চাপ এতই বাড়ছে যে, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে রোগীদের ঠাঁই হওয়াও সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি অজানা জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের রোগ নির্ণয়ের ‘কিট’ পর্যাপ্ত পরিমাণ না থাকাতেও বাড়ছে সমস্যা।
এরই মধ্যে শনিবার রাতে জ্বরে আক্রান্ত বিষ্ণুপুরের একটি বছর তিনেকের শিশুর মৃত্যু হয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যালে। শিশুটি ‘অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিন্ড্রোমে’ মারা গিয়েছে বলে হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনার পরে জেলার মানুষ উদ্বিগ্ন। তার প্রধান কারণ, জেলার বেহাল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। এই ধরনের রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার জন্য জেলার ২২টি ব্লকের মানুষের একমাত্র সম্বল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলি তো দূর অস্ৎ, খাতড়া মহকুমা ও বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালেও এনসেফ্যালাইটিস নির্ণয়ের ব্যবস্থা নেই।
এ দিকে, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই রোগ নির্ণয়ের প্রয়োজনীয় কিটও অপ্রতুল। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এনসেফ্যালাইটিস নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত এক একটি কিটে প্রায় চারবার রক্ত এবং ‘সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড’ (জাপানি এনসেফ্যালাইটিস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যা পরীক্ষা করা হয়) পরীক্ষা করা যেতে পারে। প্রত্যেক বারে প্রায় ৮০ জন রোগীর রক্ত এক সঙ্গে পরীক্ষা করা যায় এই কিটের সাহায্যে। বর্তমানে এই হাসপাতালে অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যে হারে রোগী ভর্তি হচ্ছেন, তাতে মাসে অন্তত তিনটি করে কিট প্রয়োজন বলেই জানাচ্ছে হাসপাতালের কর্তারা। কিন্তু, স্বাস্থ্যভবন থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ কিট মিলছে না। এই পরিস্থিতিতে রোগ নির্ণয় করার ‘র্যাপিড কিট’ স্বাস্থ্য দফতরের কাছে দাবি করেছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “বাঁকুড়া মেডিক্যাল এনসেফ্যালাইটিস নির্ণয়ের র্যাপিড কিট চেয়েছে। আমরা স্বাস্থ্যভবনকে বিষয়টি জানিয়েছি।”
এনসেফ্যালাইটিসের হানা বাঁকুড়ায় নতুন নয়। এমনিতেই এনসেফ্যালাইটিস প্রবণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত বাঁকুড়ায় ২০১২ সালে ১৩১ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মারা গিয়েছিলেন ২৫ জন। ২০১৩ সালে ১৬০ জন আক্রান্তের মধ্যে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছরে আক্রান্তের সংখ্যা অন্যবারের তুলনায় কম বলেই দাবি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের। গত আট মাসের মধ্যে এই জেলায় এনসেফ্যালাইটসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ জন। মারা গিয়েছেন ১১ জন। তবে, এনসেফ্যালাইটিস ছাড়াও ভাইরাল ফিভার এবং ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও নেহাত কম নয় এই জেলায়।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, চলতি বছর ওন্দা, ইঁদপুর ও তালড্যাংরা থেকে এখনও পর্যন্ত সাত জন এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। ছাতনা, সোনামুখী থেকে চার জন। বিষ্ণুপুর পুরসভা ও বড়জোড়ায় এই রোগে আক্রান্ত তিন জন। এ ছাড়াও শালতোড়া, মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটি, সিমলাপাল, পাত্রসায়র, রাইপুর, রানিবাঁধ এবং বাঁকুড়া পুর-এলাকা থেকেও এনসেফ্যালাইটিস আক্রান্ত রোগী মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত বছর পুজোর সময় জেলা জুড়ে ১- ১৫ বছর বয়সের শিশু-কিশোরদের জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের প্রতিষেধক দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। যদিও বাসিন্দাদের একাংশের ওই প্রতিষেধক ঘিরে অমূলক ভয়ের জন্য জেলার মাত্র ৬০ শতাংশ শিশু-কিশোরকে সেই টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। যদিও শুভ্রাংশুবাবু বলেন, “রাজ্য সরকার এ বছর থেকে শিশুদের জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের প্রতিষেধক দেওয়া বাধ্যতামূলক করেছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে এর সুফল মিলবে।”
কয়েক সপ্তাহ আগেই মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে শুয়োর কিনে নিয়ে পুনর্বাসন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও এই জেলায় কোথাও এখনও এই উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সম্প্রতি বাঁকুড়া পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির তরফে পুরসভায় স্মারকলিপি দিয়ে এলাকার শুয়োর ধরার আর্জি জানানো হয়েছে। তার পরেও পুরসভার টনক নড়েনি বলেই অভিযোগ করেছেন ওই ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদক দেবাশিস লাহার। তিনি বলেন, “আমাদের এলাকায় শুয়োরের অবাধ বিচরণ। অনেকের বাড়িতেও সেগুলি ঢুকে যাচ্ছে। ওই পশু থেকে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ছড়াতে পারে। আমরা আতঙ্কে রয়েছি। পুরসভাকে জানানো সত্ত্বেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।”
পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক আবির বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “শুয়োর ধরার কোনও নির্দেশিকা আমি পাইনি। তবে, বাসিন্দাদের কাছে অভিযোগ পেয়ে শুয়োর পালনকারীদের সাবধানতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy