Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

রোগীর হয়ে আদালতে সওয়াল চিকিৎসকেরই

মামলা চিকিৎসায় গাফিলতির। আর সেই মামলায় অভিযুক্ত শল্য চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আবেদনকারীর হয়ে সওয়াল করলেন আর এক শল্য চিকিৎসক! বৃহস্পতিবার এমনই দৃশ্য দেখা গেল বাঁকুড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে। যেখানে বাঁকুড়ার জয়পুর থানার সলদা গ্রামের বাসিন্দা তরুণকান্তি সরকারের হয়ে সওয়াল করলেন প্রবাসী শল্য চিকিৎসক কুণাল সাহা। ‘পিপল ফর বেটার ট্রিটমেন্ট’ নামে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কুণালবাবুকে আগে কখনও কোনও জেলায় গিয়ে এমন আদালতে রোগীর হয়ে সওয়াল করতে দেখা যায়নি।

আবেদনকারীর সঙ্গে কুণাল সাহা (বাঁ দিকে)। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে।—নিজস্ব চিত্র।

আবেদনকারীর সঙ্গে কুণাল সাহা (বাঁ দিকে)। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে।—নিজস্ব চিত্র।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪০
Share: Save:

মামলা চিকিৎসায় গাফিলতির। আর সেই মামলায় অভিযুক্ত শল্য চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আবেদনকারীর হয়ে সওয়াল করলেন আর এক শল্য চিকিৎসক!

বৃহস্পতিবার এমনই দৃশ্য দেখা গেল বাঁকুড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে। যেখানে বাঁকুড়ার জয়পুর থানার সলদা গ্রামের বাসিন্দা তরুণকান্তি সরকারের হয়ে সওয়াল করলেন প্রবাসী শল্য চিকিৎসক কুণাল সাহা। ‘পিপল ফর বেটার ট্রিটমেন্ট’ নামে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কুণালবাবুকে আগে কখনও কোনও জেলায় গিয়ে এমন আদালতে রোগীর হয়ে সওয়াল করতে দেখা যায়নি। কুণালবাবু বলেন, “রোগীর চিকিৎসায় গাফিলতি কী ভাবে হয়েছে, তা আর এক চিকিৎসকই ভাল বলতে পারবেন।”

প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক তরুণবাবু জানান, ২০০৯-এ মলদ্বারের যন্ত্রণা নিয়ে বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয় পালের চেম্বারে যান। ওই বছর বিষ্ণুপুরের নার্সিংহোমে তাঁর অস্ত্রোপচার করেন ওই চিকিৎসক। তরুণবাবুর অভিযোগ, “তার পরেই যন্ত্রণা আরও বাড়ে। চেন্নাইয়ে গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ফের অস্ত্রোপচার করাই। জানতে পারি, আগের ডাক্তার অস্ত্রোপচারে গোলমাল করায় সমস্যা বেড়েছে।”

২০১১-তে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর কাছে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে বাঁকুড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন তরুণবাবু। যোগাযোগ করেন কুণালবাবুর সংগঠনের সঙ্গেও। কুণালবাবুর দাবি, অভিযোগকারীর রোগে অস্ত্রোপচারের দরকারই ছিল না। যে নার্সিংহোমে ওই অস্ত্রোপচার হয়, সেখানে উপযুক্ত পরিকাঠামোও ছিল না। কুণালবাবুর কথায়, “তরুণবাবুর চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছে। তাই আমার মনে হয়েছে, নিজে চিকিৎসক হয়ে সওয়াল করলে গাফিলতির বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলে ধরতে পারব।”

’৯০-এর দশকে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা-বিভ্রাটে মারা যান প্রবাসী চিকিৎসক কুণালবাবুর স্ত্রী অনুরাধা সাহা। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অভিযুক্ত তিন চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দেন তাঁকে। সেই টাকায় নিজের সংগঠন চালান কুণালবাবু।

বাঁকুড়ার ঘটনায় মৃত্যুঞ্জয় পাল অবশ্য অভিযোগ মানেননি। বর্তমানে মেদিনীপুর মেডিক্যালের শল্য চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন, “ওষুধে রোগ সারানোর চেষ্টা করেছিলাম। তাতে কাজ না হওয়ায় অস্ত্রোপচার ছাড়া রাস্তা ছিল না” তাঁর দাবি, এই ধরনের অস্ত্রোপচারের পর অন্তত চার সপ্তাহ রোগীকে পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়। কিন্তু, ওই রোগী তিন সপ্তাহের মাথায় দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করান। তার পরই জটিলতা বাড়ে। “গাফিলতি থাকলে আগেই ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিতাম। মামলা চালাতাম না।”মন্তব্য মৃত্যুঞ্জয়ের।

এ দিন দু’তরফের সওয়াল-জবাব শোনার পরে আগামী ৮ জানুয়ারি মামলার রায়দান ধার্য ধরেছে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE