চিকিৎসক পুলক সাহার (হলুদ টি শার্ট) সঙ্গে শিবানীদেবী।
আর পাঁচটা সাদামাটা দম্পতির মতো বিয়ের পরে একটা ফুটফুটে শিশু পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন শিবাণী ও বিষ্ণুপদ দেব। দু’জনেই কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী। একাধিকবার কৃত্রিম পদ্ধতিতে গর্ভধারণ করেছিলেন শিবাণীদেবী, তবে তা সফল হয়নি। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। শেষ পর্যন্ত শিলিগুড়ির প্রসেনজিৎ রায় সহ কয়েকজন চিকিৎসককে পাশে পেয়ে রবিবার, বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ শহরের হাকিমপাড়ার একটি নার্সিংহোমে যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী শিবাণী দেবী।
তবে ৮ মাসের মাথায় ভূমিষ্ঠ হওয়ায় দুই সদ্যোজাতকেই আপাতত ‘নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে’ (নিকু) রাখা হয়েছে। অস্ত্রোপচার করে ওই যমজ সন্তানের জন্ম দেন চিকিৎসক পুলক সাহা। তিনি জানান, ছেলেটির ওজন ১ কেজি ৪০০ গ্রাম। মেয়েটির ওজন ৮৫০ গ্রাম। নিকুতে বেশ কিছু দিন রাখতে হবে। তবে আপাতত মা ও শিশুরা স্থিতিশীল।
৫০ পেরিয়ে মা হওয়ার ঘটনা ব্যতিক্রমী এবং অস্বাভাবিক হলেও, একেবারে নজিরবিহীন নয়। সারা বিশ্বে এমন বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে। তবে হাতেগোনা। মাস দু’য়েক আগে কলকাতাতে চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীরের তত্ত্বাবধানে আইভিএফ পদ্ধতিতে ৫৯ বছর বয়সে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন শুক্লা রায়। তাঁর স্বামীর বয়স ৬৮ বছর। শিলিগুড়ির ঘটনাকে স্বাগত জানিয়ে গৌতমবাবুর বক্তব্য, এক সময়ে যেটা ‘অসম্ভব’ বলে মনে করা হত, সেটা যে এখন সম্ভব হচ্ছে, তা যথেষ্ট আশাপ্রদ। সন্তানহারা বহু মা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, ‘শেষ বলে কিছু নেই।’ কিন্তু সতর্ক থাকাও দরকার। তিনি বলেন, “সংশ্লিষ্ট মহিলার অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা রয়েছে কি না, তা ভাল ভাবে খতিয়ে দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। অত বেশি বয়সে তিনি সন্তানের দায়িত্ব সামলানোর মতো মানসিক জোর রাখতে পারবেন কি না এবং তাঁদের পারিবারিক সমর্থন আছে কি না, সে সবও বিচার্য।”
যমজের মধ্যে এক শিশু।
শিবাণী দেবী ও বিষ্ণুপদবাবুকেও প্রতি পদে মেপে পা ফেলতে হয়েছে। তবে সকলের সমর্থনই পেয়েছেন তাঁরা। আদতে অসমের শিলচরের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে তাঁরা প্রায় ২২ বছর ধরে শিলিগুড়ির আশ্রমপাড়ার নজরুল সরণিতে থাকেন। বছর দেড়েক আগে পুলকবাবুর কাছে শারীরিক কিছু সমস্যার ব্যাপারে পরামর্শ চাইতে যান। তখন তাঁদের সন্তান পাওয়ার তীব্র ইচ্ছে দেখে উত্তরায়ণের বেসরকারি মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ প্রসেনজিৎ রায়ের কাছে তাঁদের পাঠান পুলকবাবু।
শুক্রবার শিবাণীদেবী নার্সিংহোমে ভর্তি হন। তাঁর রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় গর্ভধারণের ৮ মাসেই অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা। প্রসেনজিৎবাবুর কথায়, “দু’জনেরই খুব মনের জোর। তাই উচ্চ রক্ত চাপের রোগিণী হওয়া সত্ত্বেও ঝুঁকি নিতে রাজি হন। আরও জটিলতা ছিল। তা কাটানোর পরে ওঁর স্বামীর শুক্রাণুতে নিষিক্ত ভ্রুণ শিবাণী দেবীর গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়।” তিনি জানান, প্রথমে তিনটি ভ্রুণ প্রতিস্থাপিত করা হয়। পরে জটিলতার কারণে একটিকে অপসারণ করা হয়। শিবাণী দেবী বললেন, “পৃথিবীটাই অন্যরকম হয়ে গেল আমাদের। আর কোনও কষ্ট নেই।”
বিষ্ণুপদবাবুর বয়স ৫৯ বছর। তিনি বললেন, “আগামী বছর আমি অবসর নেব। হাতে অঢেল সময় থাকবে তখন। দুই ছেলেমেয়েকে তখন পুরো সময়টা দিতে পারব বলেই মনে হয়।”
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy