ইরাক কিংবা সিরিয়ায় উজিয়ে গিয়ে লড়াই করার দরকার নেই। নিজের দেশে থেকে শত্রুদের নিধন করলেই হবে। আবার সেই জন্য কোনও দল বা গোষ্ঠী গড়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী বড়সড় নাশকতা ঘটানোও জরুরি নয়। সংগঠনের আদর্শে অনুপ্রাণিত ব্যক্তিবিশেষ যদি শত্রু হিসেবে চিহ্নিত এক জনকে খতম করে, তা হলেই যথেষ্ট। আর এটা করতে শুধু একটা ছুরি দরকার।
এক দিকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা আমেরিকার নেতৃত্বাধীন জোটের বোমারু বিমানের ঘন ঘন হানার মধ্যেও ইরাকের রামাদি শহরকে কব্জা করেছে। দখল নিয়েছে সিরিয়ার ঐতিহাসিক শহর পালমাইরার। অন্য দিকে, বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা তাদের ভাবশিষ্য ও সমর্থকদের উদ্দেশে আইএস-এর বার্তা— নিজের ব্যক্তিগত সামর্থ্য ও সুবিধে অনুযায়ী কেবল এক জন শত্রুর উপরে হামলা চালাতে পারলেই জেহাদ এগিয়ে যাবে।
নানাবিধ পত্রপত্রিকা, অডিও টেপ এবং ভিডিও ক্লিপিংয়ের মাধ্যমে ও ইন্টারনেটে আইএস তাদের নেতাদের এই বার্তা যে ভাবে গোটা দুনিয়ায় প্রচার করছে, তাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক উদ্বিগ্ন।
গত ৮ মে দিল্লি থেকে পাঠানো এক বার্তায় মন্ত্রকের সহ-অধিকর্তা যশপাল সিংহ রাজ্যগুলিকে এই ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। প্রসঙ্গত, আইএস সংক্রান্ত একটি মামলায় বুধবার মুম্বইয়ে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) চার্জশিট পেশ করে জানিয়েছে, ভারতেও হামলা চালানোর ছক কষেছে ওই জঙ্গি সংগঠন। গত ডিসেম্বরে ওই জঙ্গি সংগঠনের সব চেয়ে প্রভাবশালী টুইটারে অ্যাকাউন্ট তৈরি ও চালানোর অভিযোগে বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করা হয় পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, মেহেদি মসরুর বিশ্বাস নামে এক যুবককে। তার বাড়ি কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে কৈখালিতে।
এপ্রিলে মার্কিন কনস্যুলেটের উদ্যোগে কলকাতায় এসে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক গ্যারি লাফ্রি-ও জানান, ভারতে আইএস আগামী দিনে বড় বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাদের সাম্প্রতিক বার্তায় বলেছে, আইএস যে ভাবে ব্যক্তিগত জঙ্গিপনার প্রচার করছে, তাতে স্পষ্ট, সন্ত্রাসবাদী হামলা সংক্রান্ত বিপদের মাত্রাটাই সম্পূর্ণ অন্য রকম চেহারা নিয়েছে। মন্ত্রক মেনে নিচ্ছে, গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহ করে, শারীরিক ও বৈদ্যুতিন নজরদারি চালিয়ে কিংবা চরদের কাজে লাগিয়ে এই ধরনের হামলা ঠেকানো সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘ব্যক্তি বিশেষের মনে কী আছে, সেটা কী ভাবে বোঝা সম্ভব? আর রান্নাঘরে ব্যবহার করা ধারালো ছুরি মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলে আগে থেকে খবর পাওয়াও সম্ভব নয়।’’
তবে এ রকম ব্যক্তি বিশেষের ছুটকো-ছাটকা হামলার ক্ষতির মাত্রা প্রচলিত ও পরিকল্পিত জঙ্গি হানার প্রভাবের মাত্রার চেয়ে অনেকটাই কম। তা হলে এই নিয়ে এত উদ্বেগের কারণ কী? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, এই ধরনের একটি হামলার সাফল্য সম-মনোভাবাপন্ন অন্যদের আরও বেশি করে এই ধরনের কার্যকলাপে উৎসাহ দেবে। সেটা নিশ্চয়ই উদ্বেগের।
আইবি-র এক কর্তার কথায়— ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেশ কয়েক জন যুবক ইরাক ও সিরিয়ায় গিয়ে আইএস-এর যোদ্ধা হিসেবে যোগ দিয়েছে বলে খবর। এ থেকে স্পষ্ট, ভারতে আইএস-এর প্রভাবকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
মহারাষ্ট্রের ঠাণে জেলার কল্যাণের বাসিন্দা, ২৪ বছরের যুবক আরিব মজিদ সিরিয়ায় গিয়ে আইএস-এর হয়ে কয়েক মাস যুদ্ধ করেছিল বলে গোয়েন্দারা জানতে পারেন। গত নভেম্বরে আরিব এ দেশে নামলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আরিব ও মহারাষ্ট্রের অন্য তিন যুবকের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলার চার্জশিটেই এনআইএ দাবি করেছে, শুধু ইরাক-সিরিয়া না, ভারতও আইএস-এর লক্ষ্য। আবার আরিবই প্রথম এ দেশের গোয়েন্দাদের জানান, আইএস নেতৃত্ব দেশে দেশে ব্যক্তি বিশেষের মাধ্যমে জঙ্গি হামলা চালানোর ব্যাপারে প্রচার করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy