নয়া রাজ্য গঠনের পরে দু’বারই ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বদল হয়েছে বার দশেক। কোনও দল বা জোটই টানা পাঁচ বছর সরকার চালাতে পারেনি। আজ ৮১ আসন বিশিষ্ট ঝাড়খণ্ডে পাঁচ দফা ভোটপর্বের ঘোষণার পর একটাই প্রশ্ন ঘুরছে এখানে: এ বারে কি একক ভাবে সরকার গড়তে পারবে কোনও দল?
এই প্রশ্ন ওঠার পিছনে একটা বড় কারণ, গত লোকসভা ভোটে বিজেপির জয়জয়কার। জাতপাতের রাজনীতিতে অজস্র বিভাজন এই রাজ্যে। তার মধ্যেই লোকসভার ১৪টি আসনের মধ্যে ১২টিতে জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর দল। সেই মোদী হাওয়া যে এখনও পুরোপুরি মুছে যায়নি, সেটা মানুষের সঙ্গে কথা বললেই বেশ বোঝা যায়। এই হাওয়া এবং অনিশ্চয়তা থেকে রাজ্যকে বার করে আনার প্রতিশ্রুতি সঙ্গে নিয়েই ভোট প্রচারে নামতে পারে বিজেপি।
লোকসভা ভোটের সাফল্যের পরে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি আপাতত বিধানসভা ভোটগুলিতে একলা চলোর নীতি নিয়েই এগোতে চাইছে। সেই ভাবে লড়ে হরিয়ানায় ক্ষমতা দখল করেছে দল। মহারাষ্ট্রে হয়েছে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ। ঝাড়খণ্ডেও সেই রাস্তায় হাঁটার সম্ভাবনা পনেরো আনা। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডে এসে এখানকার যুযুধান বিজেপি নেতাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটের আগে লঙ্কা ভাগ করতে বসবেন না। আগে ২৫ হাজার বুথে জিতে আসুন, তার পর মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করা হবে। রাজনীতিকরা বলছেন, অমিতের এই কথা থেকেই একলা চলার বার্তা পরিষ্কার।
উল্টো দিকে কংগ্রেসের সামনে জোট ছাড়া পথ নেই। শিবু শোরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা এবং আরজেডি-র সঙ্গে জোট করেই এখন ক্ষমতায় রয়েছে তারা। বিধানসভায় নিরঙ্কুশ হতে প্রয়োজন ৪১টি আসন। মজার বিষয় হল, এই জোটের বিধায়ক সংখ্যা ৩৭, ম্যাজিক নম্বরের থেকে চার কম। তবু বিরোধীরা একজোট হতে পারছে না বলে প্রায় দেড় বছর ক্ষমতায় রয়েছে তারা। এবং সেই বিরোধীদের মধ্যে সব থেকে বড় দলটি কিন্তু বিজেপি, যার আসন সংখ্যা ১৮।
তার উপরে লোকসভায় যে ভাবে মোদী হাওয়ায় অন্যদের ধুয়েমুছে গিয়েছে, তার পরে একা লড়াই করার কথা ভাবছেন না রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্ব।
জেএমএম নেতারা সরকারি ভাবে না হলেও ঘরোয়া আলোচনায় কিন্তু জোটের পক্ষেই রায় দিচ্ছেন। তাঁরা পাশের রাজ্য বিহারের উদাহরণ তুলে ধরছেন। সেখানে সম্প্রতি দীর্ঘদিনের ঝগড়া ভুলে নীতীশ কুমার এবং লালু প্রসাদ হাতে হাত মিলিয়ে উপনির্বাচনে বিজেপির জয়রথ থমকে দিয়েছেন। সে কথা মাথায় রেখেই ঝাড়খণ্ডেও একই পথে এগোতে চাইছে কংগ্রেস, জেএমএম। ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বে থাকা কংগ্রেস নেতা বি কে হরিপ্রসাদ সম্প্রতি এখানে এসে বলে গিয়েছেন, শুধু এই দুই দলই নয়, জোটে আরজেডি এবং জেডিইউ-ও থাকবে। যদিও নীতীশের দল এখন বিরোধী পক্ষেই বসছে। তবে পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তারা বিহারের মতো এখানেও আরজেডি, কংগ্রেসদের হাত ধরবে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন। তার থেকেও বড় প্রশ্ন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে কংগ্রেস যে ভাবে জেএমএমের উপরে চাপ তৈরি করছে, সেই স্নায়ুর লড়াইটা কত দিন ধরে চলবে? জেএমএম সূত্রের বক্তব্য, কংগ্রেস তাদের জেতা আসনগুলি চাইছে। ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিকদের অনেকেই বলছেন, কংগ্রেস আসলে জেএমএমের হাওয়া পালে লাগিয়ে বৈতরণী পার হতে চাইছে।
এই অবস্থায় মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্যে পাঁচ দফা ভোটে লড়াই কোন দিকে দাঁড়াবে, আজ থেকেই তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এক দিকে বিজেপি, অন্য দিকে বর্তমান শাসক জোট এই যদি লড়াইয়ের চেহারা দাঁড়ায়, তা হলে মানুষ কোন দিকে দাঁড়াবে? একাধিক দলের নড়বড়ে জোট, নাকি স্থায়িত্বের আশা দেখানো বিজেপির দিকে? জবাব মিলবে ২৩ ডিসেম্বর, ভোট গণনার দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy