Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ইবোবি সিংহকে পদত্যাগ করতে বললেন রাজ্যপাল

নাটকীয় মোড়ে গোয়া তো বটেই, অরুণাচল-মেঘালয়কেও দশ গোল দিল মণিপুর। ফল ঘোষণার ৩৬ ঘণ্টা পরেও ইম্ফলের দঙ্গলে ফয়সলা হল না শেষ হাসি কে হাসবে!

যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি, এনপিপি, এনপিএফ ও এলজেপি।

যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি, এনপিপি, এনপিএফ ও এলজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৭ ০০:৫৪
Share: Save:

নাটকীয় মোড়ে গোয়া তো বটেই, অরুণাচল-মেঘালয়কেও দশ গোল দিল মণিপুর। ফল ঘোষণার ৩৬ ঘণ্টা পরেও ইম্ফলের দঙ্গলে ফয়সলা হল না শেষ হাসি কে হাসবে! সকাল থেকে দুপুর, কংগ্রেস ও বিজেপি সমান তালে প্যাঁচ-পয়জারে ব্যস্ত ছিল। দু’তরফই দফায়-দফায় সরকার গড়ার ঘোষণা করেছে। সন্ধ্যায় বিজেপি ঘোষণা করে দেয় অসম-অরুণাচল দখলের পরে, মণিপুরও দখল করে ‘কংগ্রেস মুক্ত’ উত্তর-পূর্ব গড়ার পথে আরও একধাপ এগোল বিজেপির নেতৃত্বাধীন ‘নর্থ ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স’ বা নেডা। রাত সওয়া ন’টা নাগাদ ৩২ জন বিধায়কের নাম-সহ সরকার গড়ার দাবি নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বিজেপি ও জোট শরিকরা। কিন্তু রাত ১১টা নাগাদ কংগ্রেসের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ রাজভবনে ঢোকেন। সকলে যখন ভেবেছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে এসেছেন হতাশ ইবোবি, তখনই রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক সেরে রাত সাড়ে ১১টায় তিনি ঘোষণা করেন, এনপিপি নেডাকে নয় কংগ্রেসকেই সমর্থন জানাবে। তাই চতুর্থবারের জন্য মণিপুর কংগ্রেসের হাতেই থাকছে!

তবে সোমবার রাজ্যপাল নাজমা হেপতুল্লা বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি সিংহকে পদত্যাগপত্র জমা দিতে অনুরোধ করেন।

বিজেপির ‘কিং-মেকার’ হিমন্তবিশ্ব শর্মা রবিবার সন্ধ্যে সাতটায় জানিয়েছিলেন সোমবার সকালে জোগাড় হয়ে যাবে প্রয়োজনীয় বিধায়ক। কিন্তু ‘মিশন অ্যাকমপ্লিসড’ লিখে রাজভবন থেকে টুইট করলেন রাত ন’টার মধ্যেই। তৃণমূলের একমাত্র বিধায়ক টি রবীন্দ্র, জিরিবামের বাঙালি বিধায়ককে দলে তো টানলেনই, সেই সঙ্গে ভাঙিয়ে আনলেন কংগ্রেসের এক বিধায়ককেও। অ্যান্ড্রোর ওই বিধায়ক শ্যামকুমারকে কংগ্রেস সাসপেন্ড করলে এবং দলত্যাগবিরোধী আইনে তিনি বিধায়ক পদ খোয়ালে বিধানসভার সদস্যসংখ্যা দাঁড়াবে ৫৯। সেক্ষেত্রে হাতে থাকা ৩০ বিধায়কেই গড়া যাবে সরকার। এখানেই শেষ নয়, তীরে এসে তরী ডোবা কংগ্রেসকে আরও ধাক্কা দিয়ে বিজেপি জানায়, কংগ্রেসের অন্তত ১৩-১৪ জন বিধায়ক শাসক জোটে আসতে তৈরি।

রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করলেন নেডার নেতারা। ছিলেন কনরাডও।

ত্রিশঙ্কু ফলের জেরে দু’দলেরই নিশানা ছিল তৃণমূলের একমাত্র বিধায়ক টি রবীন্দ্র এবং রাজ্যের প্রথম বাংলাভাষী বিধায়ক আসাব উদ্দিন। আসাববাবুকে বিমানবন্দর থেকে কার্যত হাইজ্যাক করেন রাম মাধব। বিদায়ী কংগ্রেস মন্ত্রী আবদুল নাসেরের সঙ্গে জিরিবাম থেকে গুয়াহাটি হয়ে ইম্ফল বিমানবন্দরে এসেছিলেন আসাব। কিন্তু সেখানে অপেক্ষমান বিজেপির বিধায়ক ও সদস্যরা আসাবকে ঘিরে ফেলেন। চলে আসেন শতাধিক সিআইএসএফ জওয়ান। কংগ্রেস বিধায়কদের আসাবের সঙ্গে দেখাই করতে দেওয়া হয়নি। পরে চার্টার্ড বিমানে রাম মাধব আসাবকে নিয়ে উড়ে যান।

এই ঘটনাকে গণতন্ত্রের কলঙ্ক বলে দাবি করে কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়বীর শেরগিল বলেন, “উত্তরাখণ্ড ও অরুণাচলের মতোই মণিপুরেও ধনবল, বাহুবলের জোরে পিছন পথে সরকার দখল করতে চাইছে বিজেপি। কেন্দ্র জবাব দিক- কেন ২০০ জন সিআইএফএফ বিনা কারণে একজন মন্ত্রী ও বিধায়ককে আটক করল? কার নির্দেশে কাজ করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী?” কংগ্রেসের দাবি, যে ভাবে সিআইএসএফকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচিত বিধায়ককে চার্টার্ড বিমানে অপহরণ করা হল- সেই গোটা ঘটনার জবাব দিতে হবে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিমানমন্ত্রীকে। ঘটনা নিয়ে মামলা হোক। তদন্ত হোক জড়িত সিআইএসএফ কর্তাদের বিরুদ্ধেও।

তৃণমূলের রবীন্দ্র যে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবেন তা গত রাতেই জানান বিজেপির অন্যতম মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী টি বিশ্বজিৎ সিংহ। কিন্তু বাংলায় চূড়ান্ত বিজেপি বিরোধী দলের বিধায়ক কী ভাবে মণিপুরে বিজেপিকে সমর্থন করবেন? বিশ্বজিৎ জানান, অন্য রাজ্যের হিসেব মণিপুরে খাটে না। একমাত্র বিধায়ক হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণও খাটছে না রবীন্দ্রের উপরে।

আরও পড়ুন: এই ঐতিহাসিক ভোটে নয়া ভারতের জন্ম হয়েছে: নরেন্দ্র মোদী

রাত ৮টায় বিজেপি, এনপিপি, এনপিএফ ও এলজেপিকে নিয়ে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করে। সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব জানান, তাঁদের হাতে প্রয়োজনীয় বিধায়ক আছে। আস্থা ভোটে জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করা হবে। এনপিপির জাতীয় সভাপতি কনরাডও নেডা তথা বিজেপিকে সমর্থনের কথা জানান। রাত ৯টা নাগাদ রাজ্যপাল নাজমা হেপতুল্লার সঙ্গে দেখা করেন বিজেপি ও নেডা শরিক দলগুলির বিধায়করা। ছিলেন কনরাডও। সরকার গড়ার আনুষ্ঠানিক দাবি জানান তাঁরা। রাজভবন ঢোকার সময় খোদ হিমন্তর গাড়িতে দেখা যায় কংগ্রেস বিধায়ক শ্যামকুমারকে। প্রদেশ বিজেপি দফতর সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রধান দাবিদার, চারবারের বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী এন বীরেন সিংহ। পরের দাবিদার দু’বারের বিধায়ক টি বিশ্বজিৎ সিংহ।

রাজ্যপালের কাছে পেশ করা সেই চিঠি।

এ দিকে, ২৮ জন বিধায়ক-সহ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল কংগ্রেসও জমি ছাড়ছিল না। এদিন সি পি জোশী, অস্কার ফার্নান্ডেজদের উপস্থিতিতে ওক্রাম ইবোবি সিংহকে বিধায়কদের নেতা নির্বাচিত করে সব অ-বিজেপি দলকে সমর্থনের জন্য আহ্বান জানায় কংগ্রেস। কিন্তু তখন সাড়া মেলেনি। রাতে যখন বিজেপি জোটের সরকার গড়া নিশ্চিত। তখনই পাল্টা চাল চালেন তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে একটি চিঠি তুলে ধরে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, নেডার শরিক এনপিপি মণিপুরে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে সমর্থন করছে। তাই সহজেই ৩২ জন বিধায়ক হচ্ছে কংগ্রেসের দিকে। অবশ্য ওই চিঠিত এনপিপির সাধারণ সম্পাদক ও রাজ্য সভাপতির সই থাকলেও সভাপতি কনরাড বা চার বিধায়কের সই ছিল না। ইবোবির দাবি, একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে তাঁদেরই সরকার গড়ার সুযোগ আগে দেওয়া উচিত। আস্থা ভোটে তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে দেবেন। অতএব, যে জটিলতা শুরু হয়েছিল শনিবার ফলপ্রকাশের পরে, রবিবার মাঝরাত পেরিয়েও সেই জটিলতা বাড়ল বৈ কমল না!

নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Congress NPP Manipur Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE