আবার অসহিষ্ণুতার অভিযোগে কাঠগড়ায় নরেন্দ্র মোদী সরকার।
দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-বিক্ষোভ এবং কাশ্মীর উপত্যকার পরিস্থিতি— সাম্প্রতিক অতীতে এই তিনটি বিষয়েই মোদী সরকারকে অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। কেরলের আন্তর্জাতিক তথ্যচিত্র ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র উৎসবে এই তিনটি বিষয়ের উপর ছবির প্রদর্শনে বাদ সেধেছে কেন্দ্রের তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক। কোনও কারণ না দেখিয়েই ছাড়পত্র দিতে অস্বীকার করেছে মন্ত্রক।
জেএনইউ বা রোহিত ভেমুলা কাণ্ড যে মোদী সরকারের কাছে এখনও স্পর্শকাতর, তা এ বিষয়ে ছবি প্রদর্শনে আপত্তিতেই ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। উৎসবের উদ্যোক্তারা সাংস্কৃতিক জরুরি অবস্থার অভিযোগ তুলেছেন। কংগ্রেস মুখপাত্র সন্দীপ দীক্ষিত বলেন, ‘‘যে ভাবে এই সব ছবি নিয়ে আপত্তি তোলা হচ্ছে, তাতে স্পষ্ট বিজেপি-আরএসএস সামন্ততান্ত্রিক, জাতিবিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে চলেছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকও তাকেই সমর্থন করছে।’’ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘একটি চলচ্চিত্র উৎসবে কী ছবি দেখানো হবে, তা নিয়েও বিজেপি সরকার ভয় পাচ্ছে? তথ্য তো গণতন্ত্রের জীবন। ভাবনার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো যায় না, সত্যকে জেলে পাঠানো যায় না!’’
আরও পড়ুন: দায়িত্ব থেকে অব্যহতি চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি অ্যাটর্নি জেনারেলের
রাজনৈতিক স্তরে বিরোধীরা আক্রমণ করবেন জানাই ছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর অস্বস্তি বাড়িয়ে দেশের ৬৫ জন অবসরপ্রাপ্ত আমলাও সরব হয়েছেন মোদী জমানার অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে। কড়া সুরে লেখা একটি প্রকাশ্য চিঠিতে দেশে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা, উগ্র জাতীয়তাবাদ, আগ্রাসী মনোভাব, নজরদারি, গোরক্ষকদের তাণ্ডব, বিরুদ্ধ মনোভাবাপন্ন নাগরিক বা ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযান— সব কিছু নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, যুক্তিবাদী বিতর্ক, আলোচনা বা বিরুদ্ধ মতকে জায়গাই দেওয়া হচ্ছে না। সমস্ত সরকারি, নাগরিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে তাঁদের দাবি, এই স্বৈরতান্ত্রিক ও দমনমূলক প্রবণতা সংশোধনের চেষ্টা হোক। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে যোজনা কমিশনের প্রাক্তন সচিব এন সি সাক্সেনা থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের প্রাক্তন আইএএস জহর সরকার, অর্ধেন্দু সেনরাও রয়েছেন।
এর আগে মোদী সরকারের প্রথম পর্বেই সাহিত্যিকরা অসহিষ্ণুতার অভিযোগে পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এ বার দেশের শীর্ষ পদে থাকা সাবেক আমলারা একই অভিযোগ তুললেন। কংগ্রেসের অভিযোগ, দেশে যে গভীর অস্থিরতার মনোভাব তৈরি হয়েছে, তার জেরেই এই চিঠি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে সব থেকে বড় অস্বস্তির কারণ হল, দেশে ধর্মীয় ভেদাভেদ তৈরির প্রমাণ দিতে গিয়ে প্রাক্তন আমলারা প্রধানমন্ত্রীর উত্তরপ্রদেশের প্রচারে গিয়ে শ্মশান-কবর, রমজান-দীপাবলি নিয়ে মন্তব্য তুলে ধরেছেন। মোদী বলেছিলেন, গ্রামে কবরস্থান তৈরি হলে শ্মশানও হওয়া উচিত। রমজানে বিদ্যুৎ এলে দীপাবলিতেও আসা দরকার। বাড়িতে গোমাংস রাখার সন্দেহে মহম্মদ আখলাককে হত্যা বা যোগী-রাজত্বে উত্তরপ্রদেশে অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াডের দাপটের উদাহরণও দিয়েছেন তাঁরা। নিন্দা করেছেন জেএনইউ, হায়দরাবাদে ছাত্র-বিক্ষোভ নিয়ে সরকারের মনোভাবের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy