Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

দাউদ কোথায় জানা নেই বলে প্যাঁচে কেন্দ্র

দাউদ ইব্রাহিমকে নিয়ে নয়া চাপানউতোর এ বার পৌঁছে গেল সংসদেও। আর তাঁর অবস্থান জানা নেই বলে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ল নরেন্দ্র মোদী সরকার। দাউদ ইব্রাহিম আত্মসমর্পণ করতে চাইলেও সরকার রাজি হয়নি বলে সম্প্রতি বিতর্ক তৈরি করেন প্রাক্তন সিবিআই কর্তা নীরজ কুমার। পরে তিনি দাবি করেন, সংবাদমাধ্যম তাঁর কথার ভুল ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু তার মধ্যেই আজ সাংসদ নিত্যানন্দ রাইয়ের দাউদ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রের বক্তব্য সংক্রান্ত জলঘোলা শুরু হয়।

শারজায় দাউদ ইব্রাহিম। —ফাইল চিত্র।

শারজায় দাউদ ইব্রাহিম। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

দাউদ ইব্রাহিমকে নিয়ে নয়া চাপানউতোর এ বার পৌঁছে গেল সংসদেও। আর তাঁর অবস্থান জানা নেই বলে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ল নরেন্দ্র মোদী সরকার।

দাউদ ইব্রাহিম আত্মসমর্পণ করতে চাইলেও সরকার রাজি হয়নি বলে সম্প্রতি বিতর্ক তৈরি করেন প্রাক্তন সিবিআই কর্তা নীরজ কুমার। পরে তিনি দাবি করেন, সংবাদমাধ্যম তাঁর কথার ভুল ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু তার মধ্যেই আজ সাংসদ নিত্যানন্দ রাইয়ের দাউদ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রের বক্তব্য সংক্রান্ত জলঘোলা শুরু হয়।

কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে ভারত দাবি করে আসছে, মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত দাউদ পাকিস্তানের করাচিতে রয়েছেন। কিন্তু আজ লোকসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হরিভাই চৌধুরি জানান, ‘‘এই মুহূর্তে দাউদ কোথায় রয়েছেন তা নিয়ে সরকারের কাছে কোনও তথ্য নেই। ওই সন্ত্রাসবাদী কোথায় রয়েছেন তা জানার পরেই সংশ্লিষ্ট দেশের কাছে বন্দি প্রত্যর্পণ করার জন্য আবেদন করা হবে।’’

সরকারের ওই জবাব সামনে আসতেই শোরগোল শুরু হয়ে যায় সংসদে। কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ বলেন, ‘দাউদ নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের সরকারি অবস্থানের কোনও পার্থক্য নেই।’’ যদিও কেন্দ্রের একাংশের ব্যাখ্যা, দাউদ কোথায় রয়েছে এই প্রশ্ন উঠলেই এ যাবৎ অভিযোগের আঙুল উঠত পাকিস্তানের দিকে। ভারতের এই অবস্থানের ফলে একাধিক বার পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি-প্রক্রিয়া ভেস্তে গিয়েছে। কিন্তু আজ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া থেকে স্পষ্ট, দাউদ পর্ব পেরিয়ে এখন পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে বিশ্বাসী ভারত। তবে ওই জবাবে বিতর্ক হওয়ায় বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কোন আমলা, কার নির্দেশে ওই উত্তর দিয়েছেন, তা দেখছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

গত ডিসেম্বর মাসেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ দাবি করেছিলেন, দাউদ পাকিস্তানেই রয়েছেন। এবং পাকিস্তান যাতে তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেয় সে জন্য লাগাতার ভাবে চাপ দিচ্ছে কেন্দ্র। কিন্তু তার ছ’মাসের মধ্যে এই হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে সরকারের অন্দরেই। রাজনাথ মুখ না খুললেও, সরকারের অবস্থান নিয়ে উল্টো কথা শোনা গিয়েছে আর এক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরণ রিজিজুর গলায়। তাঁর কথায়, ‘‘এই বিষয়ে সরকারের অবস্থান একই রয়েছে। দাউদ পাকিস্তানেই রয়েছেন।’’ একই মন্ত্রকের দুই প্রতিমন্ত্রীর ভিন্ন সুরের ব্যাখ্যা দিতে দিনভর তৎপর ছিলেন বিজেপি নেতৃত্বও। দলের সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ বলেন, ‘‘মোটের উপরে দাউদ কোথায় রয়েছেন, সরকার তা জানে। কিন্তু দাউদের উপর হামলার ভয়ে তাঁর থাকার জায়গা মাঝে মধ্যেই পাক প্রশাসনের নির্দেশে পরিবর্তন করা হয়। ফলে দাউদ যে পাকিস্তানেই সব সময়ে রয়েছেন তা প্রমাণ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।’’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় আগরা বৈঠকের ঠিক আগের দিন দিল্লিতে সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ ও তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী। বৈঠকে মুশারফের কাছে দাউদকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন আডবাণী। পত্রপাঠ সেই আবেদন খারিজ করে মুশারফ জানিয়ে দেন, দাউদ পাকিস্তানে নেই। পরে গোয়েন্দা সূত্রে খবর নিয়ে আডবাণী জানতে পারেন মুশারফের ভারত সফরের ঠিক আগে পাক প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দুবাই চলে যান দাউদ।

তবে এখন দাউদের পক্ষে এ ভাবে দুবাইয়ে পালানো কার্যত অসম্ভব বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, দাউদের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস রয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি ২০০৬ সালে দাউদের বিরুদ্ধে স্পেশ্যাল নোটিস জারি করে। ফলে তার পক্ষে পাকিস্তান ছাড়া বেশ কঠিন। কিন্তু দাউদের উপরে হামলার আশঙ্কা তৈরি হলে তাঁকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বা পাক-চিন সীমান্তে ‘সেফ হাউসে’ পাঠিয়ে দেয় পাক প্রশাসন। কেন্দ্রের ব্যাখ্যা, সম্প্রতি দাউদ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় সম্ভবত তাঁকে এ ধরনের কোনও সীমান্তবর্তী এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে দিক দিয়ে বিচার করলে সংসদে ওই উত্তরটি ঠিকই। কিন্তু সংসদে জবাব যে আরও ভেবেচিন্তে দেওয়া উচিত ছিল তা মানছেন মোদী সরকারের অনেক শীর্ষ কর্তাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE