তালিকা প্রকাশ করছেন বেঙ্কাইয়া নাইড়ু। ছবি: পিটিআই।
গত কালই দিল্লি থেকে খবর এসেছিল, প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রথম হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো। সেই উৎসাহের রেশ কাটতে না কাটতেই বড়সড় ধাক্কা খেল রাজ্য। নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের ‘স্মার্ট সিটি’ প্রকল্পের যে প্রথম তালিকাটি আজ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে স্থান পায়নি রাজ্যের কোনও শহরই। কেন দেশের প্রথম কুড়িটি প্রস্তাবিত স্মার্ট সিটির মধ্যে রাজ্যের কোনও শহরই জায়গা পেল না, তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই শুরু হয়েছে চাপানউতোর। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই ঘটনায় ‘বঞ্চনা’-র মোড়ক দিতে চাইলেও রাজ্যের সরকারি স্তরে কান পাতলে কিন্তু শোনা যাচ্ছে অন্য কথা। রাজ্য সরকারি সূত্রে খবর, প্রথম বাছাইয়ে জায়গা করতে না পারার পিছনে প্রশাসনিক ব্যর্থতা থাকতেই পারে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদী দেশে একশোটি স্মার্ট সিটি তৈরি করার কথা বলেছিলেন। ক্ষমতায় এসে গত অগস্টে ৯৮টি শহরের নাম চূড়ান্ত হয়। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের নিউটাউন, বিধাননগর, হলদিয়া ও দুর্গাপুরের ভাগ্যেও শিকে ছিঁড়েছিল। সে দিনই নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেছিলেন, ধাপে ধাপে শহরগুলির উন্নয়ন হবে। বাছাই করা শহরগুলির মধ্যে পুরোদস্তুর প্রতিযোগিতা হবে। যে কুড়িটি শহরে শীর্ষে থাকবে, তারাই প্রথম বছরে স্মার্ট হওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
প্রথম তালিকায় আজ আমদাবাদ, নয়াদিল্লি, পুণে, ভুবনেশ্বর, গুয়াহাটি, চেন্নাই, ইন্দওর, কোয়েম্বত্তূর, উদয়পুরের মতো শহরগুলি জায়গা পেয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গের একটি শহরও কেন প্রথম কুড়িতে ঠাঁই পেল না?
মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ডিসেম্বরেই বেশিরভাগ রাজ্য থেকে প্রস্তাব মন্ত্রকের কাছে জমা পড়েছিল। এই প্রস্তাব পেশের জন্য কেন্দ্রের নগরোন্নয়ন মন্ত্রক রাজ্য ও সংশ্লিষ্ট পুরসভাকে সাহায্য করেছে। রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে এসেছে কেন্দ্র। ওয়ার্কশপও করা হয়েছিল। কুড়িটি দেশ থেকে ত্রিশটি বিদেশি বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে এই সব প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। স্মার্ট সিটির প্রস্তাব তৈরির জন্য নিউটাউনেও বিদেশি সংস্থা জড়িত ছিল। কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে যেমন কেন্দ্র সরকার ফি-বছর অর্থ বরাদ্দ করবে, তেমনই রাজ্যের পক্ষ থেকেও অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। আজ যে কুড়িটি রাজ্য প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে গিয়েছে, সব মিলিয়ে আগামী পাঁচ বছরে সেখানে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। পিপিপি মডেলের মাধ্যমে সম্পদ তোলার প্রস্তাবও এসেছে। শহরগুলিকে আরও স্মার্ট করার জন্য জমিও চিহ্নিত করেছে। বিশ্ব মানের পরিকাঠামো, জঞ্জাল সাফাই, নিকাশি, ট্র্যাফিক, নিরন্তর জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, ওয়াই-ফাই, পরিবেশের ক্ষতি না করে নাগরিক পরিষেবার জন্য বেশ কিছু মৌলিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রথম কুড়িটি শহর এর জন্য প্রায় ২৭ হাজার একর জমি চিহ্নিত করেছে। পশ্চিমবঙ্গ এই নিরিখে পিছিয়ে পড়েছে। অবশ্য মন্ত্রকের এক কর্তার ব্যাখ্যা, আজ পিছিয়ে পড়েছে বলে যে রাজ্যের চারটি শহর স্মার্ট হবে না, তা নয়। পরের রাউন্ডে তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
তবে রাজ্য প্রশাসনের একাংশের দাবি, ২০টি শহরের মধ্যে জায়গা পেতে যে প্রতিযোগিতা হয়, তাতে খসড়া উন্নয়ন প্রস্তাব জমা দিতে হয়েছিল সবক’টি শহরকে। সেখানেই রাজ্যের তরফে ভুলের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের জন্য একটি শহর প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রস্তাব জমা করেছিল। কিন্তু ওই প্রকল্পের ফলে কতটা আয় বাড়বে, তা প্রস্তাবিত খসড়াতে স্পষ্ট করা হয়নি। সম্পত্তি কর আদায়, ই-গভর্ন্যান্স-সহ একাধিক মাপকাঠিতেও পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত তালিকা নিয়ে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে পুরোপুরি রাজনৈতিক অভিসন্ধি থেকে এই তালিকা তৈরি হয়েছে।’’ মেয়র পারিষদ দেবাশিস জানার অভিযোগ, ‘‘সোলাপুরের মতো শহর, যেখানে হাঁটাচলার ন্যূনতম ফুটপাথ পর্যন্ত নেই, কীসের ভিত্তিতে তারা সুযোগ পেল, তা স্পষ্ট নয়।’’ দলীয় স্তরেও বঞ্চনার অভিযোগ আনতে চেয়েছে তৃণমূল। সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের প্রতি মোদী সরকারের বঞ্চনার এটি আরও একটা উদাহরণ।’’ তবে তালিকা নির্বাচনে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আজ ঘোষণার আগে আমি নিজেও দেখিনি কোন কুড়িটি শহর প্রতিযোগিতায় জিতে এসেছে। গত কাল আমার মন্ত্রকের সচিব তালিকা নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁকে ফিরিয়ে দিই। যোগ্যতার ভিত্তিতেই বাছাই হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy