অবধি অরুণাচলে আফস্পা বলবত্ করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রবল জনমতের চাপে গোটা অরুণাচলে আফস্পা বলবতের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হতে পারে বলে জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু।
গত ২৭ মার্চ কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয়, কেবল লংডিং, তিরাপ ও চাংলাং জেলার অসম সীমাবর্তী ২০ কিলোমিটার এলাকা নয়, গোটা অরুণাচলকেই আফস্পার আওতায় এনে জঙ্গি দমনে চালানো হবে কেন্দ্রীয় যৌথ বাহিনীর অভিযান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুক্তি ছিল: অসম, মণিপুর, নাগাল্যান্ডের জঙ্গি সংগঠনগুলি নিশ্চিন্ত আশ্রয় ও মায়ানমার যাতায়াতের পথ হিসাবে অরুণাচলকে ব্যবহার করলেও প্রশাসনিক নিয়মের ফাঁসে কেন্দ্রীয় বাহিনী ইচ্ছে মতো অরুণাচলের সব জেলায় ঢুকে জঙ্গিদের দমন করতে পারছে না।
এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই গোটা রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। যে বিজেপি আগে মণিপুর থেকে আফস্পা প্রত্যাহারের কথা বলত, তারাই এ বার অন্যান্য রাজ্যকে আফস্পার আওতায় আনবার চেষ্টা করায় মানবাধিকার সংগঠনগুলি ফুঁসে
ওঠে। অরুণাচলের বিভিন্ন উপজাতি ছাত্র সংগঠন, মহিলা সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন ও শাসক কংগ্রেস কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়। বিভিন্ন সংগঠন গত কয়েকদিন ধরে এক নাগাড়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। কেন্দ্রে স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। রাজ্য মন্ত্রিসভা সর্বসম্মত ভাবে আফস্পা বলবত্ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাফ জানান, কেন্দ্র তাঁদের সঙ্গে কোনও কথা না বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্যায় করেছে। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বলে কেন্দ্রকে চিঠিও দেয় রাজ্য মন্ত্রিসভা। জানায়, আগের মতোই অসমের সীমানা বরাবর ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বলবৎ থাকতে পারে আফস্পা।
এই পরিস্থিতিতে অরুণাচল সফরকারী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিজিজু জানান, ‘‘কেন্দ্র কোনও দমন মূলক নীতি চাপাতে চায়নি। বরং রাজ্য সরকারের সাহায্য নিয়েই জঙ্গিদমন করতে চেয়েছিল। কিন্তু মনে হচ্ছে কোনও ভুল বোঝাবুঝির ফলে অসন্তোষ বাড়ছে। এই
অবস্থায় রাজ্য সরকার ও অরুণাচলবাসীর মতকে সম্মান করে আগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছি।’’ তাঁর মতে, আগের নিয়মানুাযায়ী অরুণাচলের যে অংশ অসমের লাগোয়া, সেখানে ২০ কিলোমিটার ভিতর অবধি আফস্পা বলবত্ করা যেতে পারে। জঙ্গি দমন হয়ে গেলে সেটিও প্রত্যাহার করা হবে। তিনি জানান, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েই জাতীয় স্বার্থে কাজ করছে। দুই পক্ষে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান
আরও বাড়াতে হবে।’’ আফস্পা লাগু করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্রের একতরফা সিদ্ধান্ত বলেছিলেন টুকি। রিজিজু বলেন, ‘‘সম্ভবত সময় মতো কেন্দ্রের চিঠি মুখ্যমন্ত্রী পাননি। তাই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’’
এ দিকে, আফস্পা বিরোধী আন্দোলন জোরকদমে চলার সময়েই পাপুম পারে জেলার টারাসোর জুলাং গ্রামে সেনা জওয়ানদের হাতে তিন মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। রিজিজু জানান, ‘‘ঘটনার তদন্ত করার জন্য তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে।’’ রাজ্য সরকারও ঘটনাটি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এসপি গত কাল ঘটনাস্থলে যান। জেলাশাসককেও অবিলম্বে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সেনাবাহিনী অবশ্য দাবি করেছে, এই অভিযোগ মিথ্যা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy