Advertisement
E-Paper

আজ দিল্লিতে ধর্না, মমতা-রাহুল কাছাকাছি

নোট-কাণ্ডকে কেন্দ্র করে আগামিকাল নিজেদের শক্তি দেখাবে বিরোধী দলগুলি। মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাল সকালে সংসদ ভবন চত্বরে ধর্নায় বসবেন বিরোধী দলের প্রায় শ’দুয়েক সাংসদ। তার পরেই দুপুরে যন্তর মন্তরে জনসভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৯

নোট-কাণ্ডকে কেন্দ্র করে আগামিকাল নিজেদের শক্তি দেখাবে বিরোধী দলগুলি। মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাল সকালে সংসদ ভবন চত্বরে ধর্নায় বসবেন বিরোধী দলের প্রায় শ’দুয়েক সাংসদ। তার পরেই দুপুরে যন্তর মন্তরে জনসভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কেন্দ্রীয় স্তরে মমতা ও রাহুল গাঁধীর এই নতুন সমীকরণ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে কংগ্রেস ও সিপিএম নেতাদের মধ্যে প্রবল অস্বস্তি তৈরি করেছে।

গত কয়েক দিনের মতো আজও নোট-কাণ্ডের জেরে অচল হয়ে যায় সংসদ। সকালেই কংগ্রেস, তৃণমূল, এনসিপি, সমাজবাদী পার্টি, বিএসপি, ডিএমকে, জে ডি (ইউ)—সহ ১৩টি বিরোধী দলের নেতারা বৈঠকে বসে বিক্ষোভ কর্মসূচি চূড়ান্ত করেন। অরবিন্দ কেজরীবাল পঞ্জাবে প্রচারের কাজে ব্যস্ত। তিনি না থাকতে পারলেও তাঁর সাংসদেরা উপস্থিত থাকবেন ধর্নায়। তবে মমতার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে গেলেও ধর্নায় থাকছে না এনডিএ শরিক শিবসেনা। আজ সকালে শিবসেনার সাংসদেরা দেখা করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। পরে মোদীর দূত নিতিন গডকড়ী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গেও দেখা করেন। মোদী শিবসেনা সাংসদদের আশ্বাস দেন, সমবায় ও জেলা ব্যাঙ্কগুলিতে নোট বদলের বিষয়টি তিনি বিবেচনা করে দেখবেন। বিরোধী দলগুলির মধ্যে কাল অনুপস্থিত থাকবে এডিএমকে ও বিজেডি। লাগাতার আন্দোলন জারি রাখতে কাল বিকেলে বিরোধী নেতারা আলোচনায় বসবেন। বৃহষ্পতিবারও ফের বৈঠক করে রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করার দিনক্ষণ স্থির করা হবে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছিল, ভারত বন্‌ধ-এর কর্মসূচি নেওয়া হবে। কিন্তু ডিএমকে-র পক্ষ থেকে বলা হয়, এমনিতেই মানুষের দুর্গতির শেষ নেই। তার মধ্যে বন্‌ধ হলে তা হবে গোদের উপর বিষফোঁড়া। পরে স্থির হয়, বন্‌ধ না-করে মানব বন্ধনের মতো কোনও কর্মসূচি নেওয়া হবে। সকালের ধর্নায় অন্য দলগুলির পাশাপাশি বাম নেতারাও থাকবেন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজকের বৈঠকে সিপিএম নেতারা রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার প্রশ্নে আপত্তি জানান। কিন্তু আহমেদ পটেল, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা বলেন, যদি ২০০ জন সাংসদ একসঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছন, তা হলে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো বার্তা যাবে।

কে কোথায় দাঁড়িয়ে

বিরোধী শিবিরের ঐক্যে এখন চালিকাশক্তি হিসেবে উঠে এসেছেন মমতা। নোট বদলের সিদ্ধান্তে মানুষের ভোগান্তি নিয়ে একজোট হওয়ার জন্য রাহুলকে তিনি শুধু ফোনই করেননি, তাঁর দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও ’ব্রায়েনকে নির্দেশ দিয়েছেন কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতে। গুলাম নবি আজাদ, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূলের সংসদীয় দলের নেতারা। মমতার প্রস্তাব মতো কংগ্রেস প্রাথমিক ভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে রাজি না হলেও এখন বিষয়টি নিয়ে উৎসাহিত হয়েছেন রাহুল। বিরোধী শিবিরের রণনীতি স্থির করতে মমতা আজ সন্ধ্যায় দিল্লি এসে পৌঁছেছেন। অনেকেই মনে করছেন, মমতা-রাহুলের এই ঐক্য পরবর্তী পর্যায়েও কার্যকর থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস ও আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

২০১৫ সালে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে সনিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রপতিভবনে দরবার করেছিলেন তৃণমূলের সাংসদরা। সেটা ঘটেছিল পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে সিপিএম-কংগ্রেস জোটের আগে। কিন্তু এ বার জোটের পরবর্তী পর্যায়ে রাহুলের সঙ্গে মমতার সমঝোতা ঘটছে। অনেকেই মনে করছেন, লোকসভা ভোটকে নিশানা করে কেন্দ্রেবিরোধী রাজনীতিতে কংগ্রেস-তৃণমূলের ‘নতুন’ যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

গোটা বিষয়টিতে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম এবং কংগ্রেসের নেতৃত্ব। সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, কালো টাকা নিয়ে কথা বলার মতো নৈতিক অধিকার নেই মমতার। সারদা-নারদায় নাম উঠেছে তাঁর নিজের দলের। আবার মোদীর সঙ্গে তলায় তলায় আঁতাঁতেরও অভিযোগ করে আসছেন সিপিএম-কংগ্রেসের রাজ্য নেতারা। কিন্তু সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সিপিএমের সমস্যা হল, মমতার ছোঁয়া বাঁচাতে যদি তারা বিজেপি-বিরোধী জোটে না যায়, তা হলে গোটা বিরোধী মঞ্চ থেকেই দলছুট হয়ে যেতে হবে। তাই মহম্মদ সেলিম অথবা সূর্যকান্ত মিশ্ররা রাজ্য এবং দিল্লির রাজনীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। জাতীয় রাজনীতিতে মোদী-বিরোধী জোটে অংশ নিতে হবে— অথচ যেখানে মমতা ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। অন্যদিকে, রাজ্য সিপিএম নেতাদের আশঙ্কা, এটা করতে গিয়ে সিপিএম দিল্লিতে মমতার লেজুড়বৃত্তি করছে— এমন বার্তা গেলেও সমস্যা হবে। এই পরিস্থিতিতে সেলিম বলেন, ‘‘দিদিমনির অবস্থা এখন কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ! ওনার পাশে কেউ নেই, তাই যাকে পাচ্ছেন তাকেই সঙ্গে নিচ্ছেন।’’

অন্য দিকে আব্দুল মান্নান, অধীর চৌধুরীদের অস্বস্তি বেশি ছাড়া কম নয়। যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তারা লড়ছেন, তাদের সঙ্গেই যদি রাহুল হাত মেলান, তা হলে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। যদিও রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব আজ বলেছেন, নোট-কাণ্ড নিয়ে কংগ্রেসকে রাস্তায় নামার নির্দেশ দিয়েছেন রাহুল। এ নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে রাহুলের কথা হয়েছে। অধীরবাবুও বিভিন্ন জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, ‘‘কালো টাকা উদ্ধারের নামে মোদী সরকার যা করেছে, তা নিয়ে কংগ্রেস যেমন সরব হবে, তেমনই তৃণমূল নেতাদের কাছে সারদা-নারদের যে কোটি কোটি টাকা রয়েছে, সে কথাও মানুষের কাছে প্রচার করা হবে।’’

Mamata Congress Tmc Demonetization Rahul Gandhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy