Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এক ঘণ্টার মধ্যেই অমরনাথ হামলার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল জঙ্গিরা

গোয়েন্দারা জেনেছেন, খবর আসতেই গুজরাতগামী ওই বাসে হামলা চালানোর প্রশ্নে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় জঙ্গিরা। অনন্তনাগের ‘সেফ হাউসে’ তখন উপস্থিত লস্কর-ই-তইবার দুই পাকিস্তানি জঙ্গি।

টহল দিচ্ছে সেনা। ছবি: পিটিআই।

টহল দিচ্ছে সেনা। ছবি: পিটিআই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত ও সাবির ইবন ইউসুফ
নয়াদিল্লি ও শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩৬
Share: Save:

মেরেকেটে হাতে ছিল ষাট থেকে সত্তর মিনিট। তার মধ্যেই নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে নিখুঁত হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। সে হামলায় প্রাণ যায় সাত গুজরাতি তীর্থযাত্রীর।

শ্রীনগর থেকে সাড়ে চারটেতে যাত্রা করে বাসটি। গন্তব্য— জম্মু-কাটরা। বাতাঙ্গুর কাছে চাকা ফাটে বাসটির। ঘড়িতে সময় তখন প্রায় ছ’টা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, পুলিশ-পাহারাহীন গুজরাতি বাসযাত্রীরা সন্ধ্যায় এলাকায় ঘুরছে, এই খবর খুব বেশি হলে ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যায় জঙ্গিদের কাছে। চাকা ঠিক করার ফাঁকে ধাবায় খাওয়া-দাওয়া, স্থানীয় দোকানে যাত্রীদের ঢুঁ। ফের যখন বাস ছাড়ে, তখন পৌনে আটটা। তত ক্ষণে হামলার প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে জঙ্গিরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, স্থানীয় এলাকায় কোনও অস্বাভাবিক গতিবিধি দেখলেই জঙ্গিদের কাছে খবর পৌঁছে যাওয়াটাই দস্তুর। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গোয়েন্দাদের স্বীকারোক্তি, স্থানীয় লোকেদের মধ্যে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ভীষণ শক্তিশালী। সর্বত্র ইনফর্মার ছড়ানো থাকে তাদের। যে নেটওয়ার্ক পুলিশেরও নেই।

গোয়েন্দারা জেনেছেন, খবর আসতেই গুজরাতগামী ওই বাসে হামলা চালানোর প্রশ্নে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় জঙ্গিরা। অনন্তনাগের ‘সেফ হাউসে’ তখন উপস্থিত লস্কর-ই-তইবার দুই পাকিস্তানি জঙ্গি। ঠিক হয় দু’টি দলে ভাগ হয়ে হামলা চালানো হবে। নেতৃত্বে থাকবে আবু ইসমাইল ও আর এক পাক লস্কর জঙ্গি। যাদের সাহায্য করবে স্থানীয় আরও দুই লস্কর জঙ্গি। স্থানীয় সূত্র গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, রাত আটটার মধ্যেই নিজেদের নিরাপদ আস্তানা ছেড়ে বাতাঙ্গু ও খানবালের মাঝে দু’টি স্থানে ঘাঁটি গাড়ে জঙ্গিরা।

আরও পড়ুন: অমরনাথ নিয়ে চুপ চিন ও পাকিস্তান

শুরু হয় প্রতীক্ষা। লক্ষ্য, গুজরাত নম্বরপ্লেট লাগানো পর্যটক বাস। রাত ৮টা ১৭ মিনিটে বাস সামনে আসতেই চালককে লক্ষ্য করে প্রথম হামলা চালায় জঙ্গিদের প্রথম দল। বাস না থামায় ৭০ মিটার দূরে থাকা দ্বিতীয় ঘাঁটি থেকে হামলা চালায় অন্য দলটি। চালক বাস নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হওয়ায় এলাকা থেকে পালিয়ে যায় জঙ্গিরা। গুলিতে কোনও ভাবে গাড়ি থামলে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়ত বলে মনে করছে সব পক্ষই।

অথচ ওই যাত্রীরা বালতাল পর্যন্ত গিয়েছিলেন তীর্থযাত্রী হিসেবে। কনভয়ের সারিতে। ফলে যাওয়ার রাস্তা নির্বিঘ্নে কাটে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, বাসটি জম্মু থেকে কাটরা যাওয়ার সময়ে নথিভুক্ত করায় সেটি কনভয়ের সঙ্গে বালতাল পৌঁছয়। ৮ জুলাই বাসের যাত্রীরা অমরনাথ দর্শন করে স্থানীয় এলাকা ঘুরতে চলে যায়। কনভয় ছেড়ে দেয় তারা। ১০ জুলাই বিকেল সাড়ে চারটেয় শ্রীনগর থেকে জম্মুর উদ্দেশ্যে একাই যাত্রা শুরু করে বাসটি। লক্ষ্য ছিল তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে জহওর টানেল পেরিয়ে জম্মু এলাকায় ঢুকে যাওয়া। কিন্তু তার আগেই হামলার শিকার হয় বাসটি।

হামলাকারী কারা, সেই প্রশ্নেও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ নিশ্চিত ভাবে কেন্দ্রকে লস্করের নাম জানিয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ওই হামলার পিছনে রয়েছে আবু ইসমাইল। গত কয়েক বছর ধরে অনন্তনাগে সক্রিয় ইসমাইল। নতুন যুবকদের নিয়োগেও ভূমিকা ছিল তার। পুলিশ জানিয়েছে, এ রকমই দু’জন স্থানীয় জঙ্গিকে সে দিনের অপারেশনে কাজে লাগায় ইসমাইল। ঘটনার পরে সকলেই গা-ঢাকা দিয়েছে। গোটা অপারেশনে কারা কারা ছিল, তার নির্দিষ্ট কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সেই অনুযায়ী তল্লাশি অভিযানও শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE