রাজ ঠাকরে এ বার নিজেই ‘মুশকিল’-এ।
নিজের ছবির মুক্তির জন্য তাঁর দরজায় হত্যে দিতে হয়েছিল কর্ণ জোহরকে। জোহরের ‘অপরাধ’ ছিল, তাঁর ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এ পাকিস্তানের ফাওয়াদ খান অভিনয় করেছেন। মুচলেকা ও অর্থ-জরিমানা দিয়ে রেহাই পেয়েছিলেন তিনি। ‘রইস’-এর মুক্তির আগে একই ভয়ে রাজ ঠাকরের শরণাপন্ন হয়েছিলেন শাহরুখ খানও। ছবিতে তাঁর নায়িকাও যে পাকিস্তানি।
গোটা দেশ দেখে বলেছিল, বাপরে! রাজ ঠাকরের কী দাপট! মহারাষ্ট্রের পুরভোটে সেই দাপটই ফুড়ুৎ। রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার যে সব নেতারা ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের স্ত্রী-রা বৃহন্মুম্বইয়ের পুরভোটে ধরাশায়ী। ‘মুশকিল’-কে মুশকিলে ফেলার পুরস্কার স্বরূপ এঁদের মহিলা সংরক্ষিত আসনে টিকিট দিয়েছিলেন রাজ।
লাভ হয়নি। বলিউডকে বিপদে ফেলতে চেয়েছিলেন যে নেতারা, তাঁদের স্ত্রী-রা নিজেরাই বিপাকে পড়েছেন। এমএনএস নেতা শেখর গাওহানে-র স্ত্রী প্রীতি হেরেছেন ধোবি তালাও থেকে। সচিন গাঙ্গওয়ানের স্ত্রী বৈশালী ফোর্ট, গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া থেকে হেরে গিয়েছেন।
বৃহন্মুম্বই পুরসভার ২২৭টি আসনের মধ্যে রাজের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা পেয়েছে মাত্র সাতটি আসন। পাঁচ বছর আগে জেতা আসন সংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ। এগারো বছর আগে উদ্ধব ঠাকরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে রাজ নিজের আলাদা দল তৈরি করেছিলেন। অনেকেই ভেবেছিলেন, রাজ বোধহয় শিবসেনা ও বিজেপি-র সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবেন। রাজ ঠাকরের সব থেকে বড় হাতিয়ার ছিল, মরাঠা-অস্মিতা এবং মহারাষ্ট্রের ভূমিপুত্রদের হয়ে লড়াই। ‘মুম্বই শুধুই মরাঠাদের জন্য’ স্লোগান দিয়ে বিহার-উত্তরপ্রদেশের খেটে খাওয়া মানুষকে তাড়ানোর ডাক দিতে ছাড়েননি রাজ।
পুর ভোটের ফল বলছে, গরম কথা আর হাঙ্গামার রাজনীতি করে কিছুই ফায়দা করতে পারেননি রাজ। বলিউডকে মুশকিলে ফেলাটা মানুষ পছন্দ করেননি। দাদরের মতো মরাঠা-অধ্যুষিত এলাকাও হাতছাড়া হয়েছে রাজের। যে সাতটি আসনে তাঁর দল জিতেছে, তার কোনওটাই মরাঠা-অধ্যুষিত এলাকা নয়। সেখানে সব ভাষাভাষী মানুষের বাস। পাঁচ বছর আগেও যে ধনী, মরাঠিরা রাজ ঠাকরের পক্ষে ছিলেন, এ বার তাঁরা হয় শিবসেনাকে ভোট দিয়েছেন, নয়তো বিজেপিকে।
শুধু বৃহন্মুম্বই নয়, এমএনএস-এর সব থেকে বড় দুর্গ নাসিকও রাজ ঠাকরে নিজের দখলে রাখতে পারেননি। পাঁচ বছর আগের ভোটে শিবসেনা, এনসিপি, বিজেপিকে পিছনে ফেলে এই পুরসভা দখল করেছিল তাঁর এমএনএস। কিন্তু এ বার সব ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে পারেননি তিনি। বিজেপি তাঁর থেকে নাসিক ছিনিয়ে নিয়েছে।
খড়কুটোর মতো রাজের সামনে এখন একটাই আশা— বৃহন্মুম্বই পুরসভার বোর্ড গঠন করতে হলে শিবসেনা বা বিজেপি তাঁর সাহায্য চাইতে পারে। কারণ কোনও দলই একার ক্ষমতায় বোর্ড গঠনের অবস্থায় নেই। সূত্রের খবর, এনসিপি-র সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন রাজ। যাতে দুই দল মিলে ‘কিংমেকার’ হয়ে ওঠার একটা শেষ চেষ্টা করা যায়। কিন্তু তাতে দলের আসল সমস্যার সমাধান হবে, এমন স্বপ্ন দেখছেন না কেউই। এমএনএস-নেতারা মনে করছেন, দলকে এ বার পুরোপুরি রণকৌশল বদলাতে হবে। না হলে মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার অস্তিত্বই বিপন্ন হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy