Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
বেচাল করলে ভুগবে পাকিস্তান

প্রাণ বাঁচাতে শিবির ফেলে উধাও জঙ্গিরা

ভারতকে প্রত্যাঘাত করলে প্রায়শ্চিত্তও করতে হবে! ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র দু’দিন পরে মুখ খুলে পাকিস্তানকে এ ভাবেই খোলাখুলি হুঁশিয়ারি দিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। জানিয়ে দিলেন, বাড়াবাড়ি করলে তার ফল ভোগ করার জন্য তৈরি থাকতে হবে ইসলামাবাদকে।

সজাগ পাহারায়। জম্মু থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে আখনুর সেক্টরে ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণরেখায়। ছবি: এপি।

সজাগ পাহারায়। জম্মু থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে আখনুর সেক্টরে ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণরেখায়। ছবি: এপি।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৫
Share: Save:

ভারতকে প্রত্যাঘাত করলে প্রায়শ্চিত্তও করতে হবে! ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র দু’দিন পরে মুখ খুলে পাকিস্তানকে এ ভাবেই খোলাখুলি হুঁশিয়ারি দিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। জানিয়ে দিলেন, বাড়াবাড়ি করলে তার ফল ভোগ করার জন্য তৈরি থাকতে হবে ইসলামাবাদকে। তার মধ্যেই এ দিন পরমাণু অস্ত্র প্রশ্নে মার্কিন হুঁশিয়ারির সামনে পড়েছে পাকিস্তান। ঘরের মাটিতে জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে রাশিয়াও চাপ দিয়েছে এ দিন। সব মিলিয়ে জঙ্গি নিকেশে ভারতের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র পরে যত সময় গড়াচ্ছে, তত কোণঠাসা হয়ে পড়ছে পাকিস্তান।

চাপে পড়েছে পাকিস্তানের জঙ্গি নেতারাও। তাদের নির্দেশে ইতিমধ্যেই নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে নিজেদের ঘাঁটি ছেড়ে ক্রমশ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালাতে শুরু করেছে জঙ্গিরা। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই নেতাদের নির্দেশে প্রায় শ’তিনেক জঙ্গি শিবির ছেড়ে পালিয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফ্ফরাবাদ থেকে লাহৌর পর্যন্ত অন্তত শ’দেড়েক জঙ্গি শিবির রয়েছে। আর নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য লঞ্চ প্যাড। প্রশিক্ষণ শেষে ওই সব লঞ্চপ্যাডের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতে ঢোকে জঙ্গিরা। যে লঞ্চ প্যাডগুলি ভারতের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র পরেও অক্ষত ছিল, বুধবার গভীর রাতের হামলার পরে সেগুলিকে ছেড়েই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের আরও ভিতরের দিকে ঢুকে যেতে শুরু করেছে জঙ্গিরা।

সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরগুলিও। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এত দিন জঙ্গি শিবিরগুলি ছিল নিয়ন্ত্রণরেখার আশেপাশে। এখন জান-মাল বাঁচাতে সেগুলিই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। লক্ষ্য, ভারত ফের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করলে সাধারণ মানুষকে ঢাল করে বাঁচা। সূত্রের খবর, অনেক জঙ্গিকেই পাক অধিকৃত কাশ্মীর ছেড়ে পঞ্জাবের দিকে সরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দাদের ব্যাখ্যা, নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে হামলা করা তুলনায় সোজা। কিন্তু পঞ্জাবে রয়েছে আন্তর্জাতিক সীমান্ত। সেখানে সীমান্ত পেরিয়ে ভারত হামলা করবে না, এই ভরসায় আপাতত পঞ্জাবের দিকে সরানো হচ্ছে জঙ্গিদের।

ভারত অবশ্য সব রকম ভাবেই সতর্ক থাকছে। পাক হামলার আশঙ্কায় আজও পঞ্জাব সীমান্ত ও জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া এলাকায় ছিল টানটান উত্তেজনা। ওই এলাকার গ্রামগুলি থেকে বাসিন্দাদের সরানোর কাজ আজও চলেছে পুরোদমে। জারি রয়েছে লাল সতর্কতাও।

নিরাপত্তার প্রস্তুতি মাপতে আজ উধমপুরে নর্দান কম্যান্ডের সদর দফতরে যান সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ।

বুধবার রাতে যে কম্যান্ডোরা ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’ গিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। সুহাগের সফরের মধ্যেই অবশ্য গত কয়েক দিনের মতো আজও আখনুর সেক্টরে ভোর রাত থেকে গোলা-গুলি চালিয়েছে পাক সেনা। পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতও। সীমান্তে ভারতের প্রস্তুতি দেখে আজ পাকিস্তান তিন ব্রিগেড বাড়তি সেনা পাঠিয়েছে সেখানে। ফলে উভয় তরফেই উত্তেজনা কমার কোনও লক্ষণ নেই।

‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র পর থেকে এ যাবৎ মুখ না খুললেও শনিবার দেহরাদূনে একটি অনুষ্ঠানে সেনার ভূমিকার প্রশংসা করে কড়া ভাষায় পাকিস্তানকে আক্রমণ করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানের এখন অপারেশনের পরে অসাড় রুগির দশা! অ্যানাস্থেসিয়া দিলে রোগী যেমন সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারেন না যে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়ে গিয়েছে, তেমনই পাকিস্তান দু’দিন পরেও বুঝতে পারছে না যে, ওদের সঙ্গে ঠিক কী হয়েছে!’’ একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘কোনও বেচাল করলে ফের একই ফল ভোগ করতে হবে ওদের।’’

ভারতের এই হুঙ্কারের পাশাপাশিই আজ আমেরিকাও সতর্ক করেছে ইসলামাবাদকে। উরির ঘটনার পর থেকেই ইসলামাবাদ যে ভাবে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছিল, তা যে তারা ভাল ভাবে নেয়নি, তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোওয়াজা আসিফের পরমাণু অস্ত্র নিয়ে হুমকিকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উদ্বেগজনক’ অাখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, কথায় কথায় পরমাণু বোমা ব্যবহারের ধমক দেওয়া কাজের কথা নয়। মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের উপ-মুখপাত্র মার্ক টোনারের কথায়, ‘‘যে দেশগুলির হাতে পরমাণু অস্ত্র ও মিসাইল রয়েছে, তাদের থেকে সংযত আচরণই কাম্য।’’ রুশ সেনা এই মুহূর্তে পাক সেনার সঙ্গে যৌথ মহড়ায় ব্যস্ত। তার মধ্যেই রাশিয়াও এ দিন ইসলামাবাদের চিন্তা বাড়িয়ে বলেছে, ‘‘আশা করা যায়, নিজেদের জমিতে জঙ্গি দমনে কার্যকরী ব্যবস্থা নেবে পাকিস্তান।’’

রাষ্ট্রপুঞ্জও এ দিন শূন্য হাতেই ফিরিয়েছে ইসলামাবাদকে। নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি ও ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র প্রশ্নে রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ দাবি করে সরব হয়েছিল পাকিস্তান। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি আকবরউদ্দিন এ দিন বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জ তো বটেই, বিশ্বের কোনও দেশই ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এমনকী রাষ্ট্রপুঞ্জের যে কমিটি সংঘর্ষবিরতি ভাঙার বিষয়টি দেখে, তারাও নিয়ন্ত্রণরেখায় কোনও অস্থিরতা লক্ষ করেনি বলে জানিয়েছে।’’

• পাকিস্তানের পাল্টা হামলার আশঙ্কায় শনিবারও সীমান্ত এলাকায় টানটান উত্তেজনা

• পঞ্জাব সীমান্ত এবং জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের সরালো সেনা

• বাহিনীর প্রস্তুতি মাপতে উধমপুরে নর্দান কম্যান্ডের সদর দফতরে গেলেন সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ

• আশঙ্কা সীমান্তের ও-পারেও। ঘাঁটি এবং লঞ্চ প্যাড ছেড়ে জঙ্গিরা ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে বলে খবর

• মনে করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে ভারত ফের হামলা করলে সাধারণ মানুষকে ঢাল করে বাঁচাই তাদের লক্ষ্য

• ভোররাত থেকে আখনুর সেক্টরে গোলাগুলি চালাল পাক সেনা। সীমান্তে মোতায়েন করল আরও তিনটি ব্রিগেড

• ‘‘পাকিস্তানের এখন অপারেশনের পরে অসাড় রোগীর দশা।... বেচাল করলে ফের একই ফল ভুগতে হবে ওদের।’’ মনোহর পর্রীকর | প্রতিরক্ষামন্ত্রী

• জইশ প্রধান মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ করার উপরে চিনের আপত্তির মেয়াদ আরও ছ’মাস বেড়েছে। শনিবার এ কথা জানিয়েছে বেজিং। পাকিস্তানি জঙ্গি নেতা মাসুদকে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করতে আর্জি জানিয়েছিল ভারত। ‘পদ্ধতিগত বিষয়’ নিয়ে চিনের আপত্তিতে সেই আর্জি স্থগিত হয়ে যায়। সোমবার চিনা আপত্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কূটনীতিকদের মতে, এই পদক্ষেপ করে চিন ফের বুঝিয়ে দিল তারা পাকিস্তানের পাশেই রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pakistan terror Attack Manohar parrikar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE