লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে তুলে ধরায় কংগ্রেস তখন তাচ্ছিল্য করত। রাহুল গাঁধীর লড়াইটা তবে নেহাতই একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে! সময়ের ফেরে এ বার রাহুলের কাছেই প্রস্তাব এল, তিনিই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হোন উত্তরপ্রদেশে।
এলেবেলে কেউ নন। প্রস্তাবটা দিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। লোকসভা ভোটে মোদীর, বিহার ভোটে নীতীশ কুমারের সাফল্যের অন্যতম কারিগর। তাঁকেই এ বার উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণের ভার দিয়েছেন রাহুল। উত্তরপ্রদেশ জুড়ে সমীক্ষা চালিয়ে প্রশান্তর প্রস্তাব, হয় রাহুল, নয়তো প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হোন। এমন ছক ভাঙা বৈপ্লবিক প্রস্তাব কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব মেনে নেবেন, এমন সম্ভাবনা প্রায় নেই। তার বদলে প্রশান্তর তৃতীয় প্রস্তাবটিই মেনে নিতে চাইছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। গাঁধী ভাইবোনের কেউই রাজি না হলে কোনও ব্রাহ্মণ নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা।
রাহুলকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করতে বাধাটা কোথায় কংগ্রেসের? দলের নেতাদের মতে, এতে রাহুলের মান যাবে। কারণ সেটা হবে পদাবনতি! গত বারের মতো আগামী ভোটেও দলের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার তিনিই। তার আগে এখন একটি রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে নামার অর্থ রাহুলের মর্যাদাহানি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, ২০১২-তে রাহুল নিজেই উত্তরপ্রদেশের ভোটে নেতৃত্ব দিতে চেয়েছিলেন। তখন সনিয়া গাঁধী রাজি হননি। সে বারে হারের মুখ দেখার পরেও রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনা রাহুল জানিয়েছিলেন, তিনিই চেয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবেই এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে। কিন্তু জাতীয় স্তরের বর্ষিয়ান নেতারাই বারণ করেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, বছর দুই পরেই লোকসভা ভোট। তার আগে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার যদি কোনও রাজ্যে লড়াইয়ে নেমে হেরে যান, তাতে কংগ্রেসের বেশি ক্ষতি হবে। সে সময়েও রাহুলের যুক্তি ছিল, রাজনীতিতে এগোতে হলে ঝুঁকি নিতেই হবে। কিন্তু সে ঝুঁকি নিতে চাননি সনিয়াও। ছেলেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদের দাবিদার হিসেবেই তুলে রাখতে চেয়েছিলেন। এ বারও তাঁর একই অবস্থান। প্রিয়ঙ্কাও এই প্রস্তাবে রাজি নন। কারণ, সনিয়া-রাহুলের হয়ে প্রচারের বাইরে তাঁর সঙ্গে প্রকাশ্য রাজনীতির সম্পর্ক নেই।
কী চাইছেন রাহুল নিজে?
তা স্পষ্ট নয় এখনও। লোকসভা ভোটের আগেই পাছে হারের মুখ দেখেন, সে জন্য দল তাঁকে উত্তরপ্রদেশে ঝাঁপাতে দেয়নি গত বার। সেই লোকসভা ভোটে তাঁর নেতৃত্বে দল তলানিতে নেমে এসেছে। উত্তরপ্রদেশের এ বারের ভোটেও কি মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হওয়ার প্রশ্নে ফের বড় হয়ে উঠবে আগামী লোকসভা ভোটের প্রসঙ্গ? এই প্রশ্নে কংগ্রেসের কিছু নেতা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, গত লোকসভা ভোটে দলের ভরাডুবির পরে উত্তরপ্রদেশে হেরে গেলে রাহুলের গায়ে ‘ফ্লপ’ তকমাটা এমন ভাবে সেঁটে বসবে যে ঘুরে দাঁড়ানোটাই মুশকিল হবে। রাহুল বা প্রিয়ঙ্কা ব্যর্থ প্রমাণিত হয়ে গেলে, এই মুহর্তে গাঁধী পরিবারে আর কেউ নেই সেই জায়গা নেওয়ার।
প্রশান্তও সেটা বোঝেন না, তা নয়। তবে তিনিই বা কেন দলের একমাত্র তুরুপের তাসটিই খেলতে বলছেন উত্তরপ্রদেশে! তাঁর বক্তব্য, তিন দশক ক্ষমতার বাইরে থাকায় রাজ্যে নেতৃত্বের সঙ্কট তৈরি হয়েছে দলে। ঘুরে দাঁড়াতে তাই বড় তাসটিই তাঁর সেরা বাজি। প্রশান্তর যুক্তি উড়িয়ে দিতে পারছেন না কংগ্রেসের নেতারা। তাঁরাও মানছেন, রাহুল মুখ হলে হয়তো দলের ফল কিছুটা হলেও ভাল হতো। কিন্তু রাহুলের লাভ হতো কি না, সেটাই হল প্রশ্ন।
সে ক্ষেত্রে প্রশান্তর প্রস্তাব, দলের মুখ করা হোক কোনও ব্রাহ্মণ নেতাকে। কারণ, রামমন্দির, মণ্ডল কমিশন রাজনীতির জেরে দল ক্রমেই হয়েছে রাজ্যে। মুলায়ম, মায়াবতীর পাশাপাশি শক্তি বেড়েছে বিজেপির। কংগ্রেসের হাল ফেরাতে তাই রাজ্যের ১০-১২% ব্রাহ্মণের মন জয় করতে হবে। অতীতে কংগ্রেসের পাশে থাকলেও পরে যাঁরা ভরসা রেখেছেন বিজেপিতে। ১৯ মে পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল প্রকাশের পর উত্তরপ্রদেশ সাংগঠনিক রদবদল হবে দলে। প্রশান্তর তৃতীয় প্রস্তাব মেনে তখনই কোনও ব্রাহ্মণ নেতাকে দলের মুখ হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে।
অবশ্য যদি না রাহুল এ বার ঝুঁকির পথ নেন দলের আপত্তি উড়িয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy