Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
কাশ্মীর-গোরক্ষা-রোহিঙ্গায় অনড়

সঙ্ঘেই আছে সঙ্ঘ, বুঝিয়ে দিলেন মোহন

মোদী জমানায় গোরক্ষক বাহিনীর হাতে উত্তরপ্রদেশের মহম্মদ আখলাক থেকে হরিয়ানার পেহলু খানের মতো সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যের পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ। ভাগবত এ দিন পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশে গোরক্ষকদেরও হত্যা হয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২১
Share: Save:

বিজয়াদশমীর বক্তৃতায় বাংলা-কেরলে জেহাদি শক্তির বাড়বড়ন্ত নিয়ে সরব হওয়ার পাশাপাশি গোরক্ষা থেকে কাশ্মীর, রোহিঙ্গা থেকে আর্থিক নীতির মতো একগুচ্ছ স্পর্শকাতর বিষয়ে আজ নিজেদের অনড় অবস্থানের কথা ঘোষণা করেছেন সরসঙঘচালক মোহন ভাগবত। এবং কিছু ক্ষেত্রে করেছেন বিতর্কিত মন্তব্যও। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের দাবি যার অন্যতম।

কাশ্মীর দাওয়াই

সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা এবং ৩৫ (এ) অনুচ্ছেদে রাজ্যের স্থায়ী নাগরিক ও তাদের বিশেষ সুবিধার কথা বলা হয়েছে। ভাগবতের যুক্তি, কাশ্মীরের ওই বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের আইন করা উচিত। তাতেই জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ বাকি ভারতের সঙ্গে পুরোপুরি মিশে যেতে পারবেন। তাঁর কথায়, ‘‘১৯৪৭-এ পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে চলে আসা মানুষের নাগরিকত্বের সমস্যা যেমন রয়েছে, তেমনই নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে ঘরছাড়া মানুষের সমস্যাও মেটেনি।’’ সংবিধান সংশোধনই এই সব সমস্যা মেটানোর দাওয়াই বলে দাবি ভাগবতের।

আরও পড়ুন: ভাগবতের তোপে বাংলা-কেরল

সগর্বে গোরক্ষা

গোরক্ষার নামে হিংসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও ভাগবত এ দিন বলেছেন, ‘‘সংবিধানেই গোরক্ষার বিধান রয়েছে। গোরক্ষকদের তাই কোনও সরকারকে বা সুপ্রিম কোর্টকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাঁদের নিজেদের কাজ করতে হবে।’’

মোদী জমানায় গোরক্ষক বাহিনীর হাতে উত্তরপ্রদেশের মহম্মদ আখলাক থেকে হরিয়ানার পেহলু খানের মতো সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যের পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ। ভাগবত এ দিন পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশে গোরক্ষকদেরও হত্যা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে শুধু বজরং দলের কর্মী নন, মুসলিমও রয়েছেন। গোরক্ষাকে তাই ধর্ম বা হিংসার সঙ্গে জুড়ে দেখা উচিত নয়। তাঁর মতে, গরুকে রক্ষার জন্য নজরদারিকে গালিগালাজের মতো করে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ভাবে গোরক্ষকদের বদনাম করা ঠিক নয়। এই সূত্রে নাম না করে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকা দিয়ে গরু-পাচারেরও সমালোচনা করেছেন ভাগবত।

রোহিঙ্গায় একসুর

মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের ভারতে আশ্রয় দেওয়ার বিরুদ্ধেও স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন ভাগবত। তাঁর বক্তব্য, ভারত এখনও বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা নিয়েই জড়িয়ে রয়েছে। এর উপরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলে দেশের লোকেররুটি-রুজির উপরে চাপ বাড়বে। শুধু তা-ই নয় দেশের নিরাপত্তার উপরেও সঙ্কট তৈরি হতে পারে। মানবতার খাতিরে নিজের দেশের মানুষকে বিপদে ফেলা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।

ভাগবতের বরং পাল্টা প্রশ্ন, রোহিঙ্গারা কেন ভারতে এসেছে? কেন ওরা মায়ানমারে থাকতে পারল না? এর জবাবও নিজেই দিয়েছেন সরসঙ্ঘচালক। তাঁর বক্তব্য, বিচ্ছিন্নতাবাদী, হিংসাত্মক ও অপরাধমূলক কাজেকর্মের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সম্পর্ক রয়েছে। জেহাদি শক্তিগুলির সঙ্গে এদের যোগ মিলেছে। মায়ানমার এদের সম্পর্কে কড়া মনোভাব নিয়েছে সেই কারণেই। এর আগে মোদী সরকারও সুপ্রিম কোর্টে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জেহাদিদের যোগাযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে। ভাগবত আজ সেই অবস্থানকেই একশো ভাগ সমর্থ করলেন।

বাহবা ডোকলামে

ডোকলাম নিয়ে মোদী সরকারের পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন সঙ্ঘ-প্রধান। বলেছেন, ‘‘সাহসিকতা ও প্রত্যয়ের সঙ্গে, সম্মান বিসর্জন না দিয়ে আমরা ডোকলামে দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছি।’’

দেশি অর্থনীতি

দেশের আর্থিক নীতি নির্ধারণের প্রশ্নে সরসঙ্ঘচালকের পরামর্শ, এই দেশের হিসেব মতো নিজস্ব নীতিতে কাজ করতে হবে। সকলকে নিয়ে চলতে হবে। আরএসএস-এর বিভিন্ন সংগঠন বরাবরই নীতি আয়োগের কাজকর্মের সমালোচনা করে এসেছে। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করে বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে এসে এ দেশের আর্থিক উপদেষ্টার ভার পাওয়া অর্থনীতিবিদদের সম্পর্কেও আরএসএস নেতিবাচক মনোভাবই নিয়েছে। অথচ নীতি আয়োগের সদস্য বিবেক দেবরায়ের নেতৃত্বেই প্রধানমন্ত্রীর নতুন আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ তৈরি হয়েছে।

ভাগবত কিন্তু সঙ্ঘের আগের সুরই ধরে রেখেছেন। তাঁর কথায় ‘‘অন্য দেশের বস্তাপচা নীতি অনুসরণের প্রয়োজন নেই। আর্থিক উপদেষ্টা, নীতি আয়োগকে পুরনো অর্থনীতিবাদ থেকে বেরিয়ে বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী সমাধান বাতলাতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বেশি জোর দিতে হবে। জিডিপি ত্রুটিপূর্ণ মানদণ্ড। বড়লোক আরও বড়লোক হবে, এটা কোনও উন্নয়ন নয়।’’

সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ তাত্ত্বিক রাকেশ সিনহার ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের নীতি নির্ধারকদের জন্য ভাগবতজির বার্তা স্পষ্ট। তা হল, অর্থনীতি ভাল অবস্থাতেই রয়েছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জ হলো, এটিকে আরও সর্বব্যাপী করা। চাষি, শ্রমিক, ছোট ব্যবসায়ীদের সুরাহা দেওয়া।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

মোহন ভাগবত Mohan Bhagwat RSS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE